২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার বিভীষিকা : না খেয়ে মরতে চান না বিলকিস সোনিয়ারা

না খেয়ে মরতে চান না বিলকিস সোনিয়ারা - সংগৃহীত

গত দুই দিন খেতে পাননি বিলকিস। তার ঘরে একমুঠু চালও নেই। কারো কাছে গিয়ে সাহায্য চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন না। যেসব বাসায় কাজ করতেন করোনাভাইরাসের ভয়ে তারা কাজ থেকে বিদায় করে দিয়েছে। দিনমজুর স্বামীর কাজও বন্ধ। ঘরে এমন কোনো টাকা ছিল না যা দিয়ে পয়সাওয়ালাদের মতো বাড়তি বাজার করে ঘরে মজুদ করে রাখবেন। দুই সন্তানসহ তারা চারজন। ঘর এখন খাবার শূন্য, যা ছিল তা দুই সন্তানের মুখে তুলে দিয়ে নিজেরা প্রায় অনাহারেই কাটিয়ে দিয়েছেন। কিছু মুড়ি ছিল তাও শেষ। কি খেয়ে বেঁচে থাকবে বিলকিসের পরিবার। তার আশঙ্কা করোনা হবে কি না জানেন না, তবে তার আগেই না খেয়ে মরতে না হয় তাদের।

গতকাল মিরপুর শেওড়াপাড়া পীরেরবাগের মাঝামাঝি অলিমিয়ারটেক বউবাজার বস্তির সামনে এসব কথা বলছিলেন বিলকিস। এ সময় তার সাথে বস্তির বাসিন্দা সোনিয়া, তানজিলা, কুলসুমসহ অনেকেই ছিলেন।

বিলকিস এই এলাকার বাসাবাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ করেন। তার স্বামী রমজান আলী দিনমজুর। কখনো রাজমিস্ত্রির জোগালে। আবার কখনো দিনভিত্তিক চুক্তিতে অন্যকোনো কাজ করেন। প্রতি মাসে তাদের যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে যায়। বাড়তি টাকা রাখার সুযোগ থাকে না। তার ওপর চলতি মাসে বিলকিসকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে কয়েক দিন। কর্মস্থান থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন তিনি। বিলকিস বলেন, করোনাভাইরাস দেখা দেয়ায় তিন বাসা থেকেই কাজ বন্ধ করে তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে। কিছু টাকা ধরিয়ে আগেই বলে দিয়েছেন বাসায় আসার দরকার নেই। দেশের এই অবস্থায় বাসা তালাবদ্ধ রাখব। কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। স্বামীর কাজও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, একমুঠ চালও ঘরে নেই। কিছু মুড়ি ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। মাঝে আলু সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে চটকে খেয়েছেন। এখন আর কিছুই নেই, সবই ফুরিয়ে গেছে।

সোনিয়া বলেন, সবকিছু বন্ধ হওয়ার খবর শুনে তারা গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণ বাড়িয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ট্রেন, বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার ফিরে এসেছেন। সোনিয়াও বাসায় কাজ করতেন। তার স্বামী রিকশা চালান। দু’জনের কাজই এখন বন্ধ। স্বামী জালাল রিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রী পাওয়া যায় না। উল্টো রিকশার জমা নিজের পকেট থেকে দেয়া লাগে। তিনি বলেন, সবার দেখাদেখি ৭০০ টাকার বাজার করেছিলেন তারা। কিন্তু সব কিছুর দাম অনেক বেশি থাকায় তেমন কিছু কিনতে পারেননি। পাঁচ কেজি চাল তিন দিনে শেষ। যে আটা ছিল আজ সকালে তা শেষ। এখন কি খেয়ে বাঁচবেন সেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, তারা কতটা বিপদের মধ্যে পড়েছেন তা বোঝাতে পারছেন না। ভিক্ষা করব তার উপায় নেই। কারণ রাস্তায় কোনো মানুষ নেই, কার কাছে ভিক্ষা চাইব। বিলকিস সোনিয়াদের আকুতি- তাদের যেন না খেয়ে মরতে না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement