২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বহুমাত্রিক প্রতিভায় প্রোজ্জ্বল চেমন আরা

-

অধ্যাপিকা চেমন আরা। হাসি-খুশি প্রাণবন্ত মানুষ। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক চেমন আরা অবসর গ্রহণ করেছেন দীর্ঘদিন। তারপরও তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত আছেন। তরুণদের বইমুখী করতে নেন বিভিন্ন উদ্যোগ। অধ্যাপিকা চেমন আরা ১৯৩৪ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত ‘চাটগাঁ মৌলবিবাড়ি’তে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা এ এস এম মোফাখখার ও মা দোরদানা খাতুন।
শিক্ষা
মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯৪১ সালে চট্টগ্রাম শহরের গুলএজার বেগম স্কুলে ভর্তি হন। কয়েক বছর পর বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান ও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে ঢাকায় চলে আসেন ও সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন নাজিম উদ্দিন রোডস্থ মুসলিম গার্লস হাইস্কুলে। ১৯৪৯ সালে তিনি কামরুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্স শ্রেণীতে। তিনি সে সময় তিন সন্তানের জননী। ১৯৫৬ সালে তিনি বাংলায় বিএ অনার্স ও পরের বছর এমএ পাস করেন।
কর্মজীবন ও শিক্ষকতা
এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ গার্লস হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগ দেন এবং ১৯৫৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রামের শিক্ষাবিদ বাদশা মিয়া চৌধুরীর চেষ্টায় প্রথম মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনার দায়িত্ব পায়।। ১৯৬১ সালে সরকারি ঢাকা কলেজে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি বদলি হয়ে ইডেন সরকারি মহিলা কলেজে আসেন। ১৯৬৯ সালে বদরুন্নেসা সরকারি গার্লস কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। পরে ১৯৭০ সালে তিনি আবার ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮২-৮৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
ভাষা আন্দোলন ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান
১৯৪৭ সালে অধ্যাপিকা চেমন আরা সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী থাকা অবস্থায় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন। দশম শ্রেণীতে পড়াকালে ১৯৫০ সালে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম তাত্ত্বিক সংগঠক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর সাথে চেমন আরা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৪-৫৫ সালে গঠিত ‘ছাত্রী পরিষদ’-এর সভাপতি নিযুক্ত হন।
সাহিত্য চর্চা
অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে চেমন আরার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সৈনিকে। এরপর সাপ্তাহিক সৈনিক, চট্টগ্রামের সাপ্তাহিক কোহিনুর, কলকাতা থেকে আবদুল আজিজ আল আমান সম্পাদিত কাফেলাসহ সব পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। কোহিনুর পত্রিকায় তিনি ‘নাসরিন’ ছদ্মনামে লিখতেন। এ পর্যন্ত তার লেখা ও প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা : ১. হৃদয় নামের সরোবরে (গল্পগ্রন্থ), ২. ঘরে ফেরা ৩. ওমরা হজ্বের স্মৃতি ৪. কান্না হাসির এই মেলায় ৫. স্বাগত ভাবনা ৬. নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী ৭.সত্তরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে এবং শিশুতোষ গ্রন্থ ১.বাবুর ফুলের বাগান, ২. সিলমির প্রথম পাঠ ৩. তানিয়ার যত কথা। সম্পাদনা করেন