২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সিনেমা ও কিছু কথা

-

একসময় চলচ্চিত্র তথা সিনেমাকে সমাজের দর্পণ বলা হতো। এতে সমাজের নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতি, ন্যায়-অন্যায়, আনন্দ-বেদনা ও জীবনাচার সুনিপুণভাবে ফুটে উঠত। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ ও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনাচার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেত। হয়তো সে কারণে চালচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হতো। কিন্তু বর্তমানে ঘটছে উল্টোটি। সমাজে প্রচলিত নয় এমন অশালীন দৃশ্য সিনেমাতে সংযুক্ত করা হচ্ছে। নোংরা সংলাপ ও অশালীন পোশাক ব্যবহার করা হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতীসহ সব দর্শকের মনে। এসব সিনেমা নগ্নতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে অনুপ্রাণিত করে। যুবসমাজের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়।
একসময় বাসায় পরিবারের সবার সাথে সিনেমা দেখার চল ছিল। কিন্তু এখন আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিনেমা দেখা হয় না। কিছু সিনেমায় নগ্ননৃত্য দেখানো হয় এমনভাবে যাতে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসাথে বসে সিনেমা দেখলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এমন অশালীন দৃশ্য চলে আসে যে দ্রুত চ্যানেল বদলাতে হয়। কেন এমন অশালীন দৃশ্য চলে আসে? এগুলো তো আমাদের সংস্কৃতি নয়।
এখন আর সিনেমা সমাজের দর্পণ নয়। বরং সিনেমার দর্পণ সমাজ। কেননা, চলচ্চিত্রে যা দেখানো হয় সময়ের ব্যবধানে তা সমাজে ফুটে ওঠে। চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকারা যা যা করে আমাদের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে। সিনেমায় নায়ক যে স্টাইলে চুল রাখে, যে স্টাইলের পোশাক পরিধান করে কিশোর, যুবকরা সেই স্টাইলে চুল রাখে, সে স্টাইলের পোশাক পরে। বাবা-মা বা শিক্ষকদের আদেশ-নিষেধ তেমন গুরুত্ব দেয় না। কিশোরী বা তরুণীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তারাও নায়িকার সাজসজ্জা ও পোশাককে পূর্ণ অনুসরণ করে। ঈদে বা উৎসবে তাদের পছন্দের নায়িকার অনুরূপ পোশাক না পাওয়াই আত্মহত্যা করেছে...এমন সংবাদ পত্রিকায় আসে।
সিনেমায় যা দেখানো হয় তার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে দর্শকদের মনে। তারা যা দেখে সেগুলোকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়। অনুসরণ ও অনুকরণের চেষ্টা করে। যেমন চলচ্চিত্রে যে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণ শেষে হত্যা, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায়, পরকীয়া, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে খুনের বিষয়গুলো দেখানো হয় তা একসময় আমাদের সমাজে ছিল না বললেই চলে। কিন্তু সিনেমায় এমন অশালীন দৃশ্য প্রদর্শিত হওয়ায় বর্তমানে আমাদের সমাজে তা অহরহ ঘটছে। তা ছাড়া প্রেম কাহিনীনির্ভর সিনেমা দেখতে দেখতে যুবসমাজের অনেকে বিয়ের আগে প্রেম করাকে তাদের জীবনের লক্ষ্য মনে করছে।
সিনেমা যেহেতু দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাদের জীবনাচারে নায়কের লাইফস্টাইল প্রতিফলিত হয়। তাই সিনেমা নির্মাণে অবশ্য জনকল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের স্বার্থে সিনেমা হতে হবে অশ্লীল পোশাক, নোংরা ভাষা ও অশালীন নৃত্যমুক্ত। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যনির্ভর ও মানসম্মত।
আশার কথা হলো, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যনির্ভর, মানসম্মত ও শিক্ষামূলক কিছু সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। তবে এগুলোর সংখ্যা অনেক কম। সুতরাং পরিচালকদের উচিত, শুধু সাময়িক আনন্দ দেয়া নয়, বরং নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষামূলক ও ইতিহাসনির্ভর মানসম্মত সিনেমা নির্মাণ করা।
পরিশেষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংস্থাটি যেন যুবসমাজের নীতি ও নৈতিকতার বিষয়টি মাথায় রাখে এবং অশ্লীল পোশাক, অশালীন দৃশ্য ও নোংরা ভাষা ব্যবহৃত সিনেমাকে ছাড়পত্র না দেয়। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল