১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভয়াবহ পাঁচটি পারমাণবিক সাবমেরিন দুর্ঘটনা

কেন হয় সাবমেরিন দুর্ঘটনা?
ভয়াবহ পাঁচটি পারমাণবিক সাবমেরিন দুর্ঘটনা - ছবি : সংগৃহীত

সাবমেরিন। নাবিকদের কাছে গভীর সমুদ্রের আতঙ্ক এটি। পানির উপরে ও নিচে সমানভাবে চলার সক্ষমতা আছে সাবমেরিনের। গভীর সাগরে শনাক্ত করা বেশ কঠিন হওয়ায় বর্তমান যুগে আধুনিক নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন একটি কৌশলগত অস্ত্র। গভীর সাগরে সাবমেরিন খুঁজে বের করা খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার চাইতেও কঠিন। শত্রুর উপর নিঃশব্দ নজরদারি বা আচমকা হামলায় জুড়ি নেই সাবমেরিনের। তবে গভীর সমুদ্রে এটিকে শনাক্ত করা কঠিন হওয়ায় অনেক সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে। আজকের এই পর্বে পাঠকদের জন্য থাকছে ইতিহাসের ভয়াবহ কিছু নিউক্লিয়ার সাবমেরিন দুর্ঘটনার তথ্য।

‘স্টেলথ’ তথা নিজেকে লুকিয়ে রাখার সক্ষমতাই সাবমেরিনের প্রধান শক্তি। কিন্তু এই শক্তিই দুর্ঘটনায় পড়া নাবিকদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা প্রথমেই জানবো কেন হয় সাবমেরিন দুর্ঘটনা?

সবার আগে জানতে হবে সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে অপারেশন পরিচালনা করে। সাধারণত সাবমেরিন স্বতন্ত্রভাবে সাগরে অপারেশন চালায়। ডিজেল-ইলেকট্রিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনগুলোর নির্দিষ্ট সময় পরপর জ্বালানি নেয়ার ঝামেলা নেই। ফলে মাসের পর মাস একটানা পানির নিচে ঘুরে বেড়াতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরপর এরা হেডকোয়ার্টারের সাথে রেডিওতে যোগাযোগ করে। যুদ্ধকালে বা মহড়া চলাকালে সত্যিকারের যুদ্ধাবস্থা তৈরির জন্য অনেক সময় ইচ্ছা করেই দীর্ঘ সময়ের জন্য রেডিও সাইলেন্স বজায় রাখা হয়। মোটকথা, সাবমেরিন নিজে থেকে যোগাযোগ না করলে সহজে এর অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আবার নির্দিষ্ট গভীরতায় উঠে না এলে সাবমেরিন রেডিও যোগাযোগ করতে পারে না। ফলে একে সাধারণ যুদ্ধজাহাজের মতো সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বা রার্ডার দিয়ে শনাক্ত করা যায় না। শত্রুর নজরদারি বা সম্ভাব্য হ্যাকিং থেকে বাঁচতেই এটিকে স্যাটেলাইট দিয়ে ট্র্যাকিং করা হয় না। তাছাড়া, অতি গভীরতায় জিপিএস টেকনোলজি সঠিকভাবে কাজ করে না।

তবে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাকবলিত সাবমেরিনের ঘটনা তদন্তে দেখা গেছে- হয়তো ভেতরে কোনো অংশে (টর্পেডো, মিসাইল, ইঞ্জিন, নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরে) বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফলে এটি পাওয়ার সাপ্লাই হারিয়ে যোগাযোগ করতে পারেনি। এতে আগুনে পুড়ে, তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে বা অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রুদের মৃত্যু হয়েছে। অথবা বিস্ফোরণে সাবমেরিনের বডি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পানি ঢুকেছে। ফলে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার ক্র্যাশ ডেপথ লিমিট অতিক্রম করে ধ্বংস হয়েছে। প্যাসকেলের সূত্রানুযায়ী পানির যত গভীরে যাওয়া যায়, ততই চাপ বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি সাবমেরিন নির্দিষ্ট গভীরতায় যাওয়ার উপযোগী করে বানানো হয়। সাধারণ অবস্থায় একটি সাবমেরিন সর্বোচ্চ যে গভীরতায় অপারেশন চালাতে সক্ষম তাকে ‘টেস্ট ডেপথ’ এবং যে গভীরতায় অতিক্রম হলে এটি ধ্বংস হয়ে যাবে তাকে ‘ক্র্যাশ ডেপথ’ বলে। এই সীমা অতিক্রম করলে পানিই হয়ে যাবে সাবমেরিনের বড় শত্রু। শক্তিশালী ইস্পাত-টাইটেনিয়ামের হালের তৈরি সাবমেরিনও পানির প্রচণ্ড চাপ সইতে না পেরে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাবে।

এবার জেনে নেয়া যাক ইতিহাসের ভয়াবহ কিছু নিউক্লিয়ার সাবমেরিন দুর্ঘটনার কথা

কুরস্ক সাবমেরিনটি দুর্ঘটনার আগে ও পরে

কুরস্ক সাবমেরিন দুর্ঘটনা
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সাবমেরিন দুর্ঘটনা ঘটে রাশিয়ার অস্কার-২ ক্লাসের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন কে-১৪১ কুরস্কের ক্ষেত্রে। ২০০০ সালের ১২ আগস্ট এক অনুশীলনের সময় টর্পেডো ফায়ারিংয়ের প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ব্যারেন্টস সাগরের ১১৫ মিটার গভীরে আটকে যায়। ১৬ হাজার টনের সেই সাবমেরিনটি টাইপ-৬৫ নামক শক্তিশালী টর্পেডো বহন করত, যা মূলত সিঙ্গেল শটে মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ডোবানোর উপযোগী করে বানানো হয়েছিল। এতে উচ্চগতির জন্য হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামক রাসায়নিক যৌগকে ফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করত। অনুশীলনে সেটি ফায়ারের সময় বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে সেই সাবমেরিনের ১১৮ জন নাবিকের সবাই নিহত হন।

বরফাচ্ছাদিত সাবমেরিন কে-২৭৮ কমসোমোলেটস

কমসোমোলেটস
কুরস্কই যে সোভিয়েত ইউনিয়নের একমাত্র দুর্ঘটনা তা কিন্তু নয়। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো এত বেশি সাবমেরিন দুর্ঘটনা আর কোনো দেশে ঘটেনি। ১৯৮৯ সালে কে-২৭৮ কমসোমোলেটস নামের একটি প্লাভিক ক্লাস সাবমেরিনের ভেতর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে সেই সাবমেরিনটি নরওয়ের উপকূলে ডুবে যায়। সাবমেরিনটি ছিল সোভিয়েত নৌবাহিনীর টেস্টবেড তথা নতুন টেকনোলজি পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত সাবমেরিন। টাইটেনিয়াম প্রেশার হালের তৈরি সাবমেরিনটি ছিল বিশ্বের বেশিরভাগ সাবমেরিন থেকে আলাদা। সাধারণ সাবমেরিনের যেখানে পানির ২০০-৫০০ মিটার গভীরে যাওয়ার গড় সক্ষমতা আছে, সেখানে কে-২৭৮ কমসোমোলেটসকে ১ হাজার থেকে দেড়হাজার মিটার গভীরে ডুব দেয়ার উপযোগী করে বানানো হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে এটি ১ হাজার ২৪ মিটার গভীরে ডাইভ দিয়ে কমব্যাট সাবমেরিনের রেকর্ড গড়েছিল, যা এখনো অক্ষত।

১৯৮৯ সালের ৭ এপ্রিল কমব্যাট পেট্রোলের সময় ৩৩৫ মিটার গভীরে থাকা সাবমেরিনটির পেছনের দিকের ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পার্টমেন্টে ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ক্যাপ্টেন নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর শাটডাউন করে সাবমেরিন পানির উপরে ভাসানোর নির্দেশ দেন। জাহাজের ইলেকট্রিক সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আগুন লাগা কম্পার্টমেন্টের এয়ার ভেন্ট বন্ধ করা যায়নি। ফলে অক্সিজেনের সাপ্লাই পেয়ে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

জানা যায়, সেই দুর্ঘটনার ১১ মিনিটের মাথায় সাবমেরিনটি পানির উপরে ভেসে ওঠে। নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে চার অফিসারসহ সাবমেরিনে থেকে যান ক্যাপ্টেন ভেনিন। তিনি আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পাশাপাশি দুর্ঘটনার খবর হেডকোয়ার্টারে জানিয়ে সাহায্যের আবেদন জানান। পরে সাবমেরিন ডুবে যাওয়া শুরু করলে ক্যাপ্টেন বাকি চারজনকে নিয়ে এস্কেপ ক্যাপসুলে চড়ে পানির উপরে উঠে আসেন। কিন্তু একজন ছাড়া কেউই ক্যাপসুল থেকে বের হতে পারেননি।

এদিকে সাগর তখন উত্তাল, পানির তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় হাইপোথার্মিয়া হয়ে একে একে নাবিক মারা যেতে শুরু করে। এরই মধ্যে সোভিয়েত উদ্ধারকারী বিমান এসে একাধিক লাইফ বোট ফেলে গেলেও বাতাস ও তীব্র ঢেউয়ের কারণে বেশিরভাগই নাবিকদের হাতছাড়া হয়। সাবমেরিন কে-২৭৮ কমসোমোলেটস ডুবে যাওয়ার ৮১ মিনিট পর নিকটস্থ একটি মাছ ধরার জাহাজ রেডিও ম্যাসেজ শুনে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসে সবাইকে তুলে নেয়। ততক্ষণে ৬৯ নাবিকের মধ্যে মাত্র ২৭ জন বেঁচে আছে।

ওই ঘটনায় নিহত ৪২ জনের মধ্যে আগুন ও অন্যান্য কারণে ৯ জনের মৃত্যু হয়। বাকি ৩০ জনই ব্যারেন্টস সাগরের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাইপোথার্মিয়ায় মারা যায়। তখন ওই ঘটনায় দ্রুত সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য রুশ নৌবাহিনীর ব্যাপক সমালোচনা হয়।

অন্য দিকে সাগরের ১ হাজার ৭০০ মিটার গভীরে পড়ে থাকা সাবমেরিনটি উদ্ধারের জন্যও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এলাকাটি নরওয়ের উপকূলবর্তী হওয়ায় দেশটি নিউক্লিয়ার টর্পেডো ও রিয়্যাক্টর পানির নিচ থেকে উদ্ধারের জন্য ব্যাপক চাপ দিলে রাশিয়া পরবর্তীতে সাবমেরিনটি সিল করে দেয়। ১৯৯৪ সালে টর্পেডোর প্লুটোনিয়াম ওয়ারহেড থেকে রেডিয়েশন নির্গত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ার পর নরওয়ে ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থাগুলো রাশিয়ার উপর চাপ প্রয়োগ করে। পরে আবারো কমসোমোলেটসকে ভালোভাবে সিল করে দেয়া হয়। রুশ কর্তৃপক্ষের অনুমান অনুযায়ী- এটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত অক্ষত থাকবে। প্রতি বছর পানির স্যাম্পল পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি নজরদারি করে নরওয়ে।

ডুবে যাওয়ার আগে তোলা কে-৮ সাবমেরিনের ছবি

 

কে-৮ সাবমেরিন
আগুন লাগার পর সাবমেরিন ডুবে যাওয়ার বিষয়টি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত নৌবাহিনীর একটি কিট ক্লাস সাবমেরিন ডুবে যায়। সেই সাবমেরিনকে ডাকার মতো কোনো নাম না থাকায় ন্যাটো এর নাম দেয় ‘কে-৮’। সাবমেরিনটি যেন সোভিয়েত নৌবাহিনীর দুর্ভাগ্যের প্রতীক। ১৯৬০ সালে এক দুর্ঘটনায় স্টিম জেনারেটরের কুল্যান্ট পদার্থ লিকেজ হয়ে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের তেজস্ক্রিয় গ্যাস গোটা সাবমেরিনে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় কেউ মারা না গেলেও রেডিয়েশনে বেশ কয়েকজন ক্রু অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৭০ সালের ৮ এপ্রিল জেনারেটর ফুয়েলের মাধ্যমে আগুন ধরে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের এয়ার ভেন্টের মাধ্যমে গোটা সাবমেরিনে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় ৮ জন নিহত হন। সেখানকার ক্যাপ্টেন বেসোনভ পানির উপরে ভেসে উঠতেই জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। পরে উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে এলে সাবমেরিন টেনে ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে নাবিকদের আবারো সাবমেরিনে প্রবেশের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তাল সাগরে সাবমেরিনের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যালাস্ট ট্যাংক ভারসাম্য হারায়। ফলে মুহূর্তের মধ্যে ডুবতে শুরু করে কে-৮। শেষ পর্যন্ত ৫২ জন নাবিককে নিয়ে তলিয়ে যায় সাবমেরিনটি।

তবে সেই ঘটনায় ৭৩ জন নাবিক বেঁচে গিয়েছিলেন। নিহত ক্যাপ্টেন বেসোনভকে প্রতিকূল মুহূর্তে নেতৃত্ব ও তার আত্মত্যাগের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘হিরো অফ দি সোভিয়েত ইউনিয়ন’ পদকে ভূষিত করা হয়। চারটি নিউক্লিয়ার টর্পেডোসহ কে-৮ সাবমেরিনটি বর্তমানে আটলান্টিকের সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরে ডুবে আছে। বরাবরের মতো রাশিয়া ব্যাপক অর্থ খরচ করে তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন উদ্ধারের ক্ষেত্রে উদাসীন। এই উদাসীনতায় ১৯৭৩ সালে তাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়।

ইউএসএস স্করপিয়ন

ইউএসএস স্করপিয়ন
দুর্ঘটনায় যে শুধু সোভিয়েত ইউনিয়ন সাবমেরিন হারিয়েছে তা কিন্তু নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইউএসএস স্করপিয়ন নামে একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আকস্মিকভাবে ডুবে যায়। এটি সোভিয়েত নৌবহরের উপর গোয়েন্দাগিরির কাজে নিয়োজিত ছিল। নির্ধারিত সময়ের পরও বন্দরে ফিরে না আসা ও রেডিও যোগাযোগ না করায় মার্কিন নৌবাহিনী ব্যাপক আকারে সার্চ অপারেশন শুরু করে। পাঁচ মাস পর ৩০ অক্টোবর সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ পানির তিন হাজার মিটার গভীরে খুঁজে পাওয়া যায়। এটি কী কারণে ডুবে গিয়েছিল তা আর জানা যায়নি। নিজস্ব টর্পেডোর বিস্ফোরণ, ব্যাটারি বিস্ফোরণ, ব্যাটারির হাইড্রোজেন গ্যাস লিক থেকে বিস্ফোরণসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিশোধমূলক টর্পেডো হামলার কথা ধারণা করা হয়। কিন্তু কিসের প্রতিশোধ?

