২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আড়াই বছর ধরে ঢামেক মর্গে এক মার্কিন নাগরিকের লাশ

আড়াই বছর ধরে ঢামেক মর্গে এক মার্কিন নাগরিকের লাশ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রায় আড়াই বছর ধরে পড়ে আছে এক মার্কিন নাগরিকের লাশ। ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম রবার্ট মাইরন বার্কার।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে জানা গেছে। পাসপোর্টে তিনি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি ঠিকানা দিয়েছেন।

এতো বছর ধরে লাশটি মর্গে পরে থাকলেও এখন পর্যন্ত এর সৎকারের বা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানোর কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

ঢাকার দক্ষিণ-খান থানা এলাকার বাসিন্দা এবং বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী মাজেদা খাতুন নিজেকে রবার্টের স্ত্রী দাবি করে বলেছেন, তার স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার লাশ যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে বারবার চেষ্টা করলেও কোন সাড়া পাননি।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রবার্টের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান।

রবার্ট পেশায় একজন বিদেশি উন্নয়নকর্মী হলেও তিনি কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতেন সেটা জানা যায়নি। তিনি মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফান্ড আনতেন এবং এখানকার গরিব মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন বলে জানান খাতুন।

শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ২০১৮ সালের ১৫ই মে দক্ষিণ-খানের কেসি হাসপাতালে ভর্তি হন রবার্ট। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ দিন পর তিনি মারা যান। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তার লাশ এই দেশে সৎকার করা যাচ্ছিল না। এজন্য দূতাবাসের ছাড়পত্র প্রয়োজন, যেটা পাওয়া যাচ্ছিল না। তাছাড়া হাসপাতালের বিল দিতে না পারায় লাশ ছাড়িয়ে আনতে ঝামেলা পোহাতে হয় মিসেস খাতুনকে।

পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে তারা লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে পাঠায়। লাশটি যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে দক্ষিণ-খান থানায় সাধারণ ডায়রিও করা হয়।

এরপর থেকে আড়াই বছর ধরে মর্গে পড়ে রয়েছে রবার্টের লাশ। এরমধ্যে কেউ কোনো খোঁজ নিতেও আসেনি বলে জানায় হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগ।

ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ, এই লাশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর বিষয়ে থানায় লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন।

কারণ দূতাবাসে লাশ হস্তান্তর পুলিশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

খাতুনও চান মার্কিন দূতাবাস এই লাশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বা সৎকারের দায়িত্ব নিক। স্ত্রী হিসেবে তার কোনো স্বাক্ষর বা কাগজপত্র দেয়ার প্রয়োজন পড়লে তিনি সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি অনেকবার দূতাবাসে গিয়ে সব ঘটনা বলেছি। তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। পরে তারা আমার কাছে রবার্টের পাসপোর্ট চায়। আমি সেটা দেই। এখন তারাই ব্যবস্থা নিক।’

রবার্টের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংবাদ তার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারকে জানানো হলেও কেউ ফিরতি কোনো যোগাযোগ করেনি, দূতাবাসে যোগাযোগ করলেও কেউ খোঁজ নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিয়ের রেজিস্ট্রিতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১লা এপ্রিল খ্রিষ্টান ধর্মমতে ঢাকার বাড্ডার একটি গির্জায় রবার্টের সাথে মাজেদা খাতুনের বিয়ে হয়। এরপর মাজেদা খাতুন তার আগের সংসারের সন্তানদের সাথে রবার্টকে নিয়ে ঢাকার একটি বাসায় থাকতেন।

সংসার খরচ চালানোর পাশাপাশি মিসেস খাতুনকে হাত খরচ দিতেন রবার্ট।

বিয়ের কয়েক বছর আগে মাজেদা খাতুন উত্তরার যে বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন সেখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন রবার্ট। মাজেদা খাতুন তখন তার দেখাশোনা করতেন। সেই থেকেই তাদের পরিচয়। এক পর্যায়ে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

বিয়ের সময় মিসেস খাতুন খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হলেও রবার্টের মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন।

এদিকে, রবার্টের যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতুন। ছেলে মেয়েদের সাথে রবার্ট নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘রবার্ট অসুস্থ থাকার সময় আমেরিকায় তার ছেলেমেয়েকে ফোন করে জানিয়েছিল। তারা তখন বলল আপনি ট্রিটমেন্ট করেন। মারা যাওয়ার পর যোগাযোগ করে কাউকে পাই নাই।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement