২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আজ পবিত্র ঈদুল আযহা

আজ পবিত্র ঈদুল আযহা - ফাইল ছবি

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা, যা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মুসলমানদের জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এ ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এ ঈদের আদর্শ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দ্বিধাহীনভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশ শর্তহীনভাবে মেনে নেয়াই হলো ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করে সেই ত্যাগের কথাকেই স্মরণ করা হয়।

ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। শুক্রবার পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। ১০ লাখ মুসলমানের অংশগ্রহণে এবারের হজ পালিত হয়। শনিবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করেন।

মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ঈদুল আজহা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। রাজধানীসহ সারা দেশের পশুর হাটগুলো কয়েক দিন ধরে চলছে। স্বজনদের নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে বিপুল মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন।

ঈদুল আজহা হজরত ইবরাহিম আ: ও তার পুত্র হজরত ইসমাঈল আ:-এর সাথে সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহিম আ: স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ ছিল হজরত ইবরাহিম আ:-এর জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আল্লাহর নির্দেশে ইসমাঈলের পরিবর্তে কোরবানি হয় দুম্বা। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণে হজরত ইবরাহিম আ:-এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ। এ ছাড়াও ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি করা যায়।

ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালন কর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানি করুন।’ সূরা হজে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’ কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’

রাসূল সা: বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম আ:-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে, ‘আপনি তাদের আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনেরটি গৃহীত হয়নি’ (সূরা মায়েদা-২৭)।

আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তাঁর পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এতে নিহিত। এ জন্যই কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়- ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ্ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ অর্থাৎ- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’

গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা থেকে যেকোনো একটি প্রাণী দিয়ে কোরবানি করা যায়। কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন এবং বাকি এক ভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব।

করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো এ ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

সারা দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও গণমাধ্যমগুলো যথাযোগ্য গুরুত্বসহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করছে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কোরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থের কারণে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঈদ জামাত কোথায় কখন : রাজধানীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার নামাজ আদায় হবে। বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমিন এ নামাজে ইমামতি করবেন। এখানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, ডিএসসিসি মেয়রসহ সর্বস্তরের মানুষ নামাজ আদায় করবেন। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে পৌনে ১১টা পর্যন্ত নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া গেণ্ডারিয়া ধুপখোলা মাঠের উত্তর দিকের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সেন্টারে সকাল সাড়ে ৭টায়, কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৭টা, ৮টা ও পৌনে ৯টায় তিনটি জামাত, চিশতিয়া সাইদিয়া দরবার শরীফ জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, মিরপুর দারুস সালাম মীরবাড়ি জামে মসজিদে সকাল ৭টায় নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে ঢাকাবাসীর উদ্যোগে ঈদের দিন বিকেল ৪টায় হাজারীবাগ পার্ক প্রাঙ্গণ থেকে ঈদ র্যালি বের হবে। এবারের র্যালির স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ঢাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করুন’।

চট্টগ্রামে ঈদ জামাতের সময়সূচি
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে ঈদুল আজহার নামাজের প্রধান জামাত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে সকাল ৮টায় এবং সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৭.৪৫ মিনিটে এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮.৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুশ শরফ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা ড. সাইয়েদ মুহাম্মদ আবু নোমান। এ ছাড়া কমিটির আওতাভুক্ত নগরীর অপর ৯৩টি আঞ্চলিক ঈদগাঁগুলোর ঈদুল আজহা নামাজের সময়সূচি এবং ইমাম আগের মতো স্থানীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লালদীঘি সিটি করপোশেন শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এ ছাড়াও নগরীতে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় সকাল সাড়ে ৭টায় হজরত শেখ ফরিদ রা: চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী ভিআইপি আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরু বাজার জামে মসজিদ ও সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ৪১ ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে ঈদ জামাত নিজ নিজ মসজিদ অথবা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement