২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাজের বেটি রহিমা

চারাগল্প
-


স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজে বিকেল ৪টায়। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সোজা বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ির নাম খানবাড়ি। এই বাড়িতে চাইলেই যে কেউ ঢুকতে পারে না। খানবাড়ির এটি একটি পুরনো ঐতিহ্য। তাই খানবাড়ি ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। স্কুল থেকে প্রতিদিন সোজা খানবাড়িতে আমার যাতায়াতের দৃশ্য শুভর চোখে পড়েছে। সেদিন ক্লাসে শুভ বলল, ‘তুই খানবাড়ির ছেলে! জানতাম না।’ আমি হো হো করে হেসে বললাম, ‘নারে, আমি খানবাড়ির ছেলে নই। হা হা হা।’ শুভ বলল, ‘হাসিস না। খানবাড়ির ছেলে হয়েও তোর কী সাধারণ চলাফেরা। তোদের তো ঘরে ঢাললে বাইরে পড়ার দশা। তোর জামাকাপড় এত সাধারণ কেন?’ শুভকে বলি, ‘তোর ভুল ধারণা। আমি খানবাড়ির ছেলে হবো কেন?’ শুভ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ঠাট্টা করবি না আর। শুনেছি খানবাড়ির পরিবেশ নাকি রাজা-বাদশাহদের বাড়ির মতো। আমাকে একদিন তোদের বাড়ি নিবি?’ আমি হাসি চেপে রেখে বলি, ‘আচ্ছা নেবো।’
সেই থেকে শুভ আমার সাথে ভাব জমাতে শুরু করে। আমি ক্লাসে দেরি করে এলে বেঞ্চে আমার জন্য জায়গা রাখে। বাড়ি থেকে প্রায়ই ফলফলাদি নিয়ে আসে আমার জন্য। খানবাড়ি নিয়ে ওর এত কৌতূহল। অথচ ওরাও লাখপতি। ইউরোপে ওর বাপ-চাচাদের ব্যবসায়।
২.
স্কুল ছুটির পর আমি খানবাড়ির সদর দরজার বিশাল গেট পার হয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে শুভ ডাকল, ‘শোন, আজ আমাকে তোদের বাড়ি নিবি?’ আমি হেসে বলি, ‘আরে পাগল, এটা সত্যি আমাদের বাড়ি নয়।’ শুভ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘সব সময় তোর এই ফাজলামো ভালো লাগে না। থাক, আমি চলে যাচ্ছি।’ শুভকে ডেকে বললাম, ‘আচ্ছা আয়। দেখে যা খানবাড়ি।’
গেট অতিক্রম করে আমি আর শুভ হাঁটছি। বিকেলের রোদ এসে খানবাড়ির সদর দরজায় পড়েছে। আমরা যতই ভেতরের দিকে যাচ্ছি, শুভ ততই অবাক। বিশাল কাচারি ঘর, বৈঠকখানা, শান বাঁধানো ঘাট, গরুর বিশাল গোয়াল, মোগলীয় নমুনার সমস্ত দালানের ধ্বংসাবশেষ দেখে শুভর চোখে নেশা ধরে গেল। গলায় বিস্ময়তা এনে বলল, ‘ওরে আল্লাহ, তুই এই বাড়ির ছেলে; ভাবাই যায় না। এত কম দামের শার্ট সব সময় পরিস। জুতাটাও ছেঁড়া।’ শুভর কথা শুনে হেসে বলি, ‘আমি যে এই বাড়ির কেউ নই, সেটা আজ টের পাবি।’ শুভ আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘আবারো তামাশা! মারব একটা।’
কলপাড়ে মা থালাবাসন মাজছেন একমনে। খানবাড়ির সব কাজকর্ম মা আমার একাই সামলান। মাকে দেখিয়ে শুভকে বললাম, ‘ওই দেখ, আমার মা। রোজ থালাবাসন মাজতে হয় তাকে।’ শুভ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা উনার নাম কি রহিমা?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, উনি আমার মা। কিভাবে মায়ের নাম জানিস?’ শুভ চোখ কপালে তুলে বলল, ‘আরে, উনি তো কাজের বেটি রহিমা। আগে আমার চাচাদের ঘরে কাজ করতেন।’ আমি বললাম, ‘এখন এই বাড়িতে কাজ করেন মা। সকালে এসে সারা দিন সব কাজে ডোবেন। রোজ বিকেলে আমি স্কুল থেকে এখানে আসি, পেটপুরে খেয়ে সন্ধ্যায় মায়ের সাথে চলে যাই পশ্চিমপাড়া বস্তিতে। ওখানেই আমরা রাতে থাকি। আমার বাবা রিকশা চালায়।’ শুভ ছোট্ট করে বলল, ‘তুই কাজের বেটি রহিমার ছেলে? আমি তো তোকে খানবাড়ির ছেলে ভেবে বসে আছি।’
ঠিক তখনই খান সাহেবের স্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার পাশে শুভকে দেখে কড়াগলায় মাকে বললেন, ‘রহিমা, তোমার ছেলে কার অনুমতিতে খানবাড়িতে এই ছেলেকে এনেছে? এত বড় স্পর্ধা তোমার ছেলের! ও কি জানে না খানবাড়িতে বাইরের লোক আসার নিয়ম নেই!’
খান সাহেবের স্ত্রীর কথায় শুভ ভয় পেল। নিচুস্বরে বলল, ‘আমি যাইরে’। বলেই শুভ হনহন করে চলে গেল। মা এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘কেন ওই ছেলেকে এখানে এনেছিস? খান সাহেবার কাছে ক্ষমা চা। যা।’ খান সাহেবা বললেন, ‘ক্ষমা চাইতে হবে না রহিমা। এমন ভুল যেন আর না করে। তোমার ছেলেকে ভাত বেড়ে দাও। মাছের ছোট টুকরোটি দেবে কিন্তু।’ মা আমাকে বললেন, ‘চল ভাত খাবি।’
৩.
এই ঘটনার পরদিন থেকে লক্ষ করেছি শুভ আমাকে এড়িয়ে চলছে। আগের মতো পাত্তা দিচ্ছে না। দেবেই বা কেন! আমি তো এত দিন ওর মনের ভুল জায়গায় ছিলাম। খানবাড়ির ছেলে ছিলাম। এখন তো ওর ভুল ভেঙেছে। সে জেনেছে, আমি খানবাড়ির কাজের বেটি রহিমার ছেলে। এ কারণে শুভ আমার সাথে দ্রুত দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেছে। আমার মা শুধু খানবাড়িরই নয়, শুভর চাচাদের ঘরেও এক সময় কাজ করতেন। আমি কাজের বেটি রহিমার ছেলে। শুভদের মতো পয়সাওয়ালার ছেলেরা কাজের বেটি রহিমাদের ছেলের সাথে মিশতে যাবে কোন দুঃখে। সমাজ কী এতই অন্ধ!
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল