২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুমন বেপারীর ‘পালিয়ে যাওয়া’ নিয়ে রহস্য, ‘নিষেধাজ্ঞা’ কথা বলায়

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন সুমন বেপারী - ছবি : সংগৃহীত

সদরঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গায় সম্প্রতি মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে ‘অলৌকিকভাবে’ বেঁচে যাওয়া সুমন বেপারীকে শনিবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের ভিন্ন অংশে পাওয়া গেছে। তিনি হাসপাতাল থেকে বুধবার পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।

তবে হাসপাতালে সুমনের সাথে থাকা তার ভাতিজা ফয়সাল আহমেদ শাকিব পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে দাবি করেন যে, তারা শুধুমাত্র ওই হাসপাতালের ভবন পরিবর্তন করেছেন।

এদিকে টঙ্গীবাড়ী উপজেলাধীন মুন্সিগঞ্জের আবদুল্লাপুর ইউনিয়নে সুমনের বাড়ির ঠিকানায় গিয়ে সামনে এসেছে একদমই ভিন্ন এক চিত্র।

সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বেপারী এবং সুমনের বড় ভাই শাহজাহানসহ অন্যান্য স্থানীয়রা বলছেন, সুমন সত্যিই বুধবার গ্রামে ফিরেছিলেন এবং বৃহস্পতিবার সারাদিনই সে সেখানে কাটিয়েছেন। তবে পরের দিন ‘ঢাকা থেকে এক জরুরি ফোন কল’ পেয়ে তিনি ফিরে গিয়ে শুক্রবার রাতে পুনরায় মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হন।

সুমনকে কে কল করেছিলেন সেটি জানা না গেলেও, এটি ‘উচ্চমহল’ থেকে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুমনকে কলদাতা মিটফোর্ডেও প্রভাব প্রয়োগ করতে পারে বলে প্রতীয়মান। শনিবার ইউএনবির কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা হাসপাতালে গেলে তাকে জানানো হয় যে, সাংবাদিকদের সাথে সুমনের কথা বলার বিষয়টি সীমিত করা হয়েছে।

ইউএনবি’র এই সংবাদদাতা সুমনের সাথে দেখা করার চেষ্টা করলে তাকে ডা. ইসহাক মজুমদার বলেন, ‘কোনো মিডিয়ার মানুষ এখন সুমনের সাথে দেখা করতে পারবে না। কোনো চিকিৎসকও সুমনের অবস্থার বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না।’

এই নির্দেশাবলী খুব সম্প্রতি ‘উচ্চমহল’ থেকে দেয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন ডা. মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে সুমনের সাথে দেখা করার বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের লোকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চিকিৎসক হিসেবে, আমাদেরও এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’

তবে ইউএনবি সুমনের ভাতিজা ফয়সাল আহমেদ শাকিবের সাথে ফোনে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, তার চাচা কখনোই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাননি।

শাকিব বলেন, ‘আমরা পুরো সময়ই হাসপাতালে ছিলাম, তবে এখানকার দুই নম্বর বিল্ডিং থেকে তিন নম্বর বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত হয়েছি।’

যদিও মুন্সিগঞ্জের আবদুল্লাপুরে সুমনের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দাবি করেছেন যে, বুধবার সুমন বাড়ি গিয়েছিলেন।

তাদের মধ্যে একজন আবদুল্লাহপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বেপারি বলেন, ‘সুমন কীভাবে ১৩ ঘণ্টা পানির নিচে বেঁচে ছিল, সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালো জানেন।’

তিনি জোর দিয়েই বলেন যে, বুধবার রাতে সুমন বাড়িতে ছিল। কিন্তু ফিরে গিয়ে শুক্রবার আবারও হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘পুরো বিষয়টি একটি রহস্য। ১৩ ঘণ্টা পানির নিচে থাকার কোনো লক্ষণ সুমনের মধ্যে ছিল না।’

আবদুল্লাহপুরের উত্তর পাইকপাড়ার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা আবু বকর মৃধা ইউএনবিকে বলেন, ‘সুমন বৃহস্পতিবার বাজারে এসেছিল এবং এখানে সবার সাথে কথা বলেছে।’

এদিকে রাজধানীতে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন এবং সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম ভূঁইয়া দু’জনই লঞ্চ দুর্ঘটনায় উদ্ধার নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে এবং এর সাথে তারা জড়িত বলে অনেকের সন্দেহের বিষয়ে গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তারা বলেন, সুমন কীভাবে পানির নিচে ১৩ ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন এ বিষয়ে তিনি নিজেই আরো ভালো বলতে পারবেন।

এর আগে গত ৩০ জুন (বৃহস্পতিবার রাতে) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার সৈয়দ কামরুল হাসান দাবি করেন, ‘মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানার অন্তর্গত আবদুল্লাপুর এলাকার সুমন বেপারীকে (৫৫) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’

তখন থেকেই সুমন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শুক্রবার রাতে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সুমন বেপারীর ‘রহস্যজনক’ বেঁচে থাকার ঘটনা নিয়ে বহু বিতর্ক এবং এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার মধ্যেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’দিন আগে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য, রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে ‘ময়ূর-২’ নামক একটি লঞ্চের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ‘এমভি মর্নিং বার্ড’ লঞ্চটি বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যায়। এতে মোট ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement