২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্নীতিবাজ আমলা ও সিন্ডিকেটের কবলে বাংলাদেশ

-

চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন সমসাময়িক সময়ের দুর্নীতি নিয়ে একবার বললেন, ‘এখন তো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয় না।’
একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু সময় আগে মালয়েশিয়া স্বাধীন হয়। সেই দেশটি কোথায় পৌঁছে গেছে আর বাংলাদেশ কোথায় পড়ে আছে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতে এসে দুর্নীতি ধ্রুব অবস্থায়। এ সময়ে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সামরিক শাসন সব ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। এর পেছনে কী কারণ রয়েছে, এর শিকড় কতদূর প্রথিত রয়েছে? এ জট খোলা মামুলি ব্যাপার নয়।
আজকাল যারা ভাবছেন অমুক না থেকে অমুক থাকলে দেশে দুর্নীতি থাকত না। রাতে নদীর ধারে একলা বসে ভাবুন দেখি! মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, রাজনৈতিক দল, ক্ষমতা পালাবদল হয়। কিন্তু আসল ক্ষমতায় যারা তারা স্বপদে বহাল থাকেন। মন্ত্রী পরিবর্তন হলে মনে হয় এবার বুঝি কিছু একটা হবে। বাস্তবতা হলো মন্ত্রী পরিবর্তন হলেও মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন হয় না। আর জনগণ তো আছেই চিলে কান নিয়ে গেল অবস্থায়। কিছু হলেই মন্ত্রীদের পদত্যাগ চাই। ক্ষমতা পেয়ে মন্ত্রী চেয়ারে বসেছেন পাঁচ বছর। কিন্তু আমলারা নিজের চেয়ারে বসে আছন কয়েক দশক ধরে। কলকাঠি তো তাদের হাতে। আমরা সমালোচনা করি, তুলোধুনা করতে পারি শুধু রাজনীতিকদের। রাজনীতিকরাই বিভিন্ন শাসনামলে দুর্নীতির সমালোচনার প্রধান লক্ষ্যবস্তু। আমলাদের পরস্পর একে অপরের পিঠ চুলকানো সুখে বেশ ভালোই থাকেন। নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডার থেকে শুরু করে টিকিট কালোবাজারি, রিকশাচালকের ঘাম ঝরানো টাকা আমলাদের পকেটে যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট এক দিকে (রাজনীতিকের) সমালোচনার আড়ালে এ আমলাপক্ষ সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে যায়। যাদের আমরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রাখি সারা জীবন।
আমলাদের রাজনৈতিক আদর্শগুরু থাকেন না। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের তোষামোদে অজ্ঞান থাকেন। তেল মর্দন করতে তারা এতটাই পটু যে কোথায় তেল দিতে হয় তা মুখস্থ।
একটি মন্ত্রণালয়ে প্রধান কাজ করেন আমলারা। বালিশ কাণ্ড, বঁটির দাম ১০ হাজার টাকা, পর্দার দাম লাখ টাকা, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির ভুয়া ভাউচার সব কিছুর বুদ্ধিদাতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমলারাই করেন। কার কাছে কত দিয়ে বাগে আনা যাবে, সেটা সরকারি কোষাগার থেকে কিভাবে বের করতে হবে সব প্রস্তুত করেন তারা। এরপর সেই কাক্সিক্ষত ফাইল যায় মন্ত্রী এমপিদের কাছে। ওই যে পরস্পর ‘তুমি আমার আমি তোমার’ তত্ত্বে পাস করিয়ে সাবাড় করার দায়িত্বেও থাকেন আমলারা।
কোনো দিন কেউ ভাবেনি পাশের বাড়ির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তার ৮-১০টা ফ্ল্যাট কী করে হয়! গালি দিই সরকারকে, মন্ত্রীদের। আর দুর্নীতিগ্রস্ত টাকাওয়ালা আমলাকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে রোস্ট খাওয়াই, মেয়ের বিয়ে দিই। বাহ কী মানসিক কাঠামো আমাদের!
নির্বাচনে নিজের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করা, এলাকায় মাদকের অদৃশ্য লাইসেন্স দেয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি সব কিছুতে এই দুর্নীতিবাজ আমলাদের শক্তিশালী হাত রয়েছে। মাসিক মাসোয়ারা নিয়েই তো বউ, ছেলে, মেয়ে, শ্যালক, শ্যালিকার নামে সম্পদের পাহাড় গড়েন। জমির আইল কেটে পানি সেচলে কি আর লাভ হয়! তবে আমলাদের মধ্যে ভালো কেউ নেই, তা নয়। কিন্তু তারা স্রোতের বিপরীতে কতক্ষণ টিকে থাকবেনÑ এটাই অপেক্ষা।
সব কিছুর আড়ালে থাকে এই চক্র যারা কোনো প্রকল্পের এস্টিমেশন থেকে শুরু করে প্রকিউরমেন্ট, ইমপ্লিমেন্টেশন সব কিছুর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রক। এমনকি অডিটও এই আমলারা করেই সন্তোষজনক রিপোর্ট দেয়। রাস্তা তৈরির এক মাসের মধ্যে ভেঙে গেলে, রডের জায়গায় বাঁশ দিলেও তাদের কাছে নাকি রিপোর্ট সন্তোষজনক হয়।
আমলা সম্প্রদায়ের সাথে আবার সুন্দর মেলবন্ধন আছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের। দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের তিন সেঞ্চুরি; ধানের মণ ৫০০ অন্য দিকে চালের কেজি ৫০ টাকা; রোজার আগে চিনি, ডাল, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ানো সব কিছুতেই এরা তিমি মাছের মতো হাঁ করে বসে আছেন। জনগণের পথ একটাই ওই জালে আটকা পড়া। এদের এতটাই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যে যেকোনো সময়ে একটা সরকারকেও সিংহাসনচ্যুত করতে পারে!
তা হলে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র আর সিন্ডিকেট মহলের লাগাম কিভাবে টানা যায়? এ জন্য যা করতে হবে; আইন পরিবর্তন। অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তি হিসেবে বদলি সং¯ৃ‹তি বাদ দিতে হবে। সরাসরি চাকরিচ্যুত করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যে চাকরিতে জয়েন করতে পারেননি তিনি স্বপ্ন দেখেন বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট কিনবেন। কারণ তার ধারণা সরকারি চাকরি নিরাপদ। চাকরি যায় না। এ ধারণায় দুর্নীতিকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। যেখানে শাস্তির ভয় নেই সেখানে গিলে হোক আর কামড়ে হোক খেলেই হলো!
মন্ত্রীদের থেকে এ চক্রের ক্ষমতা কোনো অংশে কম নয়। মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে এ চক্রর। মন্ত্রীর পক্ষে এক দল সমর্থক থাকলেও তার বিপক্ষে আছে আরেক দল। কিন্তু এ সিন্ডিকেটের ভেতর কোনো দলাদলি নেই। তারা হলো রসুনের মতো। কেউ সিন্ডিকেট ভাঙতে চাইলে তিনিই ভেঙে টুকরো হয়ে যান, গায়েব হয়ে যান। হ
লেখক : সদস্য, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম

সকল