২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মাকে ছাড়া ঈদ

ঈদ আয়োজন
-

আজ ঈদ আছে কিন্তু মা নেই। সব কিছু কেমন শূন্য লাগছে। মাকে ছাড়া পুরো বাড়ি প্রাণহীন। খুব বেশি দিন নয়, মাত্র দু’বছর আগের কথা। ঈদ ছিল, মাও ছিল পাশে। এই ঈদুল আজহার দিনে মাকে নিয়ে কত আনন্দ করলাম। নামাজ শেষে বাবা বড় সাইজের দুটো ইলিশ মাছ নিয়ে এলেন। মা অনেক ভালো মাছ কাটতে পারত। তাই মাছ দেখে খুশিতে নিজেই বসেছিল।
অসুস্থ শরীর, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। তবুও জোর নিয়ে বললেন, বঁটিটা দে আমি কাটি মাছ দুটো। আব্বাও খুশি হলেন। মার মাছ কাটার সাইজটা আব্বার ভীষণ পছন্দ ছিল। কিন্তু একটা মাছ কাটার পর দ্বিতীয়টা, অর্ধেক কেটে মা অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমাকে বলল, দেখ তো এটুকু পারিস কি না। আমি কিছুটা অবাক হলাম, মা কখনো সহজে কাজের কাছে হার মানে না। নিশ্চয়ই অনেক অসুস্থ বোধ করছে। আমি বিশ্রাম নিতে বললাম মাকে।
সরিষা ইলিশ রান্না হচ্ছে, মা বার বার উঠে এসে আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছে। রান্না শেষ করে সবার খাওয়া শেষে আমি মাকে নিয়ে খেতে বসলাম। ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ সব আছে মার। খাবার খেত খুব সচেতনভাবে। আমার মা, অনেক নিয়মের মধ্যে থাকতেন। প্রায় ৩০ বছর ডায়াবেটিস, তার পরও পয়েন্ট কম থাকত।
এক পিস মাছ মায়ের প্লেটে তুলে দিলাম। আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। বললাম, খাওতো কিছু হবে না ইনশা আল্লাহ। আজকের দিনে কিছু হবে না। মা তাও ভয়ে অর্ধেকটা মাছ আমাকে তুলে দিলো। আর গরুর গোশত দু’পিস জোর করে খাওয়ালাম। কোরবানির গোশত খেলে ক্ষতি হবে না এমন বুঝ দিলাম।
বিকেল থেকে মার শরীর আরো খারাপ হচ্ছিল। বুকে ব্যথা বাড়ছে। নিঃশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে। রাত ১২টা তখন। সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। সেখানে ডা. বললেন আগামীকাল আসুন ইসিজি করতে হবে। এখন কোনো কিছু খোলা নেই, ঈদের সময়তো। ওষুধ যা খাচ্ছে এগুলো চলবে।
বাসায় ফেরার সময় মা বলল, আমার ভালো লাগছে। রিকশায় ঘুরে সব ব্যথা সেরে গেছে। নিঃশ্বাসেও আরাম পাচ্ছি। খুশি মনে বাসায় ফিরলাম। ঘুমাতে গেলাম সবাই। সকালে মা দরজায় নক করছে। শুনে লাফিয়ে উঠলাম। মা বলল, আমাকে ঢাকা নিয়ে চল। আর পারছি না। তখনই ছুটলাম ঢাকার উদ্দেশে। ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করালাম। শ্বাসকষ্ট তখন তীব্র। এরা বলছে মার হার্ট অ্যাটাক হইছে। রেফার করল আয়শা মেমোরিয়াল। একদিন মা সুস্থ হয়ে আমার সাথে অনেক কথা বলছিল। পরদিন ওরা দিতে চাইল লাইফ সাপোর্ট।
নিয়ে গেলাম জাতীয় হৃদরোগে। ওখানে সিসিইউতে মাকে রাখা হলো। শ্বাসকষ্টটা কিছুতেই কমছে না। প্রতিদিন একের পর এক মৃত্যু ঘটছে এই হাসপাতালে। জীবন যেন এখানে অন্তিমের খেলা খেলছে। ভয়ে আমার গা শিউরে উঠছে। মাকে জড়িয়ে ধরি খুব জোরে। মা তখনো বুঝ দেয়, কিছু হবে না ভয় পাস না। হয়তো মা জানত তার বাছা অসহায় হবে মাকে হারালে।
সত্যিই চলে গেল মা। ভোর ৪টায় মাকে মৃত ঘোষণা করলেন ডাক্তার। আমি কাঁদিনি। মা তো আমাকে কাঁদতে শেখায়নি। মানিয়ে নিতে শিখিয়েছে। আজ আমি এ পৃথিবীর বুকে একা হয়েও মায়ের দোয়ায় বেঁচে আছি, ভালোভাবে বাঁচতে শিখেছি। ঈদের দিনটা আমার কাছে পাথর চোখে মাকে খোঁজার সীমাহীন কষ্ট নিয়ে আসে। তার পরও সময়ের সাথেসাথে স্নান হয় স্মৃতি।
গোপালগঞ্জ


আরো সংবাদ



premium cement