২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ঈদ মোবারক

ঈদ মোবারক - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঈদ মোবারক। আজ আকাশে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর পালিত হবে। অবশ্য গতকাল চাঁদ দেখা না যাওয়ায় ঈদ যে সোমবার হবে তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে প্রতিবছরই উদযাপিত হয় এই ঈদ উৎসব। এ উপলক্ষে সাধারণত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটিতে স্বজনদের সাথে ঈদ করার জন্য কয়েক দিন ধরেই নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যায় লাখ লাখ মানুষ। রাজধানী ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। কারোনা পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই সাধারণ ছুটি চলছে। গণপরিবহন বন্ধ। ব্যক্তিগত গাড়িতে কিছু সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িমুখো হলেও অধিকাংশ মানুষই এবার যেতে পারছে না। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে। নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করছে। সরকারও ঈদগাহ ও খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটবর্তী মসজিদে দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছে। ফলে স্মরণকালের মধে এই প্রথম দেশের মানুষ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার মধ্যেই অনুষ্ঠান-আয়োজন ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে।

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ফিতরের এক অর্থ ভঙ্গ করা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজার সমাপ্তি ঘটানোর আনন্দ। অর্থাৎ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা, তারাবির নামাজ, জাকাত-ফিতরা আদায়ের পর মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে তাই ঈদুল ফিতর। এই আনন্দ কর্মশেষে সাফল্যের আনন্দ। এই আনন্দ প্রাপ্তির আনন্দ। এই আনন্দ আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের সাফল্যের আনন্দ। তারপরও ঈদের আনন্দ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসবে রূপ নেয়। তাই এই আনন্দ হয়ে ওঠে সার্বজনীন। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই সার্বজনীন সামাজিক আনন্দ সেভাবে ভাগাভাগি করা যাচ্ছে না।

এক মাস টানা সিয়াম সাধনা শেষে ঈদের অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে এক অপার্থিব অনুভূতি। এ আনন্দ পরকালীন জীবনের জন্য শান্তি ও মুক্তি লাভের এক অনন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতির। তাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রমজান শেষে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখামাত্রই খুশির জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি রোজাদারের দেহ-মনে। এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-নির্ধন ছোট-বড় সবার মধ্যে। প্রতিটি প্রাণে দোলা দেয় ঈদ আনন্দ।

ঈদুল ফিতর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। দিনটি মুসলমানদের জন্য বরকতময়ও। মানবতার মুক্তির দিশারি হজরত মুহাম্মদ সা: ঈদের প্রচলন করেন। বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে- মহানবী সা: বলেছেন, প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের দিন আছে। আর আমাদের উৎসব হলো ঈদ। হিজরি দ্বিতীয় সন থেকে মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছে।

ঈদুল ফিতরে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এবার রাষ্ট্রের পক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মাথাপিছু ফিতরা ধার্য করেছে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দুই হাজার ২০০ টাকা। ফিতরার হকদার দরিদ্ররা। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে ধনবানরা জাকাত আদায় করে। এর বড় অংশ পায় সমাজের গরিব মিসকিনরা। এভাবেই ঈদ পরস্পরকে খুব কাছাকাছি এনে দেয়। সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়। ঈদে করোনা মহামারীতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের হাতে ফিতরা ও জাকাতের অর্থ সামর্থ্যবানরা পৌঁছে দিলে আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও ঈদের আনন্দ তাদের ঘরেও কিছুটা ছড়াবে।

প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। এবার সেটা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনা মহামারী মোকাবেলায় পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই ঈদের জামাত পর্যন্ত হচ্ছে না। চলছে লকডাউন। তবে ঈদকে ঘিরে সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওতে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ নিবন্ধ।


আরো সংবাদ



premium cement