২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাণ খুলে কথা বললেই সমাধান!

-

কয়েক দিন আগে একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল। একজন মধ্যবয়স্ক নারী সুললিত কণ্ঠে বলছেন, ‘আর নয় দুশ্চিন্তা’ আর নয় ভয়, জীবন আছে যত দিন, যৌবন থাকবে তত দিন। এরকম আরো কিছু কথা যা বলার নয়। সবশেষে বলছেন, এক ফাইলই যথেষ্ট, বিফলে মূল্য ফেরত। স্ক্রিনে দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করুন।
যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন তারা এ ধরনের বিজ্ঞাপনের সাথে পরিচিত। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের সময় এমন সব বিজ্ঞাপন সামনে চলে আসে। এসব বিজ্ঞাপনে সব ধরনের বয়সের মানুষকে টার্গেট করা হয়। সুকৌশলে যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাইকে এমন কিছু স্পর্শকাতর কথা বলা হচ্ছে, যা সহজে যে কেউ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। এমনভাবে নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে শুনে অনেকেই বিশ্বাস করেন। বিশেষ করে যুবসমাজ এ ফাঁদে বেশি পা দিচ্ছে।
কয়েক দশক আগের চিত্র। গ্রামে হাটবারে হাটের ঠিক মাঝখানে একটু ফাঁকা জায়গায় কিছু মানুষ গোল বৃত্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সেই বৃত্তে সাপ খেলা দেখানো হয়, নয়তো কোনো জাদু দেখানো হয় এবং শেষের দিকে কিছু বেনামী ওষুধ বিক্রি করা হয়। এসব ওষুধ ডাক্তারের কাছে বা কোনো ওষুধের দোকানে পাওয়া যায় না। এ ওষুধ বিক্রেতাদের আঞ্চলিক ভাষায় হকার বলা হয়। ওষুধগুলোর এমন গুণাগুণ বর্ণনা করা হতো, গ্রামের সহজ সরল মানুষ সহজেই ফাঁদে পড়ে হকার বা কবিরাজের কাছে থেকে ওষুধ কিনতেন।
সময়ের বিবর্তনে এরকম ওষুধ বিক্রি করার দৃশ্য হাটবাজারে এখন চোখে না পড়লেও ডিজিটাল ভার্সন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখে পড়ে। ই-কমার্স এফ-কমার্স যাই বলি না কেন এগুলো ব্যবহার করে সহজে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। ফেসবুকে আকর্ষণীয় নাম ব্যবহার করে পেজ বা গ্রুপ খুলে এ ধরনের ওষুধ বিক্রি চলছে হামেশা। এ ক্ষেত্রে নারীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের দিয়েই বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এরা শুধু পুরুষ মানুষের জন্য ওষুধ বিক্রি করছেন এমন নয়, বরং নারীদের নানা রোগের ওষুধ বিক্রি করছেন। অথচ চিকিৎসকরা সবসময় পরামর্শ দেন এসব ওষুধ বর্জন করতে। এগুলো সেবনে সাময়িক উপকার পেলেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে যৌনক্ষমতা একবারে হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। অথচ বিজ্ঞাপনের মোহে পড়ে এসব ওষুধ সেবন করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই।
সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যৌন সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা হলে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থ হওয়া যায়। আমাদের সমাজে যৌন বিষয়ে আলোচনা না থাকায় পরিবার বা কাছের মানুষকে না জানিয়ে গোপনে এসব প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে। আবার অননলাইন-কেন্দ্রিক হওয়ায় প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে। এর নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় কেউ প্রতারিত হওয়ার পর প্রতিকার পাওয়ার উপায় থাকে না। তাই পরিবার থেকে প্রতিটি শিশুকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন যেকোনো সমস্যা গোপন না করে নির্দ্বিধায় বলতে পারে। লজ্জা করে কোনো অসুস্থতাকে গোপন যেন না করে। পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে যৌন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানে।
সরকার চাইলে এসব ডিজিটাল প্রতারণা লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। আর যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এরকম প্রতারণার জাল পেতে বসে আছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সেই সাথে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে একটি মানুষও যেন এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হন; তা নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement