১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সামাজিক অবক্ষয়ে পর্নোগ্রাফি

-

পাশ্চাত্যে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের চিত্তবিনোদন’ বা মনোরঞ্জনের কথা বলে সর্বপ্রথম পর্নো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা হয়। পরে তা দেশে দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। সমাজে ভয়াবহ কুপ্রভাব পড়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী পর্নোগ্রাফির বিপুল চাহিদা তৈরির পাশাপাশি পর্নোবাণিজ্য সম্প্রসারণে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কার্যকারিতা গড়ে তোলা হয়েছে। পর্নোগ্রাফি আয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা হয় পর্নোগ্রাফি বিজনেস থেকে। বিশ্ববাজার থেকে পর্নোগ্রাফি ফিল্মের মাধ্যমে এ শিল্পে লগ্নিকারীরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে। সারা বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে তিন হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় আড়াই লাখ টাকারও বেশি পর্নোগ্রাফির পেছনে ব্যয় হচ্ছে। এ থেকে সহজে বোঝা যায়, পর্নো ইন্ডাস্ট্রি বিশ্ব অর্থনীতিতে দিন দিন কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। পর্নোশিল্পের সাথে জড়িতরা ২০০৫ সালে চীনে ২৭.৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যদিও পর্নোগ্রাফির উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপণন চীনে আইনত নিষিদ্ধ। ২০১৮ সালে পর্নোগ্রাফির সাথে জড়িতরা দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫.৭৩ মিলিয়ন ডলার, জাপানে ১৯.৯৪ মিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৩.৩৩ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
শিল্পের নামে বিজ্ঞাপনচিত্রে নারীকে দৃষ্টিকটুভাবেও উপস্থাপন করে সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী যেন একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এভাবে নানামুখী তৎপরতা ও মিথস্ক্রিয়ার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী কিছুটা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হলেও পাশ্চাত্যের সমাজব্যবস্থাসহ বিশ্বব্যাপী নারী এক ভয়াবহ সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। নারী-নির্যাতন, শিশুহত্যা, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ, বিয়ে বিচ্ছেদ, লিভটুগেদার, মাদকাসক্তি, কুমারী-মাতৃত্ব ইত্যাদি সমস্যা পাশ্চাত্য সমাজে ক্রমেই মাত্রাতিরিক্ত ছড়াচ্ছে। একই সাথে পর্নোশিল্প শিশু, নারী-পুরুষ ও সমাজে বিষাক্ত দূষণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিশু পর্নোগ্রাফি কোমলমতি শিশুদের সুন্দর মনকে অজ্ঞাতসারে বিষিয়ে তুলছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবে ধর্ষণ, যৌন অপরাধ এবং নারী-পুরুষের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেটের বদৌলতে পর্নোগ্রাফি ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে; বলা চলে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইন্টারনেটে পর্নো ভিডিও ও স্থির ছবি আপলোড এবং ডাউনলোড, রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে পর্নো সিডি বিক্রি, পত্রিকার দোকানে পর্নো ম্যাগাজিন বিক্রি এবং মোবাইলের মাধ্যমে সমাজে তা ছড়িয়ে পড়ায় পর্নোগ্রাফি এখন আমাদের দেশেও খুব সহজলভ্য। ফলে উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফির কারণে বিপথগামী হচ্ছে।
আমাদের দেশে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি বেড়ে গেছে। পর্নো ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে একাধিক সঙ্ঘবদ্ধ চক্র নানা ধরনের সাইবার ক্রাইম করছে। পর্নোগ্রাফি রোধে সুনির্দিষ্ট আইনের অবর্তমানে পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ বা দমন করা যায়নি এবং এর জন্য শাস্তিও দেয়া যায়নি। তবে নতুন প্রবর্তিত পর্নোগ্রাফি আইনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে হাইকোর্টের নীতিমালা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্নোগ্রাফি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চাইলেই ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি রোধ করতে পারে। সাইবার ক্যাফেতে নজরদারি বৃদ্ধি এবং তাদের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি প্রচার ও প্রসার বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা উচিত। শুধু আইনই যথেষ্ট নয়; বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। আইনের প্রয়োগ করতে পারলেই কেবল পর্নোগ্রাফি ও এ সংক্রান্ত সব অনাচার দূর করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২’ শিরোনামে প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। এই আইনের মুখবন্ধে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের ফলে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে, বহুমাত্রিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। নারী, পুরুষ, শিশু ও যুবসমাজকে সামাজিকভাবে সুরক্ষা দেয়ার বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আইনটি প্রণয়নের প্রাসঙ্গিকতা হিসেবে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১’ শিরোনামে ২৯ জানুয়ারি ২০১২ সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২’ হিসেবে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনটি নতুন হওয়ায় এর অপপ্রয়োগের আশঙ্কাও থেকে যায়। অবশ্য এ আইনে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দিলেও তা প্রমাণ হলে তার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনের সুযোগ নিয়ে কোনোভাবেই তা যেন কারো ওপর অপপ্রয়োগ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা অপরিহার্য। আইনটি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। কমিটিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, মানবাধিকার কর্মী ও স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। হ


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল