২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ভোগান্তি

-

দেশ ও জাতি গঠনে আইনজীবীদের ভূমিকা অপরিসীম। আজকে যারা শিক্ষানবিশ আইনজীবী তারাই একদিন জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেবেন। সুতরাং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ভোগান্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের খতিয়ে দেখা দরকার। একটি দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সভ্যতা বিনির্মাণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আইনজীবী তৈরির কারখানা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। কেউ আইন পেশায় কর্মজীবন শুরু করতে চাইলে তাকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে অনুষ্ঠিত এমসিকিউ, রিটেন ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। কিন্তু ২০১২ সালের আগে এ নিয়ম ছিল না। তখন শুধু রিটেন পরীক্ষা দিয়েই সনদ পাওয়া যেত। এখন আর সে সুযোগ নেই। আইন বিষয়ে যত বড় ডিগ্রিই থাকুক তিন ধাপে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া সনদ পাওয়ার সুযোগ নেই। যদিও একটা সময় বলা হতো, যার নাই কোনো গতি, সে করে ওকালতি। এখন আর সে কথা শোনা যায় না। দেশে জ্যামিতিক হারে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির ফলে এ পেশায় শিক্ষার্থীরা বেশি ঝুঁকছে। আগে যেখানে পাঁচ-ছয় হাজার পরীক্ষার্থী ছিল, এখন সেখানে প্রায় ৭০ হাজার পরীক্ষার্থী। এরা সবাই শিক্ষানবিশ আইনজীবী। বার কাউন্সিলের সময়মতো পরীক্ষা না নেয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক ২০১৭ ও ২০২০ সালের এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় ১২ হাজার ৮৭৮ জন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সনদের দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে সুপ্রিম কোট প্রাঙ্গণে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। করোনার নিষ্ঠুরতায় যেখানে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে, সেখানে তারা সংক্রমণের ঝুঁঁকি উপেক্ষা করে গেজেট প্রকাশের দাবিতে অনশন পালন করছেন। কারো পেটে খাবার নেই, কারো চোখে ঘুম নেই, কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবু তারা অনশন করে যাচ্ছেন। এর আগে জেলায় জেলায় ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ, মানববন্ধন-সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী পেশাগত জীবনকে কেন অস্তিত্বের হুমকি মনে করছেন? এ বিষয়টির অনুসন্ধান করা বার কাউন্সিলের নৈতিক দায়িত্ব। ২০১২ সালের আগে যেখানে গড়ে আট মাসে একটি পরীক্ষা সম্পন্ন হতো, এখন সেখানে তিন বছরেও একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কিন্তু কেন হচ্ছে না, এ ব্যাপারে বার কাউন্সিলের কোনো ব্যাখ্যা নেই। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো কারণে একবার কেউ ফেল করলে পরবর্তীতে পরীক্ষা দিতে পাঁচ-ছয় বছর লেগে যাচ্ছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এমসিকিউ, রিটেন ও ভাইবা পরীক্ষার পর এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৮ থেকে ২০ মাস সময় লেগেছে। এখন সেখানে ৩০ মাস সময় লাগবে। কারণ এখন তো আর দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না। অর্থাৎ একটা পরীক্ষা প্রক্রিয়ার সময়কাল হচ্ছে পাঁচ-ছয় বছর। এ ধরনের কালক্ষেপণ পরীক্ষা পদ্ধতির অবসান কাম্য।
বাংলাদেশে প্রায় সব পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হয়ে থাকে। অথচ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্তি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মামলাজটের মতো পরীক্ষার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। বার কাউন্সিলের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ রয়েছে যে, এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের রিটেন পরীক্ষায় খাতা রদবদল হয়ে যায়। এতে অনেক মেধাবীও ফেল করে। রিটেন পরীক্ষার খাতা বদল হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ওএমআর পদ্ধতি ফলো না করা। বার কাউন্সিলের উচিত রিটেন পরীক্ষায় ওএমআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন করা। কবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করলে গেজেট করে সনদের দাবির বিষয়টি উত্থাপিত হতো না। করোনার কারণেই মূলত তারা রিটেন ও ভাইবা থেকে মুক্তি চাচ্ছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এসসিকিউ পরীক্ষায় ৬০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও উত্তীর্ণ হন আট হাজার ৭০০ জন। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে রিটেন পরীক্ষা অনিশ্চিত হওয়ায় এমসিকিউ উত্তীর্ণরা মানবিক বিবেচনায় সনদের দাবি করছেন। বার কাউন্সিল মানবিক বিবেচনায় এমসিকিউ উত্তীর্ণদের রিটেন ও ভাইবা পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দিতে পারে। এমনকি বার কাউন্সিল ইচ্ছা করলে তাদের প্রস্তাবটি রেজ্যুলেশন আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে অনুমোদন নিয়ে আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করতে পারে। এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশদের করুণ আর্তনাদ বার কাউন্সিল ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের বিবেক ও মানবতাবোধকে জাগ্রত করবে, এমনটিই শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রত্যাশা।হ

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল