২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বদলে যাওয়া! চারাগল্প

-

নৈতিকতার অবক্ষয় সব কিছুতে হচ্ছে। সমাজ, দেশ এবং সারা দুনিয়ায় একই চিত্র! চামড়া শিল্পে ধস নেমেছে। এতিম মিসকিনের হক মেরে দিচ্ছে কেউ কেউ! এসব আমার কাছে আশ্চর্য মনে হয় না। কারণ যেখানে মানুষের অনুভূতিতে ধস নেমেছে সেখানে আর এসব বড় কোনো বিষয় না। আগে ভালোবাসা নামক অনুভূতি ছিল অনেক পবিত্র। সে অনুভূতি যেখানে বদলে যেতে শুরু করেছে সেখানে মানবতার অনুভূতি টিকবে কোথা থেকে? এসব চিন্তা করতে আমার মনের আয়নায় ভেসে উঠল এমন এক সন্ধ্যার কথা যা আমি এখনো ভুলতে পারিনি।
সে সন্ধ্যায় আমি আর সে যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তখন টুপ করে কয়েক ফোঁটা চোখের অশ্রু আমার গা বেয়ে পড়ে গেল। কিন্তু তাকে বুঝতে দিলাম না। যদিও বাইরে অঝর ধারায় ঝরছিল আকাশের অশ্রু। চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। শুধু চাপা স্বরে জানতে চাইলাম, ‘তবে কথা দিয়েছিলে কেন?’
সে আমতা আমতা করে বলল, ‘আমার মা কিছুতেই মানতে পারছেন না’!
‘সম্পর্ক করার আগে মাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলে?’ আমিও জবাব দিলাম।
সে আবারো আমতা আমতা করতে লাগল। ‘থাক আর আমাকে বুঝাতে হবে না! আমাকে ছেড়ে যার কাছে উনার পেশা কী?’ আমার প্রশ্নে এবার সে হকচকিয়ে গেল।
‘সে আমেরিকা প্রবাসী!’ আমার প্রশ্নে সে যেন একটু ইতস্তত বোধ করে উত্তর দিলো। আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম, ‘যাও তবে সুখে থেকো! আমি কোনো সমস্যা করব না। এমনকি তোমার বিয়ের সময় এলাকায়ও থাকব না।’ বলেই আমি তার সামনে থেকে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ালাম। সে আমার দেয়া আশ্বাসেও আশ্বস্ত হলো না। সে পেছন থেকে ডেকে বলল, ‘মোবাইলে তোলা আমাদের ছবিগুলো’?
আমি এবার অনড় হয়ে দাঁড়ালাম। আমার চোয়াল খুব শক্ত হয়ে এলো। আমি আবার তার সামনে গিয়ে মুখোমুখি হলাম। তার পর পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার হাতে দিয়ে বললাম, ‘নিজের হাতেই ডিলিট করে দাও’। সে আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে মোবাইল কেড়ে নিয়ে গ্যালারিতে গিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করতে লাগল। কিছুক্ষণ বাদে আমার মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে সে জানতে চাইল আর কোনো ছবি আছে কি না?’ তার এমন কথা শোনে তাকে আমার খুব অচেনা মনে হতে লাগল। এবার আমি তাকে বললাম, ‘দুনিয়াতে সব প্রেমিক খারাপ হয় না! সব প্রেমিক সামাজিক মাধ্যমে ছবি ছেড়ে প্রতিশোধ নেয় না!’
আমার কথা শোনে সে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগল। আজ সে পিছন ফিরে একবারও চাইল না। অথচ এই মেয়েটাই দেখা করতে এসে চলে যাওয়ার সময় বারবার পিছন ফিরে চাইত। এমন করত যেন আমাকে চোখের আড়াল হতে দেবে না! তার এমন বদলে যাওয়া আমাকে মেনে নিতে হবে। যতই শ্রাবণ নেমে আসুক আমার চোখে। যতই মেঘ ভর করুক এই মনে। আমাকেও বদলে যেতে হবে। মানুষের বদলে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। এক একজন এক স্থান হতে বদলে যায়। সে বদলে গেছে আমার থেকে ভালো কিছু পেয়ে। আর কিছু ব্যবসায়ী বদলে লুটেরা হয়ে যায়! হয়তো আমি বদলে পাথর হয়ে যাবো।
পূর্ব শিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement