১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পোশাক যায় বিমানে, কর্মীরা মাঝিহীন নৌকায় (ভিডিওসহ)

পোশাক যায় বিমানে, কর্মীরা মাঝিহীন নৌকায় (ভিডিওসহ) - ছবি : নয়া দিগন্ত

কারখানার কর্মীদের হাতের নিখুঁত স্পর্শে যে পোশাক তৈরি হয়, আকাশ পথে কার্গো বিমানে সেগুলো চলে যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়। অথচ এই পোশাক কারখানার কর্মীরাই প্রতিনিয়ত তাদের কর্মক্ষেত্রে যান নৌকায় করে। এই নৌকাও আবার বিশেষ ধরনের। মাঝি নেই, নেই কোনো লগি বা বৈঠাও। নারী কিংবা পুরুষ কর্মীরা নিজেরাই নদীর এপারে আর ওপারে খুঁটির সাথে বাঁধা শক্ত রশি ধরে টেনে টেনে পার করছেন সেই নৌকা।

এ দৃশ্য প্রত্যন্ত কোনো গ্রাম কিংবা লোকালয়েরও নয়। খোদ রাজধানীর উত্তরা ও আশুলিয়ার মধ্যবর্তী দৌড় বেড়িবাঁধ এলাকায় মাঝিহীন এই নৌকায় নিয়মিত নদী হচ্ছেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার দশ হাজারেরও বেশি কর্মী। সকালে আর বিকেলে প্রতিদিনই চোখে পড়ছে এ দৃশ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার টঙ্গী ইপিজেট রুটের দৌড় বেড়িবাঁধ এলাকায় সকাল ৭ টার পর থেকেই তুরাগ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত পোশাক শ্রমিক। তারা ওপারের নৌকার অপেক্ষা করছেন। তুরাগ নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে ৯/১০ টি পোশাক কারখানা। সকাল ৮ টায় শুরু হবে তাদের ডিউটি। তাই নৌকা পার হতে এপাড়ে জড়ো হয়েছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। তাদের কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা নিয়মিত এভাবেই নৌকা পাড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করি । নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা এখানে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল তুরাগ নদীর উত্তরপাড়ে রয়েছে অনন টেক্সেটাইল গ্রুপের বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাকের প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আছে মজুমদার টেক্সটাইল, তামিসোনা টেক্সটাইল, মিডবাজার, পিনটেক্স, গ্যালাক্সি টেক্স,এনজেল গার্মেন্টস প্রভৃতি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার নারী এবং পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন।

এনজেল গার্মেন্টসে অপারেটরের কাজ করেন রুমান। তিনি থাকেন সাভারে। প্রতিদিন ভোরে চলে আসেন নদীর তীরে। অপেক্ষায় থাকেন মাঝিহীন এই নৌকার। নৌকায় করে কর্মক্ষেত্রে যেতে হয় তারমতো অন্যদেরও।

অনন টেক্সটাইলের নারী কর্মী রেবেকা সুলতানা জানান, সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করি। আমাদের তৈরি করা পোশাক বিমানে করে যায় বিদেশে। মালিক পক্ষ গাদা গাদা টাকা আয় করছে। অথচ আমরা রোদে বৃষ্টিতে এই নৌকায় করে নদী পার হয়ে কারখানায় যাই।

মরিয়ম নামের আরেক নারী কর্মী জানান, আমি থাকি মিরপুরে। আগে গার্মেন্টস এর গাড়িতে করে সকালে বিকালে আমাদের আনা নেয়া করত। গত ঈদের পর থেকে গাড়িও আর দেয় না। আমরা মহিলারা সকালে লোকাল বাসে করে চলে আসি নদীর তীরে। এরপর আমরা নিজেরাই এই নৌকা রশি টেনে টেনে নদী পার করি।

এদিকে পোশাক শ্রমিকদের নদী পারাপারের ছবি তোলায় আপত্তি জানায় কারখানার মালিকপক্ষের লোকজন। তারা নদীর এপারে নিরাপত্তাকর্মী পাঠিয়ে ছবি তোলা বা ভিডিও না করতে বারণ করেন। কোনো কর্মকর্তা এই নির্দেশনা দিয়েছেন তা জানতে চাইলেও নিরাপত্তা কর্মীরা সেই কর্মকর্তার নাম বলতেও অস্বীকৃতি জানান। পরে ক্যামেরাসহ এই প্রতিবেদক নদীর ওপারে যেতে চাইলেও তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতির নেয়ার অনুরোধ করেন। যদিও কয়েকবার চেষ্টা করেও কারখানার দায়িত্বশীল পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement