২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কিস্তিতে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সুবিধা কি সরকার দেবে?

- ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল নেয়া বন্ধ থাকায় এখন মানুষজনকে একসাথে তিন চার মাসের বিল দিতে হচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করছেন মিটার না দেখে ইচ্ছামতো বিল ধরা হয়েছে।

দিন দশেক আগে বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া বিল না দিলে জরিমানা ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এরপর শিল্পখাতের নেতৃবৃন্দ কিস্তিতে বিল পরিশোধ করার সুবিধা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বকেয়া বিল নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে
ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা ও তার পরিবার একটি ভবনের মালিক। সেখানে ১০টি ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া রয়েছে। সব ধরনের বিল ভাড়ার টাকার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা।

রাজিয়া সুলতানা বলছেন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ ১০টি ফ্ল্যাটে সবমিলিয়ে বিল এসেছে ৮০ হাজার টাকার মতো।

কয়েকজন ভাড়াটিয়ার অনুরোধের পর ভাড়া কমিয়েছেন তিনি। নিচতলায় একটি ফ্ল্যাটে তিনমাস ভাড়াই পাননি।

তিনি বলছেন, "একবারে এতগুলো টাকা দেয়া একটা সমস্যা না? সরকার সুবিধা তো দিলোই না উল্টা আরো অসুবিধা করে ফেললো। একসাথে এত বিল সরকারের কারণেই জমল। এখন বলছে ৩০ তারিখের মধ্যে বিল না দিলে লাইন কাটা হবে।"

তিনি বলছেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যত বেশি ইউনিট ব্যবহৃত হবে, ইউনিট প্রতি মূল্যও বাড়তে থাকবে। এখনকার নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৫০ ইউনিট ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি দাম ৩ টাকা ৫০ পয়সা।

৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি দাম হবে ৯ টাকা ৩০ পয়সা। যদি ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহৃত হয় তাহলে ১০ টাকা ৭০ পয়সা।

রাজিয়া সুলতানা বলছেন, "মিটার না দেখে উল্টাপাল্টা বিল দিয়ে গেছে। রিডিং না দেখে আমার ইউনিট ব্যবহার বেশি দেখালে বিদ্যুতের বিলও বেশি আসবে। এই সমস্যা নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে দৌড়াদৌড়ি করলাম। তারা বলছে কিছু করতে পারবে না।"

দেরিতে বিল নেয়া সম্পর্কে এর আগে যা বলা হয়েছে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সাধারণ ছুটি শুরুর পর, সরকার ঘোষণা করেছিল যে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারের বিলম্বিত বিল পরিশোধে কোনো অতিরিক্ত জরিমানা নেয়া হবে না।

এরপর তাতে জুন মাসও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গ্রাহকরা সাধারণত বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকেন।

এসব জায়গায় গ্রাহকরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতেন পারেন সেই আশংকা থেকে দেরিতে বিল পরিশোধের এই সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই পুরো সময়ে বাসাবাড়িতে বিলের কাগজ দেয়া হয়নি। বিল জমা নেয়াও বন্ধ ছিল।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে বোরকা ও গুড়ো মশলা প্রস্তুতকারী দুটো কারখানা এবং একটি শোরুমের মালিক কামরুন নাহার। তিনি বলছেন সাধারণ ছুটি চলাকালীন তার কারখানা ও শোরুম পুরোটাই বন্ধ ছিল।

এরপরও কিভাবে এত বিদ্যুৎ বিল এলো সে নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলছেন, "সবকিছু চলার পরও সবমিলিয়ে আমার সাত আট হাজার টাকা বিল আসে। এর কমও আসে। যেখানে কোন প্রকার ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহারই করা হয়নি, আমার ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল, শোরুমের এসি, লাইট, ফ্যান কিছু চলেনি তারপরও এর থেকে বেশি বিল আসছে। এত বিল কোথা থেকে আসলো?"

যা বলছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
এরকম অভিযোগ আরও অনেকেই করছেন। একই বিল দুবার পাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে অভিযোগ বেশি উঠছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেছিলেন ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে জরিমানা করা হবে এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে।

নসরুল হামিদ বলেছেন, "এরকম সমস্যা যে হবে তা আগে আমরা বলে রেখেছিলাম। যে আমরা তিন মাস বিল নেবো না। এরপর আপনাকে বিলটা দিতে হবে। তো সেইভাবে যেন আপনারা প্রস্তুত থাকেন।"

"এখন বাসাবাড়ি থেকে বিল দিচ্ছে না, ইন্ডাস্ট্রিগুলোও বিল দিচ্ছে না। যে বিল কালেকশন হয় তা মাসে চার হাজার কোটি টাকা। এর মাত্র ১০ শতাংশ কালেকশন হয়েছে। আমি যদি বিল কালেকশন না করি তাহলে যাদের কাছ থেকে আমরা বিদ্যুৎ কিনেছি তাদের পেমেন্ট কিভাবে করবো? পাওয়ার প্ল্যান্টই বন্ধ হয়ে যাবে।"

অন্যদিকে শিল্পখাতের নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যেই ছয় মাসের কিস্তিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধের সুবিধা চেয়েছেন। ছয়মাসের পানির বিল মওকুফের অনুরোধও এসেছে। তবে এব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি সরকার। বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement