১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিশ্চিত হোক নারীর নিরাপত্তা

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস -

পুরনো বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে পেছনে ফেলে নতুন বছরের কাছে প্রত্যাশা অনেক। নারীর জীবনযাত্রা হোক নিরাপদ এমন কিছুই যখন ভাবছি তখনই উত্তপ্ত দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বাস থেকে নামার সাথে সাথে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে যায় পাশের জঙ্গলে, ধর্ষণ করে হিংস্র জানোয়ারগুলো। রাত ১০টায় মেয়েটির জ্ঞান ফিরে, সেখানে পড়ে আছে মেয়েটির ব্যাগ, বই, খাতা ও ইনহেলার। স্বাধীন বাংলাদেশের নারীরা সর্বত্র সব সময় সব বয়সে কতটা অসহায় তা ভাবতে গেলেই শিউরে উঠে শরীর। প্রশ্ন বারবার মনে, নারী হয়ে জন্ম নেয়াটাই কি অপরাধ? মধ্য যুগে নারী জন্ম হলেই আঁতুড় ঘরেই মেরে ফেলা হতো সেই ভালো ছিল। একজন পুরুষের কাছে নারী যেন এক কামনার নাম, আর নারী যেন নিজের কাছে শত হতাশার নাম। এই হতাশার মধ্যেও আবার একটু নিরাপত্তার আশা।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর আইন, প্রচার-প্রচারণা ও উচ্চ আদালতের নানা ধরনের নির্দেশনার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না ? এ ধরনের ঘটনাগুলোতে এখন অবাক হই না, স্তব্ধ হয়ে যাই এই ভেবে কবে নারীর চলার পথ হবে মসৃণ। দেশের অতীত ইতিহাস আমাদের ভাবনায় বেঘাত ঘটায়। অবাক হই না, অবাক হতাম তখন, যখন শুনতাম দেশের উচ্চপর্যায় থেকে হুকুম এসেছে, ‘দেশের কুড়ি জেলার এমন কুড়িটি ঘটনার বিচার হবে জনতার সামনে’। শুধু হুকুমই নয়, কার্যকরী করা হবে বিচারব্যবস্থা। দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠছে নারীর জীবনযাত্রা। দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা। নারীর জীবনমান এবং সমাজ, গোষ্ঠী ও পরিবারে নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা সূচকসহ বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় দেখা যায়, ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ নারী নিজ এলাকায় নিরাপদ বোধ করেন, যা আগের তালিকায় ছিল ৮০ শতাংশ। বিশ্বের ৬০ শহরের নিরাপদ শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৫৬তম; যা ২০১৭ সালে ৪৩তম অবস্থানে ছিল। যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর গবেষণা শাখা দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ‘নিরাপদ শহর সূচক-২০১৯’ প্রকাশ করে।
যখনই কোনো ঘটনার জন্ম হয়, প্রতিটি পর্যায় থেকে নানা ধরনের হুঁশিয়ারি আসে, আসে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ফলাফলের কোনো উন্নতি নেই, তার প্রমাণ বিগত বছরগুলো থেকে বর্তমান সময়। পরিবার, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্র, ব্যক্তির মনুষত্ব প্রভৃতির দোষের কথা বলেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলছে। ২০১৭ সালে শুধু গণপরিবহনে ১৩ মাসে ২১ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে নিশ্চয়ই আমরা ভুলে গেছি। ভুলে গেছি বলেই ২০২০ সালের প্রথমে ঘটল ন্যক্কারজনক এমন ঘটনা। ১৪টি কর্মদিবসে রূপার চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও হত্যার মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। কিন্তু রায় কার্যকর হয়নি এখনো। আইন যেমন আছে তেমনি আছে আইনের ফাঁক। এই ফাঁকের কারণে অপরাধী ছাড়া পায়, ছাড়া পেয়ে আবার...
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে নারীদের একাকী ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাসে যাত্রী কম হলে সতর্ক থাকা, অধিক যাত্রীসংবলিত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা, গাড়িতে না ঘুমানো, বাসে বসে পরিবারের কাউকে ফোন করে উচ্চস্বরে নিজের অবস্থান জানিয়ে রাখা, গন্তব্যে যাওয়ার আগেই যাত্রীরা নেমে গেলে সেখানেই নেমে গিয়ে পরিবারের কাউকে ফোন করে এসে নিয়ে যেতে বলা, বাসা থেকে লোক না আসা পর্যন্ত প্রয়োজনে যাত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে নির্ভরযোগ্য মনে হলে তাকে সেখানে থাকার জন্য অনুরোধ করা, গাড়ির ভেতরে কেউ অকারণে দরজা জানালা বন্ধ করতে চাইলে এবং অনিরাপদ বোধ করলে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এগুলো নির্দেশনা, কিন্তু নারীর নিরাপত্তায় আমাদের উন্নতি দেখা যায় না। নারীরা এখন ঘরের কাজের পাশাপাশি বাইরের কাজেও অনেক এগিয়ে এসেছেন; কিন্তু চলার পথ আর কর্মস্থলের জায়গাটা ওদের জন্যে সহজ হয়নি আজো। টকশো, আলোচনা-সমালোচনায় বারবার বলা হয় নারী নেতৃত্বে দেশ চলে, নারীর ক্ষমতায়ন দেশে অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে নারী নির্যাতন হয়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। নারী কেন্দ্রিক মামলাগুলো ঝুলে আছে দিনের পর দিন। এই বিষয়ে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকার্য চলতে থাকায় একপর্যায়ে ধীর গতিতে চলতে চলতে নীরব হয়ে যায় ঘটনা। যার কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না।’
৬ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধি, যা দুর্নীতিকে সাথে নিয়ে হাঁটছে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে না। তিনি পরিষদের পক্ষ থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘নারী নির্যাতনের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের কেন হচ্ছে না?’ প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন জন্ম হতে পারে অনেক কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ ব্যবহার আর স্থান কাল ব্যক্তি দল না ভেবেই দ্রুত বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করা। শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা আমাদের জানা। সেসব বন্ধেও পদক্ষেপ নেয়া হবে, কর্মক্ষেত্র থেকে বসতবাড়ি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে নতুন বছরে এই প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement
সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৮তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ সভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে ঝুলন্ত নারীর লাশ উদ্ধার মধুর প্রতিশোধে সিটিকে বিদায় করে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ রাজশাহীতে ভুয়া তিন সেনা সদস্য গ্রেফতার ডেঙ্গুতে আরো একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ, প্রতিদ্বন্দ্বী আ'লীগ নেতাকে ইসির শোকজ বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা চরফ্যাশনে স্কুল শিক্ষিকাকে কোপানো মামলার আসামি গ্রেফতার ফরিদপুরে মাইক্রোবাস-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র

সকল