১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ! কিন্তু কেন?

-

বর্ণিল স্বপ্নের লালন করে প্রতিটি মানুষ একটি সুখী-সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় বিবাহ নামের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠা মধুময় সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে দু’জন বুনতে থাকেন স্বপ্নের জাল। শুরু হয় নতুন জীবনের প্রথম অধ্যায়। অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে চলতে থাকে বর্ণিল পথযাত্রা। কিন্তু হঠাৎ করেই কখনো এ মধুময় সম্পর্কে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স নামক কাল নাগিনীর ছোবলে হয় ক্ষতবিক্ষত। কালবৈশাখীর মতো চুরমার হয় দু’জনের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশি হলেও এর ঢেউ ভয়াবহভাবে আছড়ে পড়েছে আমাদের দেশেও। বিভিন্ন কারণে ঘটছে এ বৈধ অপকর্ম। বাল্যবিয়ে ডিভোর্সের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’তে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত এ আইন অমান্য করে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ায় বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। অল্প বয়সে বিয়ের ফলে নারী-পুরুষ উভয়েরই কিংবা তাদের একজনের মানসিকতার সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবার, সমাজ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা অর্জন না হওয়ায় উভয়ের মধ্যে সাংসারিক বনিবনা তৈরি হয় না। একে অন্যের সামান্য দোষত্রুটি পাহাড়সম ভুল মনে করে ডিভোর্সকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কেউ। মাদক, যৌতুক প্রথা, পরকীয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে ‘জাতীয় মহিলা পরিষদ’ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এ ছাড়াও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিচ্ছেদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে অনেকাংশে দায়ী। এসব যোগাযোগ মাধ্যম নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে অগ্রগামী করেছে; যা বৈবাহিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। সৃষ্টি হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি সন্দেহ। বিচ্ছেদ প্রকোপে বাংলাদেশ বর্তমানে এক দুর্বিষহ মুহূর্ত পার করছে। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তির নিশানা মিলছে না। সংসার ভাঙার মিছিলে পাড়ি জমাচ্ছে দলে দলে।
সম্প্রতি একটি জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে ঢাকার দুই সিটিতে ডিভোর্সের আবেদন জমা পড়েছে চার হাজারেরও বেশি। বিগত ছয় মাসে অর্থাৎ ১৮০ দিনে চার হাজার ৫৫৭টি ডিভোর্সের আবেদন হলে এক দিনে আবেদন হয়েছে ২৬টি তালাকের। অর্থাৎ প্রতি ৫৫ মিনিটে একটি সংসার ভাঙার আবেদন করছেন রাজধানীর মানুষ! শেষ ছয় বছরের জরিপে দেখা যায়, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ, দণি সিটি করপোরেশনে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। তবে দিনে কতটি তালাক হচ্ছে, তা বলা মুশকিল। কারণ ডিভোর্সের আবেদন পদ্ধতি খুব সেকেলে ধরনের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মতে, গত সাত বছরে তালাকের পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। দেশে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ ঘটেছে বরিশাল অঞ্চলে (প্রতি হাজারে ২.০৭ জন)। সবচেয়ে কম বিচ্ছেদের শহর চট্টগ্রাম ও সিলেট (প্রতি হাজারে ০.৬ জন)। এই লাগামহীন তালাককে লাগামের মধ্যে আনা অনেক বেশি প্রয়োজন। বিচ্ছেদের ফলে নারীরা সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয় বিয়ের েেত্র নারীর চরিত্রকে দোষারোপ করা হয় নানাভাবে। তবে বর্তমান সময়ে নারীরা সবচেয়ে বেশি তালাকের আবেদন করছেন। কারণ আজ নারীসমাজ নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করতে অনেকাংশে সফল হয়েছে। তাদের মধ্যে উচ্চশিার প্রবণতা, সচেতনতা ও স্বনির্ভরতা বেড়েছে। ফলে তারা সব রকম অনাচার ও অত্যাচার সহজে মেনে নিতে চান না। পুরুষের টর্চার সেল থেকে বেরিয়ে আত্মার স্বাধীনতা খুঁজতে বিবাহবিচ্ছেদকেই সমাধান হিসেবে নিচ্ছেন অনেকে। সাধারণত নারীরা বেশি সহনশীল হয়ে থাকেন। কিন্তু একজন পুরুষ যখন অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাতে থাকেন তখন নারীর হৃদয় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আবার পুরুষের নানাবিধ খারাপ আচরণ নারীকে যেমন ডিভোর্স নিতে বাধ্য করে, তেমনি কিছু সময় নারীর খারাপ আচরণও পুরুষকে বিচ্ছেদের পথে ধাবিত করে। অনেক পরিবারে শাশুড়ি বউকে কিংবা বউ শাশুড়িকে অঘোষিত শত্রুতে পরিণত করেন। এতে সৃষ্টি হয় অশান্তি। মায়ের কথা শুনে অনেক পুরুষ কোনো ভাবনা না ভেবেই স্ত্রীকে সম্পূর্ণ দোষারোপ করে সিদ্ধান্ত নেন তালাকের। আবার যুবককালে নারী-পুরুষ উভয়ই পর্নগ্রাফিতে মারাত্মক আসক্ত হয়ে পড়েন। তাদের জীবনে দেখা দেয় যৌনবিকৃতি। ফলে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মারাত্মক যৌনরোগ ও দুর্বলতা। এতে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ই দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারেন না। এর ফলেও মহামারী আকারে বাড়ছে ডিভোর্সের পরিমাণ।
বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদ যেন এক মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে; যার কুপ্রভাব পড়ছে সন্তানের ওপর। সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই ঝরে যায় তার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। অনেকে সন্তানকে দত্তক দেন। শিশুটি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে পড়ে। মনোচিকিৎসকরা ধারণা করেন, ‘সন্তানরা যদি মা-বাবার স্বাভাবিক সঙ্গ এবং ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, তা হলে তাদের জীবন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক ও বিভীষিকাময়। তারা সমাজকে, পরিবারকে, নেতিবাচক হিসেবেই দেখে। তাদের মধ্যে জীবনবিমুখতা তৈরি হয় যা অত্যন্ত ভয়াবহ।’ সামান্য মনোমালিন্য থেকে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত কোনো সমাধান হতে পারে না। অতীব যৌক্তিক কারণ ছাড়া তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিচ্ছেদ কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং সমাধানও নয়। সাংসারিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হলে তা উদ্ভবের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। সম্ভাব্য সব সমাধানের পথে বিচরণ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলতে হবে। উভয়কেই ছেড়ে দিতে হবে সন্দেহপ্রবণতা। অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসার সমুদ্রে নিমজ্জিত হতে হবে দু’জনকেই। একপ মানিয়ে চলবে আর অন্য প ঔদ্ধত্য দেখালে ‘শান্তি’ ও ‘সুখ’ নামক শব্দটি সংসার থেকে বিদায় নেবে। সবাইকে ছাড় দেয়ার মনোভাব তৈরি করতে হবে। সমঝোতা ও সহনশীলতাকে বেছে নিতে হবে। থাকতে হবে স্বচ্ছ চিন্তাধারা; যা বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ ও সুখময় জীবনের। সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে সম্পর্ক হলো একটি গাছের মতো; প্রতিদিন যতœ নিতে হয়। তবেই পরিণত হয়ে ফলবান বৃক্ষে উপনীত হয়।হ
লেখক : ইয়াসমিন খাতুন, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল