২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাঙ্গু নদী হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

গবেষণা তথ্য : পৌর আবর্জনায় কলুষিত হচ্ছে নদীর পানি

-

সাঙ্গু নদী একটি সম্পূর্ণ দেশীয় নদী। নদীটি ‘মিয়ানমার থেকে উৎপন্ন আন্তর্জাতিক নদী’ এ রকম একটি ভুল ধারণা প্রচারিত আছে। মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বান্দরবান পার্বত্য জেলার সর্বদক্ষিণ উপজেলা থানচি সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই নদীর উৎপত্তি। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সাঙ্গু নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮২ কিলোমিটার।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ আরশাদ-উল-আলমের নেতৃত্বে ৫৬ জন শিক্ষার্থী সাঙ্গু নদীর বান্দরবান সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের দোহাজারী সেতু পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। একাডেমিক শিক্ষাসফর হিসেবে দীর্ঘ নদীপথে এ রকম সফর একটি নতুন প্রচেষ্টা। এই সফরে তারা সাঙ্গু নদীতে মাছ আহরণে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ ও আহরিত মাছের কম্পোজিশন রেকর্ড করেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ সাঙ্গু নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানবসৃষ্ট পরিবর্তন, দুই পাড়ের উদ্ভিদ, জুমচাষ ইত্যাদি তারা অবলোকন করেন। সফরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বান্দরবান শহরের মার্মা বাজার, বান্দরবান সদরে নদীর তীর পরিদর্শন ও পৌর আবর্জনায় নদীর দূষণ পর্যবেক্ষণ করেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওই গবেষণায় উঠে এসেছেÑ মার্মা বাজারে গুইসাপ, একাধিক প্রজাতির ব্যাঙ, কুঁচে, কচ্ছপ, বিভিন্ন বন্যপাখি ও তাদের গোশত ক্রয়বিক্রয় হয়ে থাকে। শহরের কঠিন ও তরল বর্জ্য আবর্জনাবাহিত প্রায় এক ডজন পাকা ড্রেন সাঙ্গু নদীর শহর ও বাজারসংলগ্ন অংশে দেখা যায়। এসব ড্রেন বান্দরবান পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত। পৌর আবর্জনায় কলুষিত হচ্ছে নদীর পানি, দেশের সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ নদী হারাচ্ছে তার অত্যন্ত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সাঙ্গু নদীতে বেড়জাল, ফাঁসজাল, ঝাঁকিজাল, ঠেলাজাল, বড়শি ইত্যাদি মাছ আহরণের উপকরণ দেখা যায়। বেড়জালের আহরণে মৃগেল, কাবাসি টেংরা, আইড়, বাইলা, চিরিং, গলদা, চেলা, পুঁটি, ঢেলা ইত্যাদি মাছ দেখা যায়। শুকনো মৌসুমে নদীতে পানির স্রোত কম হওয়ায় প্রচুর শৈবাল জন্মাতে দেখা যায়। স্থানে স্থানে বেড়জালের খেপে শৈবাল দামে বিভিন্ন টার্গেট স্পিসিসÑ দেশীয় কার্প, আইড়, কাবাসি টেংরা, বাইলা, চিরিং ইত্যাদির সাথে অনেক নন-টার্গেট স্পিসিস মারাও পড়ে। বেড়জালের শৈবাল দামে আটকানো নন-টার্গেট স্পিসিসগুলোর বেশির ভাগই আইইউসিএন বাংলাদেশ ২০১৫ সাল অনুসারে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে হুমকিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত। বেড়জালের মাধ্যমে অপসারিত শৈবাল দামে আটকানো হুমকিগ্রস্ত মাছের মধ্যে রয়েছেÑ তিতপুঁটি, কুমিরের খিল, নাপিত কই, পাংগা ইত্যাদি। রয়েছে অনেক সংখ্যায় নল বাইম। গবেষণা পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রচুর সংখ্যায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য বেড়জালের মাধ্যমে অপসারিত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রতিদিন সংঘটিত হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। জলজ জীববৈচিত্র্যের এই ক্ষতি স্থানীয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তার চেষ্টায় রোধ করা সম্ভব। বেড়জাল টানার জন্য শৈবালমুক্ত গভীর স্থানগুলো নির্বাচন কিংবা শৈবাল সরিয়ে বেড়জাল টানার জন্য স্থান তৈরির মাধ্যমে এই ক্ষতি এড়ানো যায়। জেলেদের এই নির্বিচার নিধনের পরিবেশগত ক্ষতি, জলজ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ও তাদের ভবিষ্যৎ পেশাগত ক্ষতি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বা মৎস্য কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে সফরের মাধ্যমে বুঝিয়ে সচেতন করা সম্ভব। এই ভয়াবহ নিধন রোধ করা না হলে জলজ জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।
শিক্ষাসফর দলে আরো যুক্ত ছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা চিটু দত্ত (প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম), বিধান দত্ত (প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ) ও ফিস বায়োলজিস্ট ধীমান চৌধুরী (অতিথি শিক্ষক, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম)।
শিক্ষার্থীগণের সংগৃহীত নমুনার মধ্যে পরিবেশগতভাবে সঙ্কটাপন্ন প্রজাতি কুঁচে, তিতপুঁটি, কুমিরের খিল ইত্যাদি রয়েছে। সাঙ্গু নদীর দুই পাড়ে দেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। বর্তমান তথ্য অনুসারে দেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ১২১টি মৎস্য প্রজাতির আবাসস্থল এই নদী (আরশাদ-উল-আলম, ব্যক্তিগত যোগাযোগ)।
ড. আরশাদ-উল-আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে মিঠাপানির কয়েকটি নতুন মাছ এই নদী থেকে প্রথমবারের মতো তিনি নিজে রেকর্ড করেন, যা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ এই নদীর সুরক্ষা প্রদান জরুরি। বান্দরবান শহরসহ সাঙ্গুতীরবর্তী জনপদগুলোর পৌরবর্জ্য দূষণ থেকে এই নদী রক্ষা করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল