২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলা একাডেমির আধুনিকায়ন

-

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। এখানে বিভিন্ন রকমের অভিধান প্রকাশ ছাড়াও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা হয়ে থাকে। বাংলা একাডেমিতে বাংলা ভাষা নিয়ে যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, তেমনি কোনো শব্দ বা বানান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এখান থেকেই আসে। মূলত বাংলা ভাষার গবেষণা বা নতুন কিছুর অনুমোদন এখান থেকেই হয়ে থাকে। আর অন্য যে কাজটি করে বাংলা একাডেমি তা হলো অভিধানে নতুন শব্দ যোগ করা। বাংলা একাডেমি যখন নতুন কোনো শব্দ অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করে, তখন তারা তাদের সম্পাদক পর্ষদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে বানান ও অন্যান্য জিনিস পরিবর্তন করে থাকে। বাংলা একাডেমির তথ্য মতে, এভাবে গত এক দশকে প্রায় দুই হাজার শব্দ অভিধানে যোগ করা হয়েছে। এখান থেকেই মূল সমস্যার সূত্রপাত। বাংলা একাডেমি নতুন শব্দ যোগ করে কিংবা পুরনো শব্দের নতুন বানান যোগ করে। কিন্তু কোনো প্রকার সংবাদমাধ্যমে সংবাদ পাওয়া যায় না। চুপিসারে গবেষণার কাজ করে চুপিসারেই সেটা অভিধানে দিয়ে দেয়া হয়। ফলে নতুন গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে না। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে যে বানান ভুল হচ্ছে সেই সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান থাকে না। অবশ্য বাংলা অভিধান পড়ার ক্ষেত্রে আমরা একটুও সময় দিতে আগ্রহী নই। এ রকম অভিধানবিমুখতা আমাদের নিয়ে গিয়েছে শুদ্ধ বাংলা চর্চা থেকে বহু দূরে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত যে শব্দটি সেটি ‘গোরু’। সংস্কৃত ‘গোরূপ’ থেকে পর্যায়ক্রমে ‘গরু’ শব্দটি (গোরূপ > গোরুপ > গোরু > গরু) বাংলায় এসেছে। বাংলা একাডেমির জামিল চৌধুরী সম্পাদিত আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘গরু’ বানানভুক্তিটি নেই।
‘গোরু’ বানানের পক্ষের লোকজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় ‘গোরু’ ব্যবহারকে উদাহরণ হিসেবে আনেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ‘গরু’ ও ‘গোরু’ দুটোই ব্যবহার করেছেন তার লেখায়। ‘গরু’ না ‘গোরু’ এ সমস্যা নিরসনে বাংলা একাডেমি নিজস্ব ওয়েবসাইটে বানান-বিষয়ক চলমান বিতর্ক নিরসনে বাংলা একাডেমির ভাষ্য শিরোনামের ওই নোটিশে বলা হয়েছে : বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান প্রথম প্রকাশিত হয় ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে। প্রকাশের পর থেকেই একটি অভিধান পুরনো হয়ে যায় এবং তখন থেকেই শুরু হয় এর পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় অভিধানটির প্রথম পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় এপ্রিল ২০১৬ সালে। বর্তমানেও অভিধানটির সংস্করণের কাজ চলমান আছে। এ কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু ভুলত্রুটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাংলা একাডেমির নোটিশটি প্রকাশ করা হয়েছে কি না, এ রকম প্রশ্নে একাডেমির পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী (জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ) বলেছেন, ‘ফেসবুকে বাংলা একাডেমির কোনো পেজ নেই’। বাংলা একাডেমি সামনে হয়তো নিজেদের ভুলগুলো ঠিক করবে কিংবা মানুষের মনে যেসব বানান নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর ব্যাখ্যা দেবে। কিন্তু এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে না। বর্তমান সময় মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে। বড় বড় প্রায় কোম্পানি থেকে শুরু করে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানেরও ফেসবুক পেজ বা মানুষের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম থাকে কিন্তু বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইট ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো মাধ্যম নেই।
সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশের মানুষেরও হচ্ছে। কবিতা আগে খাতায় লেখা হলেও এখন ডিভাইসের কি বোর্ডেও লেখা যায়। মানুষের রুচির আমূল পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপখাওয়াতে একাডেমিকেও বদলাতে হবে।
বাংলা একাডেমিকেও মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণা করে বানানে পরিবর্তন এনে থাকে যেটা সংবাদেও আসে না। এর ফলে নিয়ম বা বানান পরিবর্তনের ফলে যে ভুল হচ্ছে সেটি ভুল হিসেবে গণনা করা হলেও কেন ভুল হচ্ছে বা কিভাবে লিখবে এটি, নতুন নিয়ম কী এই সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ধারণা পায় না। ফলে এত এত গবেষণার কোনো ফল পাওয়া যায় না। ভুল ভুলই থেকে যায়। এখন সবার হাতে আধুনিক ফোন রয়েছে। বাংলা একাডেমির উচিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলা অভিধানের অ্যাপস বানানোতে মনোযোগ দেয়া। জনগণ যখন ইচ্ছা তখন আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তার সীমিত জ্ঞান বাড়াতে পারবে। বাংলা ভাষাকে ভুল বানানে জর্জরিত হওয়া থেকে বাঁচাতে এবং আমাদের হাত খুলে লিখতে কিংবা প্রাণ খুলে বলতে বাংলা একাডেমিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। যদি বাংলা একাডেমির আধুনিকায়ন হয় তা হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আরো একধাপ আগাবে বর্তমান বাংলাদেশ। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে, শুদ্ধ বানান হোক নতুন বাংলাদেশের পথচলা।হইকবাল হাসান


আরো সংবাদ



premium cement