নারীর প্রতি সহিংসতা
- বদরুন নেসা নিপা
- ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
জন্মলগ্ন থেকেই নারীদের সামাজিক বৈষম্যের মধ্যে থাকতে হয়। একটি মেয়ে জন্ম নেয়ার পর থেকে একটি ছেলের মতো করে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। তাকে বড় হতে হয় বিভিন্ন নিয়ম-প্রথার কারাগারে। যেখানে মানসিক বিকাশের চেয়ে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য নির্ধারিত নিয়মকানুন আছে। এর বাইরে সে যেতে পারবে না। ধীরে ধীরে একটি মেয়ে নারী হয়ে ওঠে, কিন্তু সেখানে থাকে আরো বেশি বাধা। নারীরা পড়ালেখা করে যতই শিক্ষিত হোক না কেন, তবু তারা সামাজিক জীবনে পিছিয়ে। বাইরের জগতে নিজেদের বিকশিত করতে হলে নারীদের অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। নারীকে থাকতে হয় গণ্ডির ভেতরে। নারী যখন প্রতিবাদ করে বেরিয়ে আসেন শিকল ছিঁড়ে, তখন তিনি সবার চোখে হয়ে ওঠেন সমাজের খারাপ মেয়ে। এত অবহেলার পরও নারীরা নিজ পরিচয়ে পরিচিত আজ। শিক্ষা ক্ষেত্রে, কর্মজীবনে, সংসারে ও সামাজিকতায়Ñ সব ক্ষেত্রে নারী তার জীবনে এনেছেন নতুন পরিভাষা। কিন্তু খালি চোখে দেখা এই চিত্রের বাইরের চিত্রটি ভয়াবহ। এখন খবরের কাগজে প্রতিদিন দু-তিনটি করে ধর্ষণের খবর থাকছেই। সন্দেহ নেই, এই সময় দেশে ধর্ষণসহ নানা ধরনের সহিংসতা ভয়াবহ একটি সমস্যা। চলন্ত বাসে, নিজের ঘরে এমনকি সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকায় নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। আর পরিবারে নারী নিগ্রহ তো প্রতিদিনের ঘটনা।
আমাদের দেশের নারীরা নির্যাতন সহ্য করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। একজন নারী সহিংসতার শিকার হলে সেখানে নারীকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। মূলত সহিংসতা ঘটে একধরনের মানসিক অবস্থা থেকে, যা পুরুষের মনে এই ধারণা সৃষ্টি করে যে, এটা তাদের অধিকার। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অবমূল্যায়ন এবং নারীদের অর্জনকে শ্রদ্ধা না করে বরং তাদের হেয় ও উত্ত্যক্ত করার মানসিকতা থেকেও আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়। আমরা যতই শিক্ষিত হই না কেন, আমাদের বেড়ে ওঠায় নারী ও পুরুষ সম্পর্কে প্রচলিত সামাজিক কিছু ধারণা আমাদের মনে অনেক আগেই গেঁথে গেছে, যা নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ। আমাদের সমাজে বেশিসংখ্যক মানুষ মনে করে, পুরুষেরা তুলনামূলক বেশি ক্ষমতাশালী। তাই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারাই গ্রহণ করবেন। ক্ষমতার এই অসমতা পুরুষদের আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
আমাদের প্রথাগত ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।