১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি ডায়েরির গল্প চারাগল্প

-

দু’চোখে স্বপ্ন আরিনার। ছড়া লিখবে, কবিতা লিখবে, গল্প লিখবে। ধীরে ধীরে একদিন বড় হয়ে লেখিকা হবে। সে এখনো অনেক ছোট। সবে ক্লাস সেভেনে পড়ে। কিন্তু ভাবনাগুলো অনেকটা বড় মানুষের মতো। এই ছড়া, কবিতা আর গল্প লেখার জন্য তার একটা ডায়েরি দরকার। সে তার ছোট মামাকে দেখেছে ডায়েরি লিখতে। মামা কী সুন্দর করে ডায়েরিতে কত কিছু লিখে রাখেন! লেখাগুলো আয়নার মতো ঝকঝকে সুন্দর। কারণ মামা ডায়েরিতে খুব সুন্দর করে যতেœর সাথে লিখেন। আবার আরিনা তার পাশের ঘরের এক ফুফুকে দেখেছে, যে কিনা ডায়েরিতে খুব সুন্দর করে ফুল এঁকে রাখতেন। এসব দেখে দেখে আরিনার মনে হলো, তার একটা ডায়েরি দরকার। আর সেই ডায়েরিতে সে ছড়া, কবিতা আর গল্প লিখবে। তার স্বপ্ন পূরণ হয় না। কারণ, সে সুন্দর একটা ডায়েরি কোথায় পাবে? কে তাকে একটা সুন্দর ডায়েরি দেবে? এসব ভেবে ভেবে আরিনা সুন্দর একটি ডায়েরির নকশা তার মনের গহিন রাজ্যে এঁকে রাখে। আর মনে মনে ভাবে, তাকে যদি কেউ সুন্দর একটা ডায়েরি উপহার হিসেবে দিত! রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আরিনা ডায়েরির স্বপ্ন আঁকে আর সকালে ঘুম থেকে উঠে হতাশ হয়।
আরিনা আমার ছোট মেয়ে। আচমকা সেদিন সকালে আরিনা আমার কাছে এসে জানতে চাইল, ‘আব্বু তুমি আমার জন্মদিনে কী দেবে?’ আমি চোখের চশমা সরিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম, ‘তুমি কী চাও?’
-‘ডায়েরি চাই। একটি ডায়েরি চাই!’ তার কথা শুনে আমি অবাক হলাম এই যুগে ডায়েরি চাওয়া একটা অবাক করা বিষয়।
এ মাসের ৩০ তারিখ আরিনার জন্মদিন। ঘরের এক মাত্র মেয়েশিশু হওয়ায় সবাই আরিনার খোঁজখবর রাখে। জন্মদিন আসতে এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। কিন্তু এরই মাঝে আরিনার মামা, খালা, চাচা, ফুফু সবাই আরিনার কাছে জানতে চাইলোÑ জন্মদিনে সে উপহার হিসেবে কী চায়? কেউ কেউ ফোন করেও জানতে চাইলো। আরিনা কাউকে কিছু বলে না। চুপচাপ থাকে। তার মনে পড়ে যায় আগের জন্মদিনের কথা। কত সুন্দর সুন্দর খেলনা আর জামায় ঘর ভরে গিয়েছিল! এবার যদি সে একটা ডায়েরি পেত, খুব ভালো লাগত। কিন্তু তাকে ডায়েরি কে দেবে? সবাই খেলনা আর জামাকাপড় নিয়ে আসবে। এতে তার মনের আশা আর পূরণ হবে না। অনেক ভাবনার পর আরিনা সিদ্ধান্ত নিলো তার মনের কথা সে তার আম্মুকে জানাবে। রাতে মায়ের সাথে শুতে গিয়ে আরিনা মায়ের কাছে জানতে চায়, ‘আচ্ছা আম্মু তুমি আমাকে জন্মদিনে কী উপহার দেবে?’
‘আমি এবার তোমাকে একটা লাল টুকটুকে জামা দেবো ভেবেছি’ মায়ের উত্তর শুনে আরিনাকে খুশি দেখাল না। সে আবার মাকে বলল, ‘আচ্ছা আম্মু আমি যা চাই তা দেবে?’ শুনে আরিনার মা বললেন, ‘বলো মামণি তোমার কী চাই? মনের কথা লুকিয়ে রাখতে নেই। এতে কষ্ট বেড়ে যায়।’
মায়ের কথায় আরিনা তার মনের কথা প্রকাশ করে দিলো। শুনে আরিনার মা শারমিন বেগম মুচকি হাসি দিলেন।
অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত দিন এলো। জন্মদিনের সন্ধ্যায় আরিনাদের বাড়ি মেহমানে মুখরিত হয়ে গেল। আরিনা খুব সুন্দর করে সেজেছে। মামা আর খালারাও এসে পড়েছেন। কিন্তু সবার হাতে উপহারের প্যাকেট ছিল ছোট আর এক রকম দেখতে। সবাই আরিনার সামনে এসে উপহার দিতে লাগল। উপহারের প্যাকেট খুলে আরিনা শুধুই অবাক হতে লাগল। সবার উপহারেই শুধু ডায়েরি আর ডায়েরি! সে তাজ্জব হয়ে গেল। এটা কী করে সম্ভব? সবাই তার মনের কথা জানল কী করে? সে তার মায়ের কাছে দৌড়ে ছুটে গেল। আরিনার মা আরিনাকে অবাক হতে দেখে বললেন, ‘আমি সবাইকে বলেছি জন্মদিনের উপহার যেন শুধু ডায়েরি নিয়ে আসে।’ আরিনা খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। এত রঙ-বেরঙের ডায়েরি সে কী করবে? লিখে শেষ করতে পারবে তো?
পূর্ব শিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement