২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লাল গরুর কোরবানি

ঈদ আয়োজন
-


মিম আমার ছোট মেয়ে। বয়স সাত বছর। সে সবে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। গত কোরবানির ঈদে গরু জবাইতে অংশগ্রহণ করতে গেলেও সবার অলক্ষ্যে আমার দৃষ্টি ছিল মিমের দিকে। চোখ দুটো পানিতে ছলছল করে উঠল মিমের। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না সে। টুপ করে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেল। এ ক’দিনে আপন হওয়া লাল গরুটাকে সবাই মিলে জবাই করতে নিয়ে যাচ্ছিলাম। এ দৃশ্য সে মানতে পারল না। যেদিন পশুর হাট থেকে গরুটা কিনে এনেছিলাম, সেদিন কোরবানির গরুটা দেখে মিম তালি দিয়ে নেচে উঠেছিল। গরুটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল। গায়ের রঙ লাল। শিং দুটো খাড়া ও ধারালো। মিম আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল বাবা, ‘এই গরুটা কোথা থেকে কিনে এনেছ?’
Ñ‘কোরবানির হাট থেকে মা’। আমি উত্তর দিয়েছিলাম।
Ñ‘আমাকে হাটে নিলে না কেন’? মিম আবারো আমার কাছে জানতে চেয়েছিল।
Ñ‘মামনি ছোটরা হাটে যায় না!’ বলেই আমি মুচকি হাসি দিয়েছিলাম।
গরুটা খাওয়া চিবানোর সময় মিম এক অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত। সে মাঝে মধ্যে গরুটার কাছে যেত। কিন্তু গরু নড়ে উঠলেই মিম আবার ভয়ে দৌড়ে চলে আসত। ছয় বছর বয়সী মিমের কাণ্ড দেখে আমি মুচকি হাসতাম। একদিন মিম আমাকে বলে উঠল, ‘বাবা গরুটাকে গোসল করাচ্ছ না কেন?’ মিমের কথায় সায় দিয়ে সেদিনই আমি গরুটাকে গোসল করিয়েছিলাম। মিম খুব খুশি হয়েছিল সেদিন। ধীরে ধীরে গরুটার প্রতি মিমের এক অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি হতে লাগল। মিম গরুটার আরো কাছে যেতে থাকল। গরুও আর আগের মতো আক্রমণ করার জন্য মাথা নাড়ে না। মনে হয় মিমকেও গরুর ভালো লাগতে শুরু করেছিল। একদিন মিম ফুল দিয়ে একটি মালা গেঁথে গরুর খুব কাছে গিয়ে তার শিংয়ে লাগিয়ে দিয়েছিল। গরু হালকা ঘাড় নাড়িয়ে মিমের প্রতি ভালোবাসা দেখাল। গরুর শিংয়ে ফুলের মালা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।
ঈদের দিন সকালে অন্য সবার সাথে মিমও নতুন জামা পরে রেডি হয়ে এলো। ঈদগাহ থেকে ফিরে আমরা সবাই মিলে গরুটাকে টেনে নিয়ে শুইয়ে দিলাম। এরপর হুজুর গরুটাকে জবাই করে দিলেন। অন্য শিশুরা আনন্দে করতালি দিলেও মিমের ভালো লাগল না। সে খুব মন খারাপ করল গরুটার জন্য। সে ঘরে এসে মন খারাপ করে বসে রইল। আমার স্ত্রী নাহিদা অর্থাৎ, মিমের মা বিষয়টা খেয়াল করল। সে মিমকে গরুর জন্য মন খারাপ কি না জিজ্ঞেস করল।
মিম উত্তরে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নেড়ে জবাব দিলো।
ব্যস্ততার মাঝেও মিমের মা মিমকে পশু কোরবানির তাৎপর্য বুঝিয়ে দিলো। প্রিয় জিনিস কোরবানি দিলে আমাদের মালিক আল্লাহ খুশি হবেন, জানতে পেরে মিমের মন ভালো হয়ে গেল। মিম জানে আল্লাহ উপরে থাকে তাই সে আকাশপানে তাকিয়ে আল্লাহকে বলল, ‘আল্লাহ আপনি আমাদের কোরবানি কবুল করুন।’
পূর্ব শিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement