২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্দুক নয়, জয় হোক বন্ধুত্বের

-

ভারত আমাদের কাছের প্রতিবেশী। দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতা ও হৃদ্যতা বেশ ভালো বলেই দাবি করা হয়। কিন্তু এত ভালো সম্পর্ক থাকার পরও সীমান্তের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড জনমনে দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেখা যাচ্ছে সীমান্তে কারণে-অকারণে বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে বাংলাদেশীদের ওপর। বিভিন্ন সময় নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে বিএসএফ; যা শান্তিকামী কারো কাম্য হতে পারে না। দু’টি সঙ্ঘাতপূর্ণ দেশের সীমান্তেও যেখানে এরকম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়, সেখানে এরকম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দু’টি দেশের সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের খবর যে কতটা পীড়াদায়কÑ তা সহজেই অনুমেয়।
দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনার পর মাঝখানে সীমান্ত হত্যা কিছুটা শিথিল হলেও গত বছর থেকে এই নৃশংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, গত দুই দশকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশী নাগরিক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ৪৩ জন। যেখানে ২০১৮ সালে ছিল ১৪ জন। এক বছরের ব্যবধানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন গুণ। দুঃখজনক হলেও সত্যÑ চলতি বছরের ৯ মাসেই বিএসএফের হাতে ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। তন্মেধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই ঘটেছে তিনটি হত্যাকাণ্ড।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটলেও দুই দেশের সীমান্তে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কয়েক দফা আলোচনা, এমনকি ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়েছিল। সেখানে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার না করতে একমত হয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু সে চুক্তির কার্যত প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি। কিছু দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফরে সীমান্ত হত্যার বিষয় উত্থাপিত হলে সীমান্তে আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকাণ্ড ঘটবে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর পরও সীমান্ত হত্যার লাগাম থামছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভারতের সদিচ্ছার অভাব। সীমান্ত হত্যা বেশির ভাগ হয়ে থাকে মূলত বাংলাদেশের নাগরিক অনেক সময় সীমান্ত রেখার বিষয়টি বুঝতে না পেরে ভারতের সীমানায় চলে যায়। যাকে আইনগত অবৈধ অনুপ্রবেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেই এলাকায় কিংবা নদী এলাকায় বেশি হয়ে থাকে। যা না বোঝার কারণে হয়। তাই বলে গুলি করে হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সময় এসেছে সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের আলোচনার পাশাপাশি নিয়মিত আলোচনা ও পতাকা বৈঠকের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তে যারা নিয়োজিত রয়েছেন; তাদের প্রতি ওপর মহলের আলোচনার বিষয়বস্তু ওয়াকিবহাল করতে হবে।
এটাও বাস্তবতাÑ অনেক সময় বাংলাদেশী অনেকে সীমান্ত পারাপারের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু সেখানে গুলি না করে সহনশীল আচরণের মাধ্যমে তাদের বিরত রাখা যেতে পারে। আগে সীমান্ত হত্যা ঘটার পেছনে গরু পাচারের কথা বলা হতো। কিন্তু এখন তা এক-তৃতীয়াংশে কমে এসেছে। তার পরও সীমান্ত হত্যা বাড়ছে। অনেক সময় বিএসএফ দাবি করে থাকে, সীমান্তে চোরাচালান বা হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাদের ওপর গুলি না চালিয়ে জেল-জরিমানা করা যেতে পারে। বাংলদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সাধারণত গুলি চালায় না। বিএসএফ গুলি করে থাকে। এভাবে সীমান্তরক্ষীদের হাতে কোনো দেশের নাগরিক হত্যা আন্তর্জাতিক আইনও সমর্থন করে না। সুতরাং সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পর্যায়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত হয় তা বাস্তবে রূপ দিতে যা যা দরকার সেটি আমাদের সরকারকে করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, উভয় দেশের জনগণ ও সরকারের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ববোধ আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে, তা ধরে রাখতে অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা হোক। বন্দুক নয়, জয় হোক বন্ধুত্বের। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
alommdshahin688@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement