২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাক্ষর মা স্কুল

-

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ১২টি ‘সাক্ষর মা’ স্কুলের নিরক্ষর ২৬৪ মা বর্ণমালায় আলো ছড়িয়ে এখন স্কুলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে যেমন ভূমিকা রাখছেন, তেমনি বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও তালাক বন্ধে সোচ্চার হয়েছেন ১৮-৫০ বছর বয়সী এই মায়েরা। তিন বছর আগেও যারা ছিলেন নিরক্ষর।
মাত্র তিন বছর আগের কথা। স্বাক্ষর দিতে না পারায় ভোটার আইডি কার্ডে স্বাক্ষরের ঘরে দিতে হয়েছে আঙুলের ছাপ। ব্যাংক হিসাব করতে স্বাক্ষর জানতে হবে, তাই খুলতে পারেননি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ইউনিয়ন পরিষদে সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা এবং অফিস-আদালতে কাজে গেলেই স্বাক্ষর দিতে হবে, এ লজ্জায় ঘর থেকে বের হতেন না। সেই সাক্ষর জ্ঞানহীন মায়েরা বর্ণমালা ও স্বাক্ষর শিখে ঘরে ও বাইরে এখন সাবলীল। নিজেদের জানার আগ্রহের সাথে সাথে ঘরে ও বাইরে সন্তান, নাতি-নাতনীদের গৃহশিক্ষায়ও তারা এখন সহায়তা করছেন। সোচ্চার হয়েছেন বাইরের সব সামাজিক অনিয়মের বিরুদ্ধে।
শৈশবে কেউ স্কুলের বারান্দায় যেতে পারেননি আর্থিক দৈন্য, পারিবারিক অসহযোগিতা ও কন্যা হয়ে জন্মগ্রহণ করার কারণে। পারিবারিক দৈন্যে শিক্ষার আলোবঞ্চিত এ মায়েদের বর্ণমালার সাথে পরিচিত করতে একটি বেসরকারি সংস্থা (বয়স্ক সাক্ষরতা কার্যক্রম) কলাপাড়ায় চালু করে ‘সাক্ষর মা’ স্কুল।
২০১৬ সালে শেষ হওয়া এই ‘সাক্ষর মা’ স্কুলে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ১৩০ জন ও ধুলাসার ইউনিয়নে ১৩৪ জন নিরক্ষর মা এ প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার আলোতে এসেছেন। বার্ধক্যে এসে স্বাক্ষর শেখা ও বর্ণমালা পরিচয়ে সামাজিক শিক্ষার আলোতে আসা এ মায়েরা এখন সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছেন নিজ সংসার ও প্রতিবেশীদের সহায়তার মাধ্যমে।
কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের জীবনতরী বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে সাক্ষর মায়েরা এখন তাদের অবসর কাটান লাইব্রেরিতে। নাতি-নাতনী ও সন্তান নিয়ে দুপুরের অবসরে বক্স লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে তারা পাঠদান করেন। কেউ বা লাইব্রেরিতে বসেই নাতিকে বর্ণমালা শেখান। কেউ বা বাড়ির বারান্দায় বসে নিজ সন্তানকে লেখাপড়া শেখান।
সবাই দলবদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন পারিবারিক সমস্যা নিয়ে। যৌতুক, বাল্যবিয়ে, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো থেকে শুরু করে প্রতিবেশীদের জমির সমস্যা নিয়েও তারা সোচ্চার। জমির দলিল, বিয়ের কাবিনও তারা এখন পড়তে পারেন কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে। কেউ কেউ নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব ও বাকির খাতা লেখার কাজও করেন।
সাক্ষর মায়েদের প্রতিষ্ঠিত ‘জীবনতরী’ লাইব্রেরিতে বসে কথা হয় এই মায়েদের সাথে। তাদেরই একজন সীমা রানী। তিনি বলেন, যখন ছোট ছিলাম মেয়ে বলে আমাদের পড়ানো হয়নি। কিন্তু আমাদের ভাইদের ঠিকই স্কুলে পাঠিয়েছে বাবা-মা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পা না রাখা এই মায়েরা একটু বড় হলেই তাদের বসতে হয়েছে বিয়ের আসনে। এখন বুঝি, আমাদের লেখাপড়া না শিখিয়ে বাবা-মা কী ভুল করেছেন!
রেভা রানী বলেন, আমার ছোট্ট একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। আগে অক্ষর না জানার কারণে দোকানের হিসাব লিখতে পারতাম না। ‘সাক্ষর মা’ স্কুলে পড়ে এখন বাকির হিসাব যেমন লিখতে পারি, তেমনি দোকানের মালামালের হিসাবও রাখতে পারি।
দুই সন্তানের জননী লাইজু বেগম বলেন, এখন আর কেউ আমাদের ঠকাতে পারছে না। কোনটা জমির দলিল এবং কোনটা তালাকের কাগজ তা আমরা বুঝতে শিখেছি। না পড়ে টিপসই দেয়ার দিন আর আমাদের নেই। আমরা এখন পড়তে পারি।
অক্ষর না জানার কারণে, সন্তানদের সেই শিশু থেকে ঘরে গৃহশিক্ষক রেখে পড়াতে হয়েছে। আর এখন আমরা আমাদের নাতি-নাতনীদের নিজেরাই শেখাতে পারি বর্ণমালা। গল্পের বই থেকে গল্প পড়ে শোনাতে পারি। যদি এই বর্ণমালা না শিখতে পারতাম তাহলে হয়তো ঘরে এই নাতি-নাতনীরাও আমাদের দেখে হাসত। নাতি-নাতনীরা এখন স্কুলে পড়ে। নিজ ছেলেমেয়েদের স্কুলের কোনো সভা-সমাবেশে তারা যেত না স্বাক্ষর না জানার লজ্জায়। সাক্ষর মা স্কুলে পড়ে এখন তারা নাতি-নাতনীদের সাথে স্কুলে যানÑ এ কথা বলেন সাক্ষর মা স্কুল থেকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন জোসনা রানী ও শিবানী রানী। শুধু এই জীবনতরী লাইব্রেরির মায়েরা নন, তাদের মতো এখন সচেতন হয়েছেন সাক্ষর মা স্কুলের ২৬৪ জন মা। ঘরে ঘরে মা শিক্ষিত হলে সন্তান শিক্ষিত হয়। এ সন্তানেরাই ভবিষ্যতে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন তাদের উপার্জিত শিক্ষার আলোতে। এতে অন্ধকারাচ্ছন্ন উপকূলের প্রতিটি বাড়ি হবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত, যারা এখনো অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে আছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি

সকল