২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সৌদি এয়ারে হজ টিকিটে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

হজযাত্রী - সংগৃহীত

সৌদি এয়ারলাইন্সের হজ টিকিট বিক্রিতে অতিরক্তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কিছু ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে। যেখানে এবার হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত বিমান ভাড়া এক লাখ ২৮ হাজার টাকা নির্ধারিত সেখানে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নিয়ে টিকিট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে অনেক এজেন্সি এখনো বিমানের টিকিট নিশ্চিত করে হজ অফিসে ভিসার জন্য বিমান টিকিটসহ পাসপোর্ট জমা দিতে বিলম্ব করছে বলে জানা গেছে। 

সৌদি এয়ারলাইন্স সরাসরি হজযাত্রীদের নামের বিপরীতে এজেন্সিগুলোর কাছে টিকিট বিক্রি না করার নীতিমালা না মানার কারণেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের এই ঘটনা ঘটছে বলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) মনে করছে। এ ব্যাপারে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও এ বছরও নীতিমালা প্রতিপালিত হয়নি বলে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ আটাবও অরিক্তি অর্থ আদায়ের বিষয়টিকে অন্যায় ও নিয়ম বহির্ভূত আখ্যায়িত করে আইন প্রতিপালন করার জন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

বাংলাদেশের মোট হজযাত্রীর অর্ধৈক পরিবহন করছে সৌদি এয়ারলাইন্স। এ বছর বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।
হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের মহাসচিব স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইতোমধ্যেই এজেন্সিগুলো বরাবর পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য হাবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 
হাবের মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার স্বাক্ষরিত এজেন্সিগুলো বরাবর বৃহস্পতিবার পাঠানো ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির বিধান প্রতিপালন না করে হজ টিকিটে অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রসঙ্গে’ শিরোনামে চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ১০.৯ এর বিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, সুষ্ঠু হজ ফ্লাইট পরিচালনার লক্ষ্যে এয়ারলাইন্সগুলো হজযাত্রীদের সমস্ত টিকিট বিক্রি বা বুকিং সরাসরি সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির সমসংখ্যক হজযাত্রীদের নামের অনুকূলে বরাদ্দ ও ইস্যু করবে এবং দৈনিক ভিত্তিতে অনলাইনে পরিদর্শন করবে। বিধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিপালন করলেও হজযাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স তা যথাযথভাবে পালন করছেনা, যা বিধিবহির্ভূত। বিষয়টি সুরাহাকল্পে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, হাব ও সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী সরাসরি অপারেটিং হজ এজেন্সির অনুকূলে হজ টিকিট বিক্রয় করার জন্য হাব-এর পক্ষ থেকে জোরালো দাবি এবং প্রয়োজনীয় সব প্রকার প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু বিষয়টির সন্তোষজনক সুরাহা হয়নি। পক্ষান্তরে সৌদি এয়ারলাইন্সের হজ টিকিটে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। চিঠিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হজ ও ওমরাহনীতির বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করার অনুরোধ জানানো হয়। 

আটাবের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে গত বুধবার একটি চিঠি ইস্যু করে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করা করা হয়েছে। আটাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা লঙ্ঘন করে টিকিটের নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে সৌদি এরাবিয়ান এয়ালাইন্সের হজ টিকিট বিক্রয় করছে অন্যায়, নীতি বহির্ভূত ও অবৈধ। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকারের অনুসৃত আইন প্রতিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। 
হজের সময় বিমানের টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেটের অভিযোগ বিগত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতবছর থেকে হজ এজেন্সিগুলোর সমসংখ্যক হজযাত্রীর প্রত্যেকের নামে টিকিট বুকিং ও ইস্যু করার নিয়মটি হজ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গত বছর থেকে সেটি কার্যকর করলেও সৌদি এয়ারলাইন্স এখনো তা করেনি। ইতঃপূর্বে বিষয়টির ব্যাপারে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনিও বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এ বছরও সৌদি এয়ারলাইন্স সরাসরি হজ এজেন্সির হজযাত্রীর বিপরীতে টিকিট বিক্রি না করায় কিছু এজেন্সি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। 
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে আবারো দুয়েক দিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক হতে পারে বলেও তিনি জানান।

এদিকে বেসরকারি হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যুর জন্য ঘোষিত হজ ফ্লাইটের শিডিউল অনুযায়ী বিমান টিকিট ক্রয় করে ক্রয়কৃত টিকিটের কপিসহ ভিসা প্রাপ্তির লক্ষ্যে মূল পাসপোর্ট ১৬ জুনের মধ্যে হজ অফিসে জমা দেয়ার জন্য হজ এজেন্সিগুলোকে দেয়ার জন্য বলা হলেও কিছু এজেন্সি জমা দেয়নি বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল এক চিঠিতে তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই টিকিটের কপিসহ পাসপোর্ট জমা দেয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। তবে এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, বিমানের টিকিট নিয়ে কোনো ঝামেলা না হলেও এখন সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট কিছু এজেন্সির কবজায় থাকায় তারা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে টিকিট বিক্রি করছে। ফলে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট নেয়া এজেন্সিগুলোর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা এখনো টিকিট নিতে পারেননি। এ জন্য তারা হজ অফিসে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে বিলম্ব করছে।


আরো সংবাদ



premium cement