২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জিপিএ ৫ পাওয়া জরুরি নয়

-

পৃথিবীর মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিভোর। নিত্যনতুন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করছে তারা। ডিজিটাল বাংলাদেশে সব কিছু সহজ হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এবং মানুষ নতুন নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। প্রতি বছর স্কুল-কলেজ থেকে ছাত্রছাত্রীরা ‘গোল্ডেন প্লাস’ পাচ্ছে। এর পাশাপাশি অনেকেই অকৃতকার্য ও হচ্ছে।
আমাদের দেশের অভিভাবকরা মনে করেন, তাদের সন্তানকে জিপিএ ৫ পেতেই হবে; অন্যথায় সে দেশ ও দশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সফলতা অর্জনের জন্য আসলে কি জিপিএ ৫ পাওয়া খুবই প্রয়োজন? আমরা বলব, না। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বেশির ভাগ লোক জিপিএ ৫ না পেয়েও সফল হয়েছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথাই বলা যাক, যিনি ছোটবেলা থেকে ‘দুখুমিয়া’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে তার দুঃখের শেষ ছিল না। পড়াশোনা দূরে থাক জীবিকার তাগিদে তিনি চায়ের দোকানে রুটিও বানিয়েছেন। কারণ তার পড়াশোনা করার মতো টাকা-পয়সা ছিল না। বিদ্যালয় কী জিনিস, চোখে দেখেননি। কিন্তু তিনি আজ আমাদের মাঝে বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত। কারণ তিনি ‘ব্যর্থ’ হয়ে থেমে যাননি। তিনি নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে কখনো গান কখনো কবিতা কখনো গল্পে নিজের মতো করে নিজের ভাব প্রকাশ করেছেন, যা অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও করতে পারেননি।
অন্য দিকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো: আবদুুল হামিদের কথাই বলা যাক। তিনি ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন এবং পাশাপাশি পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি পড়াশোনা ভালোভাবে করতেন না বলে অনেকবার ফেলও করেছেন। কিন্তু তিনি হার মানেননি, কখনো নকলও করেননি। তিনি বারবার পরীক্ষা দিয়ে গেছেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন শেষ পর্যন্ত।
দেশে প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী কলেজ অথবা ভার্সিটিতে ওঠার পর ভালো পরিবেশের অভাবে তাদের মেধাকে হারিয়ে ফেলে ‘নষ্টদের দখলে’ চলে যায়। অন্য দিকে, অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা জিপিএ ৫ না পেয়েও সফলতা শিখরে পৌঁছেছে।
শুধু জিপিএ ৫ পেলে যে শিক্ষিত হয়ে উঠবে, তা কিন্তু নয়। কারণ একটু লক্ষ করলে দেখা যায়, শিক্ষিত মানুষের মা-বাবারাই বেশি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। এর উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছেÑ আমাদের নৈতিক শিক্ষার অভাব। শিক্ষিত মানুষ মাত্রই স্বশিক্ষিত নয়; সুশিক্ষিত মানুষ হতে হলে অবশ্যই নিজেকে নৈতিকতাসম্পন্ন, প্রকৃত স্বশিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; তা হলেই সফলতা ধরা দেবে।
গত ৩১ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ছিল ৮২.৩ শতাংশ। এতে অনেক ছাত্রছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়Ñ যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আটজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর পেছনে কারণ কী? অনেক কারণ থাকতে পারে; তার মধ্যে আত্মহত্যা করার পেছনে রয়েছে অভিভাবকের মানসিক চাপ, যা তারা সহ্য করতে পারেনি। সব ছাত্রছাত্রী চায় জিপিএ ৫ অথবা ভালো রেজাল্টসহ পাস করতে। কিন্তু অভিভাবকরা সেটি বোঝেন না। অভিভাবকরা দিন দিন মানসিক চাপে রেখে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
অভিভাবকরা বিভিন্নভাবে ছেলেমেয়েদের মানসিক চাপ দিয়ে থাকেন যেমনÑ জিপিএ ৫ না পেলে পড়াশোনা করাবেন না, মেয়ের বেলায় তাকে বিয়ে দিয়ে দেবেন, ছেলের বেলায় ওকে বাসা থেকে বের করে দেবেন প্রভৃতি। আমাদের অভিভাবকদের হতে হবে শিষ্টাচার, ন্যায়পরায়ণ ও নৈতিক গুণসম্পন্ন। ছাত্রছাত্রীরা ফেল কিংবা রেজাল্ট একটু খারাপ হতে পারে। এটি নিয়ে মানসিক চাপ না দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ভালো রেজাল্ট করতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকলে রেজাল্ট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যেসব শিক্ষার্থী একটু ব্যর্থ হলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বা নেয়ার চিন্তা করে, তাদের উদ্দেশ্যে বলবÑ ‘ব্যর্থতাই সফলতার মূল চাবিকাঠি’। কোনো কিছুতে সফল না হওয়া মানে, পরাজিত হওয়া নয়। বরং সেখান থেকে উঠে এসে নিজেকে সাফল্যের দ্বারে পৌঁছানোর জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়ার নাম হচ্ছে ‘জীবন’ আর এটাই সফলতা। মনে রাখতে হবে, পরিশ্রম করলে সেটা কখনো বৃথা যায় না, আজ না হয় কাল পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে পারবে। তাই বলব, ডিপ্রেশনে না গিয়ে নিজের কথা ভেবে, পরিবারের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে আত্মহত্যা নামক জঘন্যতম কাজের দিকে নিজেকে ঠেলে দেবে না।
তাই আসুন, দেশের জন্য, দশের জন্য ছেলেমেয়ে জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য মানসিক নির্যাতন না করে, নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন স্বশিক্ষিতভাবে তাদের গড়ে তুলুন। তা হলে ছেলেমেয়েগুলো নিজের পরিবারের আর নিজের দেশের জন্য ও বিশ্বের জন্য সফলভাবে কাজ করে যাবে এবং নিজেকে একজন আদর্শিকভাবে সফল মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে। হ
শিক্ষার্থী : বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
amin386442@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত

সকল