২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তারুণ্যনির্ভর রাজনীতি

-

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের রাজনীতিতে পদচারণা খুব কম। ক্ষেত্রবিশেষ নেই বললেই চলে। কেন দেশের তরুণরা রাজনীতি বিমুখ, কেন তারা রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এসেছে। তরুণদের রাজনীতি চর্চা হয়ে থাকে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক। তা হলে কি ক্যাম্পাসে রাজনীতিচর্চার অনুকূল পরিবেশ নেই? কেউ কি বাধা দিচ্ছে?
এখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন, রাজনীতিতে নাম লেখানো মানে নিজেদের পরাধীন করে তোলা। আজকাল যে ছাত্রনেতার সাঙ্গপাঙ্গ যত বেশি, যে নেতার পেশিশক্তি যত বেশি, তার ক্ষমতার দাপট তত বেশি, ক্যাম্পাস যেন তার রাজত্বে। সবার অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলে, ইতিবাচক পরামর্শ দেয়ার সুযোগ না থাকলে, দেশ-দশের জন্য কাজ করার সুযোগ না থাকলে, সে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে তরুণদের কী লাভ? তরুণদের রাজনীতি বিমুখতার এটিই যেন মুখ্য কারণ বলে মনে হয়।
হলে সিট পেতে, পরীক্ষায় নকলের সুযোগ তৈরি করতে, আধিপত্যকে বিস্তার করতে রাজনীতির খাতায় নাম লেখান, যা ক্যাম্পাস রাজনীতিকে পচনের দিকে নিয়ে গেছে। এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতিই গড়ে উঠছে সর্বত্র। এসব কারণে রাজনীতির মাঠ সমতা নেই বলে তরুণরা ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। রাজনীতি নিয়ে কথা হলেই অনেকে পাস কাটিয়ে দূরে চলে যান। সামান্য সমালোচনা কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী চুপচাপ লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করাই শ্রেয় মনে করেন। যে কারণেই হোক, তরুণরা যখন রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়; তখন স্বচ্ছ রাজনীতিচর্চার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
বেশির ভাগ তরুণের অর্থের প্রতি লোভ নেই। প্রবল সাংসারিক ভাবনায় তারা কাতর হয়ে পড়েন না। তাদের মানসে সর্বদা ভাসে দেশ-চিন্তা, সামাজিক উন্নয়ন ভাবনা। মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে চায় তরুণসমাজ। দেশের ক্রান্তিকালে ঝাঁপিয়ে পড়ার বাসনা থাকে তাদের। তরুণদের মধ্যে যারা স্বচ্ছ রাজনীতি করার সুযোগ পান, তাদের বেশির ভাগকে জনহিতকর কাজে দেখা যায়। জনসম্পৃক্ত কাজের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তারা মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ চান। কিন্তু এ সুস্থধারার রাজনীতি বর্তমানে প্রায় অনুপস্থিত।
বর্তমানে কথিত তরুণ অনেক নেতা সামান্য পদধারী হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন, জড়িয়ে পড়ছেন ছাত্র-সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে। ফলে তারুণ্যনির্ভর রাজনীতি দিনে দিনে ঘৃণিত হচ্ছে। একজন তরুণের মুখে চুনকালি পড়া মানে সবার জন্যই তা লজ্জার, এই দৃষ্টিকোণ থেকে তরুণদের রাজনীতির প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা বাড়ছে। বড়কথা, মূলদলের অনেক বড় নেতা তরুণদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন যথেচ্ছভাবে। এ কারণে ছাত্র-রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে যাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়েছে, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদের দেখেও অনেকে পিছপা হন। দেশের তথ্যচিত্র বলছে, দেশের বেশির ভাগ তরুণই রাজনীতিকে ঘৃণা করেন। রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের জোর করে মিটিং-মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। আজকাল জোরপূর্বক দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানোর প্রবণতা লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে।
তরুণদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে তারুণ্যনির্ভর রাজনীতি উপহার দিতে কাজ করতে হবে। বর্তমান সীমাবদ্ধতা দূর করা জরুরি। তরুণরা যাতে দেশ, সমাজ নিয়ে গঠনমূলক কথা বলতে পারেন, সে জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে হবে। সর্বোপরি তরুণদের পছন্দসই রাজনৈতিক দল অনুসরণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। সর্বোপরি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে প্রগতিশীল করতে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে, দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ উপরে বিবেচনা করতে তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করানোর কোনো বিকল্প নেই। ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতি যেহেতু তরুণদের রাজনীতিচর্চা ও শেখার উত্তম জায়গা, তাই সেখানে দলীয় নিপীড়ন কিংবা অসহিষ্ণু মনোভাব পরিহার করে শিক্ষার পাশাপাশি সুষ্ঠু রাজনীতিপাঠ প্রদানে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। হ
md.angkon12@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল