২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভ্যাকসিন যেন অস্ত্র না হয়

-

মহামারীর এ সঙ্কটকালে যেন অনেক কিছুর সংজ্ঞা বদলে দিচ্ছে। করোনা পৃথিবীর চিত্র পাল্টে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং সামাজিক েেত্র এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। করোনার ফলে মানুষের চিন্তাভাবনা এবং জীবনের প্রায়োগিক দিকগুলোতেও বিভিন্ন পরিবর্তন লণীয়। পৃথিবীর এ সামগ্রিক পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বৈশ্বিক রাজনীতিতেও। এক দেশের সাথে অন্য দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে এ অদৃশ্য ভাইরাস।
করোনা থেকে বাঁচতে সারা পৃথিবীর মানুষের অপো এখন একটি ভ্যাকসিনের জন্য। অধরা সেই ভ্যাকসিন আবিষ্কারে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সারা বিশ্বের অসংখ্য বিজ্ঞানী। তাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টায় পৃথিবীবাসীর মনে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে। কিছু দেশ সফলভাবে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণাও দিয়েছে। তবে সাধারণের কাছে ভ্যাকসিন আসতে কিছু সময় অপো করতে হবে।
ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন ও গবেষণা যেমন এক দিকে আশার আলো দেখাচ্ছে, তেমনি এর অন্ধকার অংশটিও সমানভাবে সত্য। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা, স্নায়ুযুদ্ধ নতুন কিছু নয়। করোনার সময়েও এ প্রতিযোগিতা ল করা গেছে। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রাণান্ত চেষ্টা। কোন দেশ প্রতিপ দেশের চেয়ে কত দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারে; তা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। ভালো কাজে প্রতিযোগিতা প্রশংসার দাবিদার এবং এর ফলে ভ্যাকসিনের আবিষ্কারের পথ যে আরো দ্রুততর হয়েছে সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এর মধ্যে শঙ্কাও লুকিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য গ্রুপে বিভক্ত হয় পৃথিবী। ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধও প্রত্য করেছে বিশ্ববাসী। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও বিতরণ নিয়ে বর্তমান পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ফের স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় কি না। যদি তা-ই হয়, তবে বিশ্বের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য সেটি হবে ভয়াবহ ও অমঙ্গলকর।
ভ্যাকসিন নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো ফল নিয়ে আসবে না, বরং এ থেকে বেশ কিছু বড় ধরনের সমস্যা উদ্ভূত হতে পারে। যেমনÑ পারস্পরিক মতপার্থক্য বা বিরোধের কারণে এক দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সমর্থ হলেও প্রতিপ দেশকে ভ্যাকসিন প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এতে সেই দেশের মানুষ চরম তিগ্রস্ত হবে। আবার চড়ামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করলে তা সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরেই রয়ে যাবে, যার ফলে এর কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না। অন্য দিকে কেবল প্রতিযোগিতার খাতিরে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করলে তা যদি কার্যকর না হয়, সেটিও সাধারণ মানুষকে ঝুঁকিতে ঠেলে দেবে। উপরন্তু ভ্যাকসিন পাওয়া এবং না পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি বিভাজন সৃষ্টি হবে, যার পরিণাম হবে পৃথিবীব্যাপী ভয়াবহ সঙ্ঘাত।
ভ্যাকসিন মানবজাতির কল্যাণের জন্যই প্রস্তুত করা হয়। তাই এর সঠিক ব্যবহার যদি নিশ্চিত করা যায়, পৃথিবীর মানুষই তাতে উপকৃত হবে। ভ্যাকসিন যেন কখনো অপশক্তিতে পরিণত না হয়, সে দিকে নজর রাখা জরুরি। অতি দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কার হোক; এটি সবারই প্রত্যাশা। শক্তিধর দেশগুলোর সুস্থ প্রতিযোগিতায় কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা মহামারী নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এ ভ্যাকসিন যেন অস্ত্র হিসেবে কিংবা প্রতিপকে ঘায়েল করতে ব্যবহৃত না হয়। সম্প্রতি রাশিয়ার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের নাম দেয়া হয়েছে ‘স্পুটনিক-৫', এই নামকরণ সোভিয়েত যুগের কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কেউ ভাবছেন এ ধরনের নামকরণ থেকে স্নায়ুযুদ্ধের সূত্রপাতও হতে পারে। তাই ভ্যাকসিন যেন অস্ত্রের নতুন সংস্করণ না হয়ে মহামারী নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, সে জন্য বিশ্বনেতাদের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ব গণমাধ্যমকেও সরব ভূমিকা পালন করতে হবে; যাতে কোনো দেশ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে। কোনো একটি দেশ সফলভাবে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর পপাতদুষ্ট আচরণ না করলে, বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার ত্বরান্বিত হবে এবং মানুষ তাড়াতাড়ি তা হাতে পাবে। আর এর জন্য দরকার পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে সহাবস্থান। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই এ সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব। হ
লেখক : শিার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ishrakf1971@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement