মেলায় নারীদের বাস্তব জীবনচিত্র নিয়ে যে বই
- কাজী সুলতানুল আরেফিন
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
বইমেলা ঢাকা ২০২০ এ লেখিকা মেহেরুন নেছা রুমার বই ‘মেঘ জলের জীবন’। লেখিকার মতে, নারীজীবনের কিছু বাস্তব দৃশ্য তিনি তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। অর্থাৎ এ বইয়ে রচিত দৃশ্যগুলো কারো-না-কারো জীবন থেকে নেয়া!
প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে রোজ রাতে চাচীর কান্নার আওয়াজ শোনা যেত। আওয়াজেই বোধগম্য হতো, কান্নাটাকে যথাসম্ভব শব্দহীন করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও মাঝে মধ্যে প্রহারের প্রচণ্ডতায় আর্তনাদের শব্দ বাইরে বেরিয়ে আসত। সেই আর্তচিৎকার আর কাতরতা অন্তর্ভেদ করে আমাকেও চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়েছে কত। মাঝরাতের সেই কান্নার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের পরিচয়। জানতাম সেই বাড়ির চাচা মধ্যরাতে মদ্যপান করে বাড়ি ফিরতেন...
(মেঘ জলের জীবন )
ছোটবেলায় একদিন দেখলাম রোকেয়া অপরাধী না হয়েও শাস্তি পেল। চরম অপমান আর অপবাদ দিয়ে তার কিশোরী মনটাকে কাঁটাতারের আঘাতে তবিত করে জীবনটাকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেয়া হলো। বয়সে রোকেয়া আমার থেকে তিন-চার বছরের বড় হলেও আমরা ছিলাম সহপাঠী এবং খেলার সাথী। রোকেয়ার সাথে তার পরিবার এবং সমাজের ব্যবহার আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিল নারীর জন্য এই পৃথিবীটা সহজ এবং সমান্তরাল নয়
(মেঘ জলের জীবন)
পাঁচ সন্তান স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও বৃদ্ধ বয়সে মা আয়েশা খাতুনের ঘরে ঠাঁই হয় না। স্বামীর ঘরেও নিজেকে পরবাসীর মতো জীবনের শেষ দিনগুলো চরম কষ্টে অতিবাহিত করতে হয়। নিজে না খেয়ে যেই সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে পাখির ছানার মতো বড় করে তুলেছিলেন, সেই সন্তানদের কাছে মা এখন বোঝা। আমার আহত জীবনের এক অনিশ্চিত অধ্যায়ের ভাবনায় কাতর হয়ে ভাবীÑ কোথায় আমার মা! আমিও একদিন মা হবো, বৃদ্ধ হবো!
(মেঘ জলের জীবন)
বেড়ে উঠতে উঠতে দেখা জীবনের আনাচ-কানাচে মনের দরদ নিয়ে, কষ্টের বাষ্প দিয়ে, আবেগের কালি দিয়ে আঁকা আমার ভাবনাগুলো কাগজে নেমে আসতে থাকল নিঃশব্দে।
নারীর জীবনের মেঘ, অন্তরপোড়া দহনের বাষ্প থেকে নেমে আসা জলের গল্প নিয়ে ‘মেঘ জলের জীবন’
একটি বইয়ের বা জীবনের কতটুকুই বা তুলে ধরে যায়, তবু চেষ্টা করলাম কিছুটা। মেঘ জলের জীবন বই থেকে আংশিক তুলে ধরলাম পাঠকদের জন্য। এ রকম হাজারো নারীর জীবনের সত্য এবং নির্মম ছবি নিজের ুদ্র যোগ্যতায় তুলে ধরেছি। আছে কিছু সফলতারও অবিশ্বাস্য গল্প।
কত শত বইয়ের মাঝে একটি ‘মেঘ জলের জীবন’ আপনাদের জন্য আমার ভালোবাসার নিবেদন।