২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈদের আগে গোরু সমস্যা!

-

বাংলা একাডেমি অনেক আগে পরিবর্তিত কিছু বানানকে বর্তমান সংস্করণে হালনাগাদ করেছে। এই হালনাগাদকৃত শব্দগুলোর সঠিক সংখ্যা ঠিক কত তা আমাদের জানা নেই। একটা শব্দ খুব করে জেনে গেলাম, গোরু! কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে দেখলাম, কিভাবে যেন সেসব শব্দভাণ্ডার থেকে রোজার ঈদের শেষে, কোরবানির ঈদের আগে এসে ছোট গরু ও বড় গোরু নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের অবস্থা কী! হয়তো, পক্ষে-বিপক্ষে দু-একটা স্ট্যাটাস দিয়ে শেষ করছি। কেউ কেউ বাংলা একাডেমির কর্তাদের জাত উদ্ধার করতেও বাকি রাখছি না। কেউ কেউ বলেছেন, বাংলা ভাষার নিয়মকানুন এসব বাংলা একাডেমির কাজ, আমাদের নয়। এ যাত্রায় এ কথা দিয়ে বাঁচা গেল। আসল কথা ভিন্ন!
প্রকৃত সত্য এই, বাংলা একাডেমি, বাংলা ভাষা ও বানানের প্রমিত নিয়ম এবং ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ধারণা অত্যন্ত নড়বড়ে। ফলে আমরা ধরি মাছ না-ছুঁই পানি এ-জাতীয় মন্তব্য করে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। বাস্তবতা ছিল, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে যেমন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করেছি, তদ্রƒপ সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা সেই, যা আছে তা নিয়ে সুখী। যে যখন যেভাবে পারছি নিজের প্রচার প্রসার করে যাচ্ছি। বাংলা একাডেমির কর্তাব্যক্তিরাও এর বাইরে নন। আমরা জানি, ঈদ ও গরু আমাদের কাছে অতি পরিচিত ও চাষাভুষার শব্দ। অর্থাৎ একজন প্রান্তিক কৃষক ও দিনমজুরের মতো এসব শব্দ আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই পরিবর্তন নিয়ে কথা উঠছে, কতকালের পুরনো শব্দ, পরিবর্তন না করলেই বা ক্ষতি কী? বাংলা একাডেমি এত দিন কী করেছে? এসব প্রশ্ন উঠেছে। যাই হোক, গরু কিংবা গোরু বানান নিয়ে আমরা ঠিক-বেঠিকের দিকে যাচ্ছি না। বাংলা ভাষার বানান ও উচ্চারণের সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে দুটো কথা বলেই শেষ করছি। আমাদের বানান ভুলের অন্যতম কারণ, আমরা বানানবিধি কিংবা ভাষার ব্যাকরণ নিয়ে পড়াশোনা করলেও বাচিকতা কিংবা উচ্চারণবিধি নিয়ে তেমন একটা পড়াশোনা করি না। আমাদের বানান বিভ্রাটের অন্যতম কারণ শব্দের বানান ও উচ্চারণের ভিন্নতা। যেমন আমরা লিখি আত্মা (আ+ত+ম+আ), অথচ পড়ি, আত্তা (আ+ত+ত+আ), বিশ্ব (ব+ই+শ+ব) কিন্তু পড়ি, (ব+ই+শ+শ) প্রভৃতি। আমাদের বাংলা ভাষায় একাধিক বর্ণের উচ্চারণ ধ্বনি এক, আবার একই বর্ণের রয়েছে একাধিক উচ্চারণ। যেমন শ, ষ, স এই তিনটি বর্ণের উচ্চারণ আমাদের কাছে, শ অন্য দিকে অ, এ এসব বর্ণের দুটো করে উচ্চারণ রয়েছে।
হ্যাঁ, বানান কিংবা উচ্চারণের এত এত সমস্যা হয়তো এক দিনে এক বছরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। তবে সবার সদিচ্ছা থাকলে এক যুগে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তার জন্য আমাদের শুধু একটা কাজ করতে হবে। এক. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবাইকে সর্বত্র সতর্কতার সাথে ভাষার ব্যবহার করতে হবে। দুই. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা শিক্ষকদের ভাষার বানান ও উচ্চারণ বিধিমালার ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যথেষ্ট যোগ্য করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে হবে। হ
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement