২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরাটা সমাচার

জীবনের বাঁকে বাঁকে
-

বসে বসে পরাটা বানাচ্ছি। এগুলো বানিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেবো, সময় করে ভেজে খাবো। বান্ধবী নীলাঞ্জনার কল, ওর মন ভালো নেই। একটু গল্প করতে আসবে। ওকে আসতে বলেই মনে মনে ভাবছি, ওর গল্প তো কয়েক ঘণ্টায় ও শেষ হবে না। আমার কাজের আজ তেরোটা বাজবে। আমি আবার কাজ ছাড়া থাকতে পারি না।
যথাসময়েই উনি এসে হাজির। আমায় এই বেলায় পরাটা বানাতে দেখে তার অনেক প্রশ্ন। বললাম-
মাঝে মাঝে খুব দৌড়ের ওপর থাকি, নাশতা বানানোর সময় পাই না, তাই বানিয়ে রাখছি। ডিপ ফ্রিজে রাখব নষ্ট হবে না।
এখানেও সেই পরাটা।
কেন কী হয়েছে পরাটার।
নীলাঞ্জনা বলতে শুরু করলÑ
আমাদের বাসায় কখনো দোকান থেকে পরাটা আনা হয় না। খেতে চাইলে বাসায় বানাতে হয়। কিন্তু আমার হাতের সমস্যা বলে বানাতে পারি না। বুয়াকে বললে সে বলবে, ‘আমি পরাটা বানাতে পারি না’। কিছু দিন আগে আপার বাসায় যাই। আপা বলল, দুলাভাই নাকি কল করে বলেছে কী এক পরাটার কথা। খুবই মজা, শুধু ভেজে খেতে হয়। ভাইয়া নিয়েও আসবে বলেছে। আপার কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম, ভাইয়া পরাটা আনলে তখন আমিও আসব। সেই পরাটা খাবো।
এরপর ভুলেই গেছি সেই পরাটার কথা। কয়েক দিন পর আপার বাসায় যাই, আপা নিজেই বলল, ভাইয়া পরাটা নিয়ে এসেছে। খুবই মজার ছিল। কথায় বুঝেছি সব পরাটা শেষ। জানিস আমি যে কেমন মানুষ বুঝিই না। আপাকে বললে ঠিক রেখে দিত দুইটা আমার জন্য। কিন্তু বলতে আর পারিনি। সে দিন সকালে মাকে কল করি, কেমন আছেন কী করেন জিজ্ঞেস করলেই মা বললেন,
-- মাত্র নাশতা খেয়ে উঠলাম। জানিস আজ সাহেবি নাশতা খেলাম।
-- যেমন।
-- রাকিবরা এসেছিল। সকালের জন্য পরাটা এনেছে। কালকে সকালে সবাই খেয়েছে। আজ ঘুম থেকে উঠেই আমার খুব খুদা লাগে, দুইটা পরাটা ভেজে ডিম দিয়ে খেয়েছি।
জানিস মায়ের কথায় আমার খুব হাসি পায়। মা আমার এমনিই। আমিও কয়েক দিন পর গেলাম মায়ের বাসায়। পরাটার কথা কিছুই বলিনি। মা নিজেই সকালে বললেন,
-- কী রে পরাটা খাবি।
আমি তো মহাখুশি। তবে প্রকাশ করিনি। মা রান্নাঘরে গেলেন, সাথে আমি আর রাহেলা। রাহেলা মায়ের কাছে থাকে মাস সাত থেকে। মা ফ্রিজ থেকে পরাটা বের করে রাহেলাকে দিয়ে বললেনÑ
-- দে তোর খালামনিকে দুইটা ভেজে। গরম গরম ভাজা পরাটা খাবে ও। আমি তো ঠিক মতো উল্টাতে পারি না। তুই তো ভালোই শিখে গেছিস।
রাহেলার পাশে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি। ও মা বরফ সহই পরাটা তেলবিহীন তাওয়ায় দিলো, প্রথমবার পরাটা উল্টানোর একটা কৌশল আছে। মুহূর্তে একেবারেই পরাটা ভাজা হয়ে গেল। আমি তো তাজ্জব হয়ে যাই। খেয়ে দেখি হেব্বি মজা। ভাজতে তেল লাগল না। মা কে জিজ্ঞেস করি, কই পাওয়া যায় এই পরাটা। বললেন, সব দোকানেই।
কী এক কাজে দোকানে যাই, এই মুহূর্তে দোকানে ভাবী (দোকানদারের বউ বসা)। কথা বলতে বলতে ভাবী বললেনÑ
... শরীর ভালো না, নাশতা বানাতে পারিনি। দোকান থেকে পরাটা নিয়ে মা-মেয়ে ভেজে খেলাম। তেলও লাগেনি।
তখনই মনে পড়ল পরাটার কথা। কিন্তু আমার কাছে তখন টাকা ছিল না, তাই কিনতে পারিনি। আবার ঠিক ভুলে গেছি পরাটা কেনার কথা। এখন তোকে বানাতে দেখে মনে হলো।
নীলাঞ্জনার পরাটা সমাচার শুনে আমি অবাক। এই যুগেও এমন মানুষ হয়। টাকা হলেই নাকি এখন বাঘের ও চোখ মেলে অথচ ও পরাটা খেতে পারল না এত দিনে।
... হয়েছে হয়েছে, তোকে আর কিনতে হবে না। এটাই সেই পরাটা। আমি নিজেই বানিয়ে রেখে দিই। পরে ভেজে খাই। আজই তুই কয়েকটা নিয়ে যাবি। ফ্রিজে রেখে দিস। ইচ্ছে করলেই ভেজে গরম গরম খাবি। একসাথে যে কয়টা ইচ্ছা করে তাই খাবি। তোর এই পরাটা সমাচার আর বাড়তে দিস না।
নীলাঞ্জনার সেই কি হাসি, গল্প করতে করতে আমার সব পরাটা বানানো শেষ। ভাগ্যিস আজকে ওর গল্পের বিষয় ছিল পরাটা, নইলে আমার পরাটাই বানানো শেষ হতো না।


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন

সকল