১৯৬৮। সালটি যেন ছিল সাবমেরিন দুর্ঘটনার বছর। ওই বছর চার দেশের ৪টি সাবমেরিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। সাবমেরিনগুলো হলো- ১৯৬৮ সালের ২৫ জানুয়ারি- ইসরাইলি সাবমেরিন ‘আইএনএস ডাকার’, ২৭ জানুয়ারি- ফরাসি সাবমেরিন ‘মিনেখভ’, সে বছরের ৮ মার্চ- সোভিয়েত সাবমেরিন ‘কে–১২৯’ এবং ২২ মে- মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস স্করপিয়ন।

‘কে-১২৯’। ৯৮ জন নাবিক নিয়ে ডুবে যাওয়া এই সাবমেরিনের ডুবে যাওয়ার আসল কারণ না জানা গেলেও ধারণা করা হয়, লেড এসিড ব্যাটারি বিস্ফোরণ, মিসাইল হ্যাচ লিক অথবা মার্কিন সাবমেরিনের সাথে ধাক্কা লাগায় এটি ডুবে যায়।

কে-১২৯ নিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় কিছ গুজবও রয়েছে তার মধ্যে জনপ্রিয় হলো- কে-১২৯ মার্কিন টর্পেডো হামলায় ডুবে গেছে! ফলে এই ঘটনার দু’মাস পর ইউএসএস স্করপিয়নের রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অনেকেই ধারণা করেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের টর্পেডো হামলায় এটি ডুবে গেছে। পরে ১৯৭৩ সালে পানির ১৬ হাজার ফুট গভীরে থাকা কে-১২৯ সাবমেরিনের নিউক্লিয়ার ব্যালাস্টিক মিসাইলসহ স্পর্শকাতর যন্ত্র চুরি করতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এক অবিশ্বাস্য অপারেশন পরিচালনা করে। এতে সোভিয়েত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ও রেডিও যোগাযোগ সামগ্রীসহ গোপন কোডবুক পেয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

ইউএসএস থ্রেশার ও এর ধ্বংসাবশেষ

ইউএসএস থ্রেশার
ডুবে যাওয়া মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস থ্রেশার ছিল বিশ্বের প্রথম নিউক্লিয়ার সাবমেরিন দুর্ঘটনা। ১৯৬৩ সালের ১০ এপ্রিল ৪০০ মিটার গভীরে ডুব দেয়ার একটি পরীক্ষা করার সময় সাবমেরিনটির ইঞ্জিন রুমের হাল (বডি) পানির প্রচণ্ড চাপে ফুটো হয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এক সময় নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরে পানি ঢুকে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সাবমেরিনের ডাইভ দেয়া নিয়ন্ত্রণকারী ব্যালাস্ট ট্যাংকের পাইপে ক্রুটি থাকায় এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্র্যাশ ডেপথ লিমিট অতিক্রম করে পানির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যায়। পানির উপরে থ্রেশারের সঙ্গী একটি উদ্ধারকারী জাহাজ থাকলেও সেটি কিছুই করার সুযোগ পায়নি। এতে ১২৯ জন নাবিকের সবাই প্রাণ হারায় যা প্রাণহানির দিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘটনা। ১৩০ জন নাবিকের মৃত্যু নিয়ে সবার উপরে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ফরাসি সাবমেরিন ক্রুজার ‘সুরক্যুফ’। এই সাবমেরিনের ডেকের উপর ৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটো কামান থাকায় একে সাবমেরিন ক্রুজার বলা হতো।

Reference :

1) Peril in the depths – the world’s worst submarine disasters

2) Sinking feeling: List of major submarine disasters

3) The True Story of the Russian Kursk Submarine Disaster 

4) The Soviet Submarine K-8 Sunk With 4 Nuclear Torpedoes Still Onboard

5) Two nuclear warheads still on Arctic seabed 30 years after Komsomolets disaster

6) USS Scorpion Sunk: Why We Don’t Know the Truth 50 Years Later

7) Atomic submarine USS Thresher sinks in the Atlantic, killing all on board


আরো সংবাদ



premium cement
‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো?

সকল