১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে কেন কাজ পাচ্ছেন না কর্মীরা

- ছবি : সংগৃহীত

সর্বশেষ ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে অনিয়মের অভিযোগে স্থগিত করে দেয়া হয়েছে মালয়েশিয়ার কলিং ভিসার কার্যক্রম। তারপর চলে দীর্ঘ সময় দু’দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নানা দেন দরবার। অবশেষে ২০২২ সালে চালু হয় সেই অধীর আকাঙ্ক্ষিত কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া শ্রমিক প্রেরণ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীর প্রচুর চাহিদা ভিত্তিতে জনশক্তি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক কর্মী মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। আরো লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় কার্যক্রম পাইপলাইনে আছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এরই মধ্যে প্রতিদিন অসংখ্যা কর্মী অভিযোগ করছেন- তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ৩-৫ মাস হয়ে গেলেও তাদেরকে কাজ দিচ্ছেন না নিয়োগ কর্তারা। আবার অনেকে কোম্পানি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শত শত শ্রমিক কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে মিডিয়া ও দূতাবাসে অভিযোগ আসছে।

তবে বেশিরভাগ কলিং ভিসার কর্মী বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ পেয়েছেন বা এখন কাজ করছেন। বেতন-ভাতাদি পেতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু কর্মী অভিযোগ করছেন, তারা মাসের পর মাস বসে আছেন কিন্তু মালিক তাদের কাজ দিচ্ছেন না বা থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করছেন না। তাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখা যায়- প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেলেও সেখানে মালিক পক্ষের কাউকে না পাওয়া যাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সংগত কারণেই এসব অভিযোগের সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। যদিও কিছু কিছু নিয়োগকর্তা অভিযোগ করেছেন- শ্রমিকরা চুক্তির শর্ত মানছেন না, তারা নিয়মিত কাজ না করে পছন্দমতো কাজ চান, পছন্দমকো কাজ না পেলে তারা পালিয়েও যাচ্ছেন। কুয়ালালামপুরে বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা কর্মীদের চুক্তিমতো কাজ দিচ্ছেন না, শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে রেখে জোর করে কাজ আদায়সহ নির্যাতন পর্যন্ত করা হচ্ছে।

কলিং ভিসার শুরুতে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদার কথা জানানো হয়। এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক কর্মী মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন। তাহলে এখনই কেন কর্মীদের কাজের সংকট তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ৫ লাখ কর্মীর চাহিদা কি পূরণ হয়ে গেছে? উত্তর হচ্ছে এখনো মালয়েশিয়ায় ৫ লাখ কোটা পূরণ হয়নি। আর চারদিক থেকে যে এত এত অভিযোগ আসছে কাজ দিতে পারছেন না নিয়োগকর্তারা-এর কারণ কী?

সরেজমিনে অনুসন্ধানে যে তথ্য পাওয়া গেছে- তার মূল কারণ মানুষ্যসৃষ্ট পরিকল্পিতভাবে কর্মক্ষেত্রের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে । তার মানে এর জন্য শ্রমিকরা নয় তথাকথিত সেই মুনাফালোভীরাই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দায়ী। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের প্রথম পছন্দ চায়না মালিকানাধীন কোম্পানি। চায়নিজরা-ই এই পুরো মালয়েশিয়াটাকে রাতারাতি এশিয়ার ইউরোপে পরিণত করেছে। তারা তাদের কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন - ভাতা সঠিক সময়ে প্রদান করে থাকে। চাহিদার বিপরীতে একজনকেও নিয়োগ কিংবা বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয় না।

কলিং ভিসার শ্রমিকদের কাজ না পাওয়ার সমস্যার মূলে রয়েছে তামিল, বাংলাদেশী, মালয়েশিয়া- বাংলাদেশী যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো। তাদের অধিকাংশ কোম্পানির বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে অনেক বাংলাদেশী ও মালয়েশিয়ান মালিকানাধীন কোম্পানি আছে সেখানে হাজার হাজার বাংলাদেশীর কলিং ভিসায় গিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে সার্বিক সুযোগ সুবিধার বিবেচনায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে মিজান গ্রান্ড ইন্টারট্রেডার্স এসডিএন বিএইচডি। এই কোম্পানির মালিক একজন বাংলাদেশী দাতু মিজান। যিনি একজন সাধারণ নির্মাণ শ্রমিক থেকে এখন দেশটিতে বিশিষ্ট শিল্পপতির খেতাব পেয়েছেন। তার কোম্পানিতে নিজস্ব শ্রমিকসহ অন্য কোম্পানি থেকে আসা শত শত বাংলাদেশী কর্মীরা কাজ করছেন।

