১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আতঙ্কে উদয়ন ট্রেনের যাত্রীরা

আতঙ্কে উদয়ন ট্রেনের যাত্রীরা - ছবি : সংগৃহীত

পুণ্যভূমি সিলেট রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি গন্তব্যে রওয়ানা হওয়ার কিছুক্ষণ না যেতেই যাত্রীরা ‘লাফাতে’ শুরু করেন। ট্রেনের গতি যত বাড়তে থাকে, সিটে বসা অথবা দাঁড়ানো যাত্রীদের লাফানো তত বাড়তে থাকে। 
বিরতিহীনভাবে ট্রেনের বগিগুলো ওপর-নিচ হয়ে দুলতে থাকায় বেশির ভাগ যাত্রী ভয়ে আঁতকে উঠছিলেন। এ সময় যাত্রীদের মনে হয়েছে, এই বুঝি রেললাইন থেকে বগি ছিটকে পড়ছে! শুধু যে বগি লাফাচ্ছে তা নয়, যাত্রীরা বাথরুমে যাওয়ার পথে দেখতে পাচ্ছেন, মূল দরজার লক নেই। বাতাসে হেলছে আর দুলছে। যেকোনো সময় অসাবধানবশত যাত্রীদের নিচে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে ট্রেনের দায়িত্বশীল কারো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। এরমধ্যে যারা এসি (স্নিগ্ধা) কামরার যাত্রী, তারা কিছুটা ‘স্বস্তি’ বোধ করলেও নন এসির সিট ও বার্থ যাত্রীদের বেশির ভাগের রাত কেটেছে নির্ঘুমভাবে। 

২৪ জুলাই রাত ৯টা ২০ মিনিটে সিলেট থেকে চটট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া যায় এসব অনিয়মের চিত্র। ওই ট্রেনের একাধিক যাত্রী ট্রেনের বগিগুলোর অতিরিক্ত লাফানো দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে যান। তারা ট্রেনের এটেনডেন্টদের কাছে বগি লাফানোর কারণ জানতে চান। কিন্তু তারাও যাত্রীদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা শুধু বলেছেন, এই ট্রেনটি হচ্ছে ‘স্প্রিং ট্রেন’। ‘লাফাবে কিন্তু কোনো সমস্যা হবে না’। কিন্তু তাদের এমন কথায় যাত্রীরা কোনোভাবেই আশ্বস্ত হতে পারেননি। তারপরও রাত পেরিয়ে ট্রেনটি পরদিন মঙ্গলবার সকাল ৬টার কিছু পরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফরমে নিরাপদে পৌঁছতে সক্ষম হয়। এতে যাত্রীরাও হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। 

সরেজমিন দেখা গেছে, ট্রেনটি যখন চলছিল তখন এসি কামরার যাত্রীদের রুমেও বহিরাগত যাত্রীরা ঢুকে পড়ছে। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এটেনডেন্টদের দেখা গেলেও তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। তবে কতর্ব্যরত একজন পুলিশ সদস্য একজন স্ট্যান্ডিং যাত্রীর উদ্দেশে বলছিলেন, টিকিট ছাড়া এই বগিতে কোনোভাবেই অবস্থান করতে পারবেন না। এসির চেয়ে নন এসি কামরার যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তি ছিল বেশি। সিটে বসা যাত্রীদের মাথার ওপর ঝুঁকে স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এমনও দেখা গেছে স্ট্যান্ডিং সিটের যাত্রীদের নন এসি (বার্থ) রুমে গাদাগাদি করে যাত্রীদের বসিয়ে গন্তব্য নিয়ে যেতে। এসব অনিয়মের ব্যাপারে রাতভর এটেনডেন্টদের খোঁজাখুঁজি করলেও তাদের দেখা মেলেনি। তারা সিটের যাত্রীদের চেয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের বেশি আরাম দিতে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রামগামী যাত্রী আখতার হোসেন এ প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে যে ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে সচরাচর অন্য ট্রেনে তা দেখা যায় না। তিনি বলেন, এই ট্রেনে ওঠার পর থেকেই ভয়ে ছিলাম কখন না জানি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। কেন এমন মনে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বগি শুধু দুলছে। আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে গেছে। সিটে বসে থাকা অবস্থায় শূন্যে উঠে পড়ছে। এভাবে কেটেছে রাতের বেশির ভাগ। যাত্রাটাই অস্বস্তির হয়ে উঠছিল। কিন্তু কী আর করব। কার কাছে গিয়ে অভিযোগ করব, তেমন কাউকেও পেলাম না।’ 

‘গ’ সিরিয়ালের নন এসি বার্থ কেবিনের শিশু যাত্রী লামিয়া। পরিবারের সাথে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে যেতে এ ট্রেনে ওঠে সে। মধ্যরাতে মায়ের হাত ধরে পাশের টয়লেটে গেলে সে দেখতে পায় গেটের সিটকানি লাগছে না। এ সময় বাতাসে টয়লেটের গেট হেলে দুলে একপর্যায়ে তার কপালে লাগে। এতে সামান্য আহত হয় লামিয়া। শুধু নন এসি নয়, এসি চেয়ার কোচের যাত্রী মাসুদ রানা, মোমিন হোসেনসহ নারী-পুরুষেরা পাশের টয়লেটে গেলে তারা দেখতে পান টয়লেটের দরজার পাশে বগির দরজাটি খোলা। যাত্রীদের অভিযোগ, কেউ যদি অন্যমনস্ক থাকেন, তাহলে যেকোনো সময় বাথরুমে যেতে গিয়ে হেলতে দুলতে থাকা ওই দরজা দিয়ে নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বক্তব্য- ট্রেন যাত্রা নিরাপদ বলা হয়। আসলে উদয়ন ট্রেনটি কতটুকু নিরাপদ তা যারা ওই ট্রেনে ভ্রমণ করছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য রেলপথমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। 
উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো লাফানোর কারণ কী তা জানতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ট্র্যাক যদি খারাপ হয়ে থাকে তাহলে জার্কিং হবে। তারপরও সারা পথ তো হওয়ার কথা নয়। এটা অপারেশনের সাথে সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন। দরজা, জানালার সিটকানি ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক সময় কোচের বডি খারাপ হলে এসব সমস্যা থাকে। এর আগে রাতে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের (পূর্বাঞ্চল) সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement