২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ন্যায়বিচার পাওয়ার বদলে কারাগারে যেতে হলো সোহেলকে

মিজানুর রহমান সোহেল - ছবি সংগৃহীত

পেশায় তিনি সাংবাদিক। প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ইনচার্জ। সেই তিনিই বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। ন্যায়বিচার পাওয়ার বদলে তাকেই এখন কারাগারে যেতে হয়েছে। তার নাম মিজানুর রহমান সোহেল।

সম্প্রতি টোয়েন্টিফোর টিকিট-কেলেঙ্কারির জের ধরে তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। অথচ ওই কোম্পানির সাথে জড়িত হওয়ার কারণে তিনি পুঁজি পর্যন্ত খুইয়েছেন। যারা প্রতারণা করেছেন, সেই ব্যবসায়িক অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত তিনি করেছেন। অথচ কোনো প্রতিকার তিনি পাননি।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সোহেল প্রতারণার সাথে জড়িত থাকলে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারতেন। তার ভিসা ছিল। কিন্তু তিনি যাননি। এমনকি আত্মগোপনেও চলে যেতে পারতেন। সেটাও তিনি করেননি। এতেই বোঝা যায়, তিনি ছিলেন নির্দোষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টোয়েন্টিফোর টিকিট-কেলেঙ্কারিতে মিজানুর রহমান কোম্পানিটি থেকে কোনো টাকা নেননি। কাগজে কলমে কোম্পানিটির ডিরেক্টর হলেও কোনোরকম আর্থিক লেনদেন কিংবা কোম্পানি পরিচালনায় মিজানুর রহমান সোহেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো গ্রাহকের সাথে আর্থিক লেনদেনও করেননি। কোনো গ্রাহকও তাকে চিনতেন না। কোম্পানি থেকেও তিনি কোনো বেতন-ভাতা কিংবা সম্মানি নেননি। কোম্পানির অ্যাকাউন্ট থেকেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।

এসব তথ্য জানিয়ে তাকে নির্দোষ দাবি করে মুক্তি চেয়েছেন স্ত্রী সুমাইয়া সিমা। সিমা জানান, গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে মিজানুর রহমান সোহেল খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক ও তার বোন চেয়ারম্যান মোসা. নাসরিন সুলতানা কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ সময়ে মিজানুর রহমান সব পরিচালককে সিসিতে রেখে অফিসের হিসাব চেয়ে দুই দফায় এমডিকে মেইল করেন। ফোনেও নানান সময়ে অফিসের হিসাব দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কিছু দিন পরই কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যান লাপাত্তা হয়ে যান। ফলে মিজানুর রহমান তার বিনিয়োগ করা অর্থও (পুঁজি) হারিয়েছেন।

প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছেন, এটা বুঝতে পেরে মিজানুর রহমান এ সময় তাদের উকিল নোটিশ পাঠান। তবে কোনো প্রত্যুত্তর পাননি। গ্রাহক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলার আগেই গত ১৯ মে মিজানুর রহমান কোম্পানির এমডি আবদুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যান মোসা. নাসরিন সুলতানা ও পরিচালক আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় জিডি করেন।

পরবর্তীতে গত ১ জুন সিএমএম আদালতে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ওই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিজানুর রহমান। মামলাটি এখন পিবিআইতে (কল্যাণপুর ব্রাঞ্চে) তদন্তাধীন রয়েছে। মূলত মিজানুর রহমান সোহেলের মামলার পর টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের গ্রাহক ও সিআইডি মামলা করেন।

মিজানুর রহমানের করা মামলার বিষয়ে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পিবিআইয়ে থাকা সোহেলের মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিষয়গুলো তদন্ত কর্মকর্তা খতিয়ে দেখছেন।

নির্দোষ স্বামী সোহেলের মুক্তি দাবি করে সুমাইয়া সিমা বলেন, টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের প্রতারক এমডি ও চেয়ারম্যানের খপ্পরে পড়ে কোম্পানির কোনোরকম আর্থিক লেনদেনে জড়িত না থাকলেও এখন কারাগারে রয়েছেন সোহেল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির তথ্য ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর নগদ অর্থ উত্তোলন করা হতো।

এমডি তার ব্যাংক লোন, গাড়ির কিস্তি অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে দিয়েছেন। পরিচালকদের অনুমোদন না থাকলেও এমডি প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে মাসিক সম্মানি নিয়েছেন। নিজের নামে একাধিক ব্যাংক এফডিআরও করেছেন। অফিসের যৌক্তিক কোনো হিসাব এমডি বা অফিস সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই নেই।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এমডি রাজ্জাক পাঁচজনের যৌথ কোম্পানি টোয়েন্টিফোর টিকিটের টাকা তার ব্যক্তিগত কোম্পানি বিডি ট্যুরিস্ট ডিএমসির মাধ্যমে লেনদেন করতেন। অবৈধভাবে নিজের ও বিডি ট্যুরিস্ট ডিএমসির নামে একাধিক ব্যাংক ডিপিএস করেছিলেন। বিডি ট্যুরিস্টের নামে যত লোন ছিল এবং বিডি ট্যুরিস্টের অফিস ও স্টাফ চালানো হতো টোয়েন্টিফোর টিকিটের টাকা দিয়ে। অ্যাভন নামে একটি আইটি ফার্ম করেছিলেন, সেটির টাকাও টোয়েন্টিফোর টিকিট থেকে নিতেন। ইভ্যালিতে তার বড় একটা বিনিয়োগ ছিল, ওই টাকাও টোয়েন্টিফোর টিকিট থেকে নেয়া। কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য বাইক সার্ভিস দেয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।

গত ১১ অক্টোবর সকালে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমানের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনলাইন এজেন্সি টোয়েন্টিফর টিকিট ডটকম। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের পরিচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

টোয়েন্টিফোর টিকিটকাণ্ডে মিজানুর রহমান সোহেলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই সাগর আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি কোম্পানির মালিকদের একজন। যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটি তদন্তাধীন। তার সংশ্লিষ্টতা কতটা, সেটি এখনই বলা সম্ভব না, তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে। মামলা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া

সকল