নামেমাত্র কিছু কোম্পানি রয়েছে- তাদের উদ্দেশ্য কল কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা নয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য সরকারকে সাতপাঁচ বুঝিয়ে কলিং ভিসায় হাজার হাজার শ্রমিক আমদানি করার জন্য লাইসেন্স ও অন্যান্য অনুমোদন নেয়া। অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কিংবা অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকে শ্রমিক আমদানি করে প্রত্যেক শ্রমিক থেকে লাখ লাখ টাকা নগদ আয় করা। এটাই তাদের নগদ লাভ। কারণ একজন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো সব খরচসহ ১ লাখ টাকাই যথেষ্ট। তাহলে প্রশ্ন হলো বাকি টাকা কোথায় যায়? এর কথা কেউ জানে না, আর যারা জানে তারা কেউ বলে না। মালয়েশিয়ায় নিয়ে তাদের তৎক্ষণাৎ কাজ দিতে পারে না কারণ তার তো কোনো বাস্তবে কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। তখন বিভিন্ন মহলের চাপ সামলাতে বেকার শ্রমিকদের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রি করে দেয়া হয়। যারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানিয়ে কাজ করতে পারে তারাই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। আর বেশির ভাগের কপালে জেটে অবৈধ শ্রমিকের তকমা তারপর জেল জরিমানায় নিঃস্ব হওয়ার পরিণতি।

শ্রমিকরা যেভাবে বলির পাঠা
বিস্তারিত জানতে হলে এবার আমাদের একটু পেছনের দিকে তাকাতে হয়; বাংলাদেশের সরকারের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জনশক্তি রফতানিতে খরচ লাখ টাকার নিচে পড়বে বলে বার বার আশ্বাস দিলেও নানা কারণে এই আশ্বাস শেষ পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে যে সিন্ডিকেট পদ্ধতির মাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসা বন্ধ হয়েছিল ঘুরে ফিরে নানা জল্পনা কল্পনার পর ২০২২ সালে এসেও সেই অনিয়মের সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে কলিং ভিসার কার্যক্রম শুরু হলো। আর সংগত কারণেই খরচ গিয়ে পড়ছে জনপ্রতি ৫-৬ লাখ টাকা করে। ২০১৯ সালের পর সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজার নিশ্চিত করতে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের দফায় দফায় নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেই ২০০৭ এবং ২০১২ সালের সময় যেভাবে সিন্ডিকেট চক্র জগদ্দল পাথরের মতো শ্রমিকদের বুকে চেপে বসেছে ঠিক এই ২০২২ সালে এসেও সেই একই সিস্টেমের মধ্যে যাচ্ছে। পার্থক্য শুধু তখন জনপ্রতি সাড়ে ৩ লাখ আদায় হতো আর এখন তা বাড়িয়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। সিন্ডিকেট শক্তি এতই বেপরোয়া ২০০৭ থেকে ২০২২ এসে এই ১৫ বছরের তাদের থামানো যায়নি।

এতকিছুর পরও আশার কথা হলো একটু চড়া দাম দিয়ে হলেও লাখ লাখ নিরুপায় বেকার বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ চাপে নতুন করে কলিং ভিসার এপ্রোভাল স্থগিত রয়েছে তবে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ অব্যাহত আছে। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার জানান, আশা করা যাচ্ছে সর্বমোট ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। এ লক্ষ্য অর্জিত হলে মালয়েশিয়ায় থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ আরো বেগবান হবে বলে তিনি আশা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
সম্ভাবনা সত্ত্বেও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে ঘাটতির কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী লাল গালিচা, ডুবুরি আর একলা সন্ন্যাসী রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে কিশোরীর মৃত্যু জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অটোরিকশা চুরির মামলা কেএনএফ সদস্যদের আদালতে উপস্থাপন, ৫২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সকল