২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ

সিন্ডিকেট রুখতে আন্দোলনসহ হাইকোর্টে যাবেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা

মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ : সিন্ডিকেট রুখতে আন্দোলনসহ হাইকোর্টে যাবেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অবৈধ সুবিধা নিতে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র। মালয়েশিয়ার সাথে সই হওয়া এমওইউ চুক্তিতেই এই সিন্ডিকেট করার সুযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। আগের ১০ সিন্ডিকেটের হোতারাই এই সিন্ডিকেট করার পাঁয়তারা করছে।

তবে বর্তমানের এই সিন্ডিকেট প্রচেষ্টা রুখতে রাজপথে আন্দোলনসহ প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনশক্তি ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। বিমানভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিমানসহ এয়ারলাইন্সগুলোকে দায়ীও করেছেন তারা।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বিমানভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, ৩০-৩৫ হাজার টিকেট ১ লাখ টাকাতে পাচ্ছেন না বিদেশগামীরা। এজন্য প্রধানত দায়ী বাংলাদেশ বিমান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগের সিন্ডিকেটর কারণেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিন বছর বন্ধ থাকার পর গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে বাজার উন্মুক্তে সমঝোতা সই হয়েছে। এটা একটা ভাল খবর। কিন্তু, গত ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে চিঠি দিয়ে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি ও ২৫০ সাব এজেন্টকে কর্মী পাঠানোর জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা চরম অনৈতিক ও বাংলাদেশের প্রতি অবমাননাকর।

‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তিতে যারা ৩৭ হাজার টাকায়, ৪৮ হাজার টাকায় সর্বশেষ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কর্মী পাঠানোর কথা বলে সিন্ডিকেট করেছিল, তখন কিন্তু ৩ লাখ টাকার নিচে কোনো কর্মী যেতে পারেনি। সুতরাং সিন্ডিকেটের কারণে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

পুরনো জনশক্তি ব্যবসায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ১৯ ডিসেম্বর উভয় দেশের মধ্যে যে এমওইউ সই হয়েছে সেখানে একটা কজ আছে, সেটা হলো মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেক্ট করবে। আগের ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তিতেও এই কজটিই ছিল। এই কজের আওতায়, এই সুযোগেই আগে সিন্ডিকেট হয়েছে। এখনো এই সুযোগে সিন্ডিকেট হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। আগে যারা সিন্ডিকেট করেছেন তারা এখনো সিন্ডিকেট করার সুযোগ নিচ্ছেন বা চেষ্টা করছেন।

রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, এমওইউতে এই অপশনের কারণেই সিন্ডিকেট হওয়ার ব্যাপারে আমরা আতঙ্কিত। এটা বাদ দেয়ার জন্য দাবি করছি। আমরা চাই দেশের বৈধ সকল এজেন্সি ব্যবসা করার সুযোগ পাক। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীও এটাই বার বার বলে আসছেন।

তিনি বলেন, আগে যারা ১০ সিন্ডিকেট করেছেন তারাই নতুন করে সিন্ডিকেট করার অপচেষ্টায় রয়েছেন। অতীতে ১০ এজেন্সির যে সিন্ডিকেট হয়েছিল, তাদের সবার কিন্তু মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। এখন যাদের ২৫ সিন্ডিকেটের নাম শোনা যাচ্ছে অনেকেরই জনশক্তি রফতানির অভিজ্ঞতা নাই। তাহলে কিসের বিবেচনায় এই সিন্ডিকেট হচ্ছে? মালয়েশিয়ায় যাতে সিন্ডিকেট না করা হয় সেজন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা প্রয়োজনে ফের আদালতের শরণাপন্ন হবো।

বিমানের ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০-৩৫ হাজার টাকার বিমান টিকিট এখন ১ লাখ টাকাতেও পাওয়া যায় না। এতে অভিবাসন ব্যয় ব্যাপকহারে বাড়ছে। বিদেশগামীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা যখন টিকেট কাটতে সিস্টেমে ঢুকি টিকেট নাই। অনেকে গ্রুপ ফেয়ার করে তিন চার মাস আগে থেকেই ৬০ সিট কম মূল্যে নিয়ে নেয়। মজুতদারীর মতো অবস্থা হয়ে গেছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সাথে যোগসাজশ করে গ্রুপ টিকেট যারা কাটে তারা ৩-৪ মাস আগেই ৪০-৫০ হাজার টাকায় টিকেট নিয়ে নেয়। কিন্তু এই টিকেট পরে আমাদের প্রবাসীকে, বিদেশগামীকে এক লাখ, এক লাখ ১৪ হাজার টাকায় নিতে হয়। এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বায়রার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, আমাদের কিছু বিপদগামী এজেন্সির মালিক নতুন করে এই সিন্ডিকেট করছে। যাদের মধ্যে আগের সিন্ডিকেটের লোকজনই বেশি। অতীতে যদি ১০ সিন্ডিকেটের বিচার হতো তাহলে নতুন করে সিন্ডিকেট করার সাহস পেত না। সিন্ডিকেটের ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট হলে আইনানুগভাবে প্রতিহত করবো। পাশাপাশি আদালতের আশ্রয় নেব।

টিকেটের দাম অস্বাভাবিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিমানের টিকেটেও সিন্ডিকেট হয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ দায়ী। তারা যৌক্তিকভাবে টিকেট ফেয়ার নির্ধারণ করতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের মহাসচিব আরিফুর রহমান, বায়রার সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী, লিমা বেগম প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement