২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্ধ হয়ে আছে গণপূর্তের তিন হাজার কোটি টাকার কাজ

বন্ধ হয়ে আছে গণপূর্তের তিন হাজার কোটি টাকার কাজ - নয়া দিগন্ত

সরকারি ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্বে থাকা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদফতর প্রায় দেড় ডজন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। পুলিশ হেফাজতে থাকা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের বাস্তবায়নাধীন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। মূলত শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর তার এবং ব্যবসায়িক শরিকদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয়ায় কাজ চালু রাখার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আর এ কারণে এই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী হঠাৎ করে বেকার হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে এই নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ে তারা বেতনভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজনদের ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানটির সাথে সংশ্লিষ্টরা জি কে শামীমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে হলেও এই ক্রান্তিলগ্নে অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ দানের আবেদন জানিয়েছেন।

এ দিকে মেগা এসব প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণ ও কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারছে না গণপূর্ত অধিদফতরও। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জি কে শামীম কারাগারে থাকায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, সেটির সঙ্কুলান না হওয়া এবং যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার বিলও তারা দিতে পারছে না। শামীম ফিরে না এলে বিল দেয়াটা সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন তারা।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবন, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, এনজিও ভবন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভবন, বিজ্ঞান জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, রাজধানীর আশকোনায় র্যাবের সদর দফতর, গাজীপুরের পোড়াবাড়িতে র্যাব ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ক্যাবিনেট ভবন প্রকল্পের কাজসহ গণপূর্তের একাধিক কাজে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি।

গত সেপ্টেম্বরে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় কাজগুলো। এতে এক দিকে যেমন যথাসময় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের শঙ্কা সৃষ্টি হয়, অন্য দিকে প্রকল্পগুলোতে সরকারের বেশি অর্থব্যয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়; যে কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে গণপূর্ত অধিদফতর। বিষয়টি নিয়ে একনেক বৈঠকেও আলোচনা হয়। কিভাবে একটি কোম্পানি এতগুলো বড় প্রকল্পের কাজ পায়, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে জবাবে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শামীম সর্বনি¤œ দরপত্র দাতা হিসেবে ইজিপির মাধ্যমে কাজগুলো পেয়েছেন।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পূর্ত কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, নিয়মানুযায়ী প্রকল্পগুলো চুক্তি বাতিল করতে গেলে কমপক্ষে তিন মাস সময় লেগে যায়। আবার নতুন টেন্ডার আহ্বান করে নতুন ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করতেও আরো তিন মাস সময় লাগে। এটি করতে গেলেও স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পগুলোর কাজ ছয় থেকে সাত মাস পিছিয়ে যাবে। এ ছাড়া আগের ঠিকাদারের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনও রয়েছে। তিনি জেলে থাকায় সেই হিসাবটিও সম্পন্ন করা যাচ্ছে না; যে কারণে কোনো সিদ্ধান্তই নেয়া যাচ্ছে না।

এ দিকে কর্মচারীদের দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি দিতে এবং গণপূর্ত অধিফতরের প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জি কে শামীমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়ার আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার। গোলাম কিবরিয়া শামীমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শওকত ওসমান বলেন, শামীমের বিরুদ্ধে কোনো ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির অভিযোগ নেই। তিনি নেহায়েত একজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। তাকে যেসব মামলা দেয়া হয়েছে সেসব মামলায় কোনো দুর্নীতি প্রতীয়মান হয় না। তিনি যেসব সরকারি কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে বিল পেয়েছেন, সেই টাকা থেকে ১৬৫ কোটি টাকা এফডিআর করেছেন। তিনি কোনো মানিলন্ডারিং করেননি। তার সব টাকা বৈধ, যার সব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে। হাইকোর্ট তাকে এসব মামলায় জামিন দিয়েও তা আবার স্থগিত করেছেন। এসব মামলা জামিনযোগ্য এবং রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিকভাবে তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। আমরা আদালতে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।

শামীমের স্ত্রী শামীমা সুলতানা বলেন, জি কে বিল্ডার্সের মালিক, এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম বিশেষ শ্রেণীর ঠিকাদার। শামীমের স্ত্রী দাবি করেন, শামীম প্রতি বছর সরকারকে আয়কর দিয়ে থাকেন। তার নির্মাণাধীন যেসব প্রকল্প রয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো কাজের কোনো খারাপ অভিযোগ নেই। তার প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ১০ হাজার লোক কাজ করে। তাই এই দুর্যোগের সময়ে এই শ্রমিকগুলোর পরিবার ও তাদের বাস্তব দুর্দশা অনুধাবন করে এবং সরকারের বাকি কাজগুলো যেন সুন্দরভাবে শেষ করতে পারে সে জন্য তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, শামীমকে দ্রুত মুক্তি দেয়া হলে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পাদনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতনের ৫ নম্বর রোডের ১১৩ নম্বর রোডে শামীমের বাসায় র্যাবের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল