২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

থাইল্যান্ডে কয়েক দিন

-

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনযাপন থেকে একটু অবসর নিয়ে ছুটির আমেজে বিদেশ বেড়ানোর জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক পছন্দের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি যেন রূপকথার রাজ্য। ব্যাংককে পা রাখলে নজরে পড়ে অতীতের সাথে হাত ধরাধরি করে বর্তমানের সহাবস্থান। ব্যাংককের মতো রঙিন শহর পৃথিবীতে খুব কমই আছে। রঙের এত আতিশয্য বোধ হয় আর কোথাও চোখে পড়বে না। পাশাপাশি রাস্তার ধারে নানা রঙের ফুল যেন শহরের শোভা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তাই তো যতবারই ব্যাংককে এসেছি প্রতিবার এক নতুন ভালো লাগায় ভরে ওঠে মন।
এবার ব্যাংকক ঘুরতে এসে প্রথমেই গেলাম রাজপ্রাসাদ গ্রান্ড প্যালেস। কিছু মুহূর্তের জন্য মন হারিয়ে গেল, কল্পনার জগতে বিচরণ করে এলাম রাজা, রানী, রাজসভা আর রাজার রাজ্য শাসনের দিনগুলোতে। একটু সময় নিয়ে ঘুরে দেখলাম। প্যালেসকে ঘিরে রেখেছে ছাত্ত ফ্রায়া নদী। সন্ধ্যায় ছাত্ত ফ্রায়া নদীর পাশে দাঁড়িয়ে পুরো শহরটাকেই রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখার সুযোগ হলো না। এখনো সন্ধ্যা হতে অনেক দেরি। ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা ১১টার দিকে। দুপুরের আগেই প্যালেস দেখা শেষ করতে হবে। প্যালেস চত্বরেই আছে রয়াল চ্যাপেল মন্দির, যার শিল্পকীর্তি নজর কাড়ে। এখানকার সবুজ পান্না দিয়ে তৈরি বহু মূল্যবান বুদ্ধদেবের মূর্তিটি দেখার মতো। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা, শায়িত বুদ্ধমূর্তি রয়েছে এই মন্দিরে। রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে গেলাম ব্যাংককের দ্য ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। একটি দেশকে জানতে গেলে, দেশটির সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প পরিচিতির নিদর্শন পাওয়া যায় মিউজিয়াম অর্থাৎ জাদুঘরে। পরিপাটি করে সাজানো মিউজিয়ামটি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মিউজিয়ামটিতে প্রায় ১৫০০ বছরের বৌদ্ধ শিল্পকলার নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, যা মুগ্ধ করল আমাকে। মিউজিয়াম ঘুরে এবার ভোজনের পালা। রাস্তার দুইপাশে খাবারের পসরা আর ফলের যেন প্রাচুর্য এই ব্যাংকক নগরী। থরে থরে দোকানে সাজানো টাটকা ফলমূল। বেশ কিছু দোকানেই চাইনিজ খাবার আছে। আর পোকামাকড়ের তৈরি খাবার স্ট্রিটফুডের তালিকায় থাইবাসীদের কাছে বেশ প্রিয়। থাই খাবারের সমারোহ শহরের সর্বত্র। এ ছাড়া খাঁটি ভারতীয় খাবারও আছে। আমরা একটি রেস্তোরাঁয় থাই খাবার খেলাম। আসল থাই ফুডের স্বাদ তো থাইল্যান্ডেই মিলবে। খাবারগুলো পরিবেশন করা হয় খুব সুন্দর করে সাজিয়ে, যা সত্যিই লোভনীয়। রসনার পাট চুকিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য সবুজ পৃথিবী লুম্বিনী পার্ক। বুদ্ধদেবের জন্মস্থানের নামাঙ্কিত পার্কটি এককথায় অসাধারণ। নরম, সবুজ ঘাসের পাশে লেক। লেকে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। কিছু সময় বোটিং করলাম। সবুজ প্রকৃতির মাঝে স্বচ্ছ, শান্ত লেক যেন সবুজের কার্পেটের পাশে জলধারার ওপরে নীল আকাশ। নীল ও সবুজ মিলে লেকের জলরাশিকে ফ্রেমে বাঁধা ছবির মতো মনে হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পার্কটি ঘুরে দেখলাম। বছরের প্রায় সব সময়ই পর্যটকদের ভিড় এখানে থাকে। প্রচুর ছোট রেস্তোরাঁ আছে এখানে। বিকেলের চা নাশতা এখানেই সেরে নিলাম। সন্ধ্যা নামার একটু আগে গৌধূলিবেলায় বেড়িয়ে এলাম পার্ক থেকে। হোটেলে ফেরার আগে ভাবলাম, কিছু কেনাকাটা করা দরকার। শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে বিশাল অজস্র মল আর মার্কেট। বেশ কয়েকটি মল আর মার্কেট ঘুরে কিনে নিলাম থাইবাসীদের হস্তশিল্প, জামাকাপড়, জুতা, ব্যাগ, গয়না ও শুকনো খাবার। তারপর ক্লান্ত কিন্তু ভালো লাগার অনুভূতি নিয়ে ফিরলাম হোটেলে। সকালের নাশতা সেরে রওনা করলাম; এবার গন্তব্য পাতায়া। ব্যাংককের দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার দূরে এশিয়ার অন্যতম বিচ রিসোর্ট অঞ্চল পাতায়া। ব্যাংকক থেকে পাতায়া যাওয়ার জন্য রয়েছে অজস্র প্রাইভেট ট্যাক্সি ও এসি বাস। আমরা একটি প্রাইভেট ট্যাক্সি নিলাম। ট্যাক্সি ছুটে চলল। পাতায়া যাওয়ার পথে ট্যাক্সিতে বসে দেখতে লাগলাম থাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাতায়া পৌঁছে দেখলাম সৈকতজুড়ে রয়েছে আমোদ-আয়েশের এলাহি আয়োজন। আয়েশ-বিলাসের নানা হোটেল ও রিসোর্ট ছড়িয়ে আছে পাতায়া সৈকতজুড়ে। রেস্তোরাঁ-বার এবং লাইভ মিউজিকের জোরালো শব্দ। বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে পৌঁছা যায় সমুদ্রের মাঝখানে এক প্ল্যাটফর্মে। সমুদ্র, বিচ আর বিচ সাইডের মার্কেট ঘুরে একটি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার খেয়ে নিলাম। এবার ফেরার পালা ব্যাংকক নগরীতে। সন্ধ্যায় ব্যাংকক নগরী আলো ঝলমল করে ওঠে। রাতে হেঁটে ব্যাংকক ঘোরার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। পরদিন সকালে ব্যাংকক ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে হলোÑ শহরজুড়ে দেখার জন্য রয়েছে নানা বিস্ময়, যা ভ্রমণপিপাসুদের মন ছুঁয়ে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement