২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খালি হাতেই স্কুলে যেতে হবে সোমাদের

সোমা ও তামান্না - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শত শত ঘর ও আসবাবপত্রের পাশাপাশি পুড়ে গেছে শতাধিক শিক্ষার্থীর সবধরনের পড়াশোনার সামগ্রী। সোমা, তামান্না, জুই, লিলি, সোহাগদের সবার অবস্থাই এক। তারা সবাই পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী।

আজ শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সোমারা নির্বাক দৃষ্টিতে পুড়ে যাওয়া ঘরটির স্থানের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের কৈশোর আর শৈশবের সেই চঞ্চলতা এখন আর নেই। চোখে আতঙ্ক। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আর যেন কোনোকিছু যেন খুঁজে ফিরছে।

রূপনগর বস্তির পার্শ্ববর্তী এক‌টি স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোমা জানায়, তার বই-পুস্তক, আসবাব যা ছিল সবই আগু‌নে পুড়ে গেছে। কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তাকে এখন খালি হাতে স্কুলে যেতে হবে। কথা বলতে বলতে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হ‌য়ে উ‌ঠে। পরে একসময় তার কথা বলাই বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় সামনে থেকে সরে গিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সোমা আর কোনো কথাই বলতে পারেনি।

অপর একজন শিক্ষার্থী তামান্না জানায়, সে গ্রামের স্কুলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সবেমাত্র ঢাকায় এসেছে মা-বাবার সাথে থাকবে বলে। তার ইচ্ছা ঢাকার কোনো একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া। তামান্না জানায়, তার এসএসসি পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে সবার দোয়া থাকলে এ প্লাস পাবে। তার ইচ্ছা বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হওয়ার। এখন পরিবারের সব হারিয়ে যাওয়ার সাথে হারিয়েছে তার পড়াশোনার সব আসবাব।

অপর একজন শিক্ষার্থী লিলি আক্তার জানায়, আগুন লাগার আগের দিন তার বাবা জাহাঙ্গীর তার জন্য খাতা-কলমসহ অনেকগুলো পড়াশোনার নতুন নতুন আসবাব এনেছিল। এখন কোনোটাই নেই। সব পুড়ে গেছে।

শিক্ষার্থী সুম‌নের বাবা আজিজুল হক জানান, তাদের বাসার সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। যখন আগুনের ঘটনা ঘটে তখন তিনি বাইরে ছিলেন। তিনি পেশায় রিকশাচালক, তার স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করেন। বস্তিতে আগুন লেগেছে শুনে ঘটনাস্থলে আসতে আসতে সব শেষ হয়ে গেছে। কোনোকিছুই বাসা থেকে বের করতে পারেননি তিনি। সাথে পুড়ে গেছে তার মেয়ের সব বই ও পড়ালেখার সরঞ্জাম। তার ছে‌লে সুমন পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।

আজিজুল হক জানান, অনেক কষ্টে তিনি যা করেছিলেন এখন সব হারিয়ে পথে বসেছেন। তিনি বাসা বানাতে যে দেনা করেছিলেন তার ঋণও এখনো শোধ করতে পারেননি। তার মধ্যে সব হারিয়েছেন। এখন তিনি চোখে শুধুই অন্ধকার দেখছেন। আজিজুল ব‌স্তির ক্ষ‌তিগ্রস্তদের সাহা‌য্যে এগি‌য়ে আস‌তে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বুধবার সকাল পৌণে ১০টার দিকে রূপনগর বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বস্তির পাঁচ শতাধিক বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement