১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্মাননা দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়

-

২০০২ থেকে ২০০৮ ব্যক্তিগত জীবনে অদেখা ঝড়। মনে হলো নদীর মাঝে পড়ে আছি, কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। নিষ্ঠুর পরিকল্পনার কথা ভাবছি, সাথে সুন্দর একটা পথ খুঁজছি; কিন্তু সেটা কী তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। একদিন মেয়ের স্কুল থেকে ফেরার পথে পত্রিকার দোকান থেকে পড়ার জন্য কিছু ম্যাগাজিন নিয়ে আসি। পড়তে থাকি, কিছু কিছু লেখার সাথে লেখকদের মোবাইল নাম্বার পাই। তাদের সাথে কথা বলে জিজ্ঞেস করি, ‘লিখলেই কি পত্রিকায় ছাপা হয়?’ তারা বলেন, ‘পছন্দ হলে ছাপায়।’ আমি শুরু করলাম পত্রিকা কিনে মন দিয়ে পড়া। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করি এবং চার পাশের সমস্যা নিয়ে পত্রিকার চিঠিপত্রের কলামে ছোট ছোট লেখা পাঠাতে শুরু করি। এভাবেই লেখালেখির শুরু।
প্রায়ই বলি, জীবনে তিনটি ‘স’কে (স্বামী, সংসার, সন্তান) প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাচ্ছি। ভালো কাজ করে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজেছি। পেয়েছিও। ওই তিনটি ‘স’কেই প্রথম দায়িত্ব মনে করে তারপর আমার লেখালেখি। লাগাতার তিন ‘স’-এর ব্যস্ততার জন্য লিখতে না পারলে অস্থিরতা বেড়ে যায়। অনেকেই রাতে লেখালেখি করে কিন্তু আমি সে সময় পাই না, পরিবেশও নেই। সংসারের কাজ সেরে সময় পেলেই পড়ালেখা করতে বসি। মজার ব্যাপার, রাতে ঘুমাতে গেলেই গল্পের থিম মাথায় আসে। সুন্দর করে গল্পও সাজাই। কিন্তু দিনে গল্পের সাথে সাথে গল্পের নামও ভুলে যাই। তখন মন খারাপ হয়।
আমার প্রিয় ব্যক্তি মা। আমিও মেয়েদের সাথে খুবই বন্ধুর মতো মিশতে চেষ্টা করি। আমরা অনেক গল্প করি, হাসাহাসি করি। তিনজনের একজন অনেক সময় বাসার বাইরে থাকলে অনেক গল্প জমা হয়ে যায়। শুধু গল্প নয়, সময়কে এনজয় করি। মেয়েরা পড়ার খাতায় অবচেতন মনে গল্প লেখে। আমি সেগুলো কম্পোজ করে পত্রিকায় পাঠাতাম। ওরা পত্রিকায় দেখে আমায় বকা দিত। বলত, ‘তোমার জন্য কিছুই লুকিয়ে রাখতে পারি না।’ এভাবেই ওদের দু’জনের কিছু গল্প পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এমনও দেখা গেছে, শিশুতোষ পাতাটি আমাদের দখলে, পরপর তিন-চার সাপ্তাহ আমাদের গল্পই প্রকাশ পাচ্ছে। গল্পের পাশাপাশি ওরা সমসাময়িক সমস্যা নিয়েও লিখত। সমসাময়িক লেখা লিখে ‘সাপ্তাহিক’ থেকে আমরা মা-মেয়ে তিনজনই পুরস্কার হিসেবে বই পেয়েছি। যখন তিনজনের প্রকাশিত অনেক গল্প জমা হয়, ভাবতে থাকি কী করব। শুনতে পাই বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক দীপু মাহমুদ তার দুই ছেলেকে নিয়ে বই বের করেছেন। আমার মাথায় সেই চিন্তা আসে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মা-মেয়ের এমন বই হয়নি বাংলাদেশে। তাই মা-মেয়ের যৌথ বই ২০১৬ সালে ‘মেঘনার মিষ্টি স্বপ্ন’ প্রকাশ করি।
আসলে সাহিত্য হলো সাধনার বিষয়। আমি প্রায়ই বলি, ‘লেখাপড়া করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়, লেখক হওয়া যায় না। লেখক হতে হলে ভেতর থেকে আসতে হয়।’ আমরা যতই বলি নারীর অগ্রযাত্রায় উন্নতি হয়েছে। হয়েছে যেমন ঠিক তেমনি এটাও ঠিক আমাদের পরিবারগুলো এখনো পুরুষতান্ত্রিক। এখানে পুরুষের আধিপত্যই অনেক। আমাদের সাহিত্য জগতে যে কয়েকজন নারীর আধিপত্য আছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই পরিবারের সহযোগিতা আর নিজের চেষ্টায় এগিয়ে আসতে পেরেছে। কারো সহযোগিতা না থাকলেও বাধা ছিল না। পুরুষ এগিয়ে যায় বাধা ছাড়া, বরং অনেক ক্ষেত্রেই নারীর (মা বা স্ত্রী) সহযোগিতা পায়। কিন্তু নারীকে এগিয়ে যেতে হয় বাধা অতিক্রম করে। সেই ছোটবেলার তেলমাখা কলাগাছ আর বানরের অঙ্কের মতো। আরেকটা বিষয় হলো, এখনো অনেক পুরুষ নিজের স্ত্রীর সাফল্য সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। (ব্যক্তিগতভাবে আমার মতামত) সাহিত্য সাধনা হলো মুক্ত বিষয়, মুক্তিই যদি না থাকে, নারীরা সাধনা করবেন কী করে।
লেখালেখি করে লেখার সম্মানী পেয়েছি কয়েকটি পত্রিকা থেকে। সম্মানী পেতে কার না ভালো লাগে। ২০১৯ সালে লেখার সম্মানীর পাশাপাশি সম্মাননা পেয়েছি, পেয়ে মনে হলো দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। ১৯ জুলাই ২০১৯ ‘দেনিক বাঙ্গালীর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮-১৯’ পাই ‘গল্পের আয়নায় মানুষের মুখ’ গল্পের বইয়ের জন্য। সম্মাননা হাতে তুলে দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, কচিপাতা ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্মাননা পাই। সম্মাননা হাতে তুলে দেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। ১৫ অক্টোবর আমার ঠিকানায় একটা খাম আসে। পড়ে জানতে পারি, সাজ প্রকাশন পুস্তক প্রকাশনার পাশাপাশি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত জগৎকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও আধুনিক কবিতার অগ্রপথিক ও রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, ছড়া, কবিতা পাঠ ও ‘কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিপদক ২০১৯’ প্রদানের আয়োজন করেছেন। ২২ অক্টোবর বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি কনফারেন্স লাউঞ্জে সাজ প্রকাশনের প্রকাশক শেখ সাইদুর রহমান সাইদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর দেশের ২২ জন গুণী ব্যক্তিকে ‘কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পদক ২০১৯’ প্রদান করা হবে। কথাসাহিত্যে সম্মাননা দিচ্ছেন আমাকে। মেয়েদের সাথে আনন্দ শেয়ার করি। অতঃপর বড় মেয়েকে নিয়ে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি কনফারেন্স লাউঞ্জে। এই প্রথম প্রেস ক্লাবে আসা আমার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো: নুরুল ইসলাম সুজন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য, ক্রীড়া সংগঠক রেহানা পারভীন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: ওবায়দুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ আলী কামাল ও অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান কবি গোলাম কাদের। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি আরিফ নজরুল।

 


আরো সংবাদ



premium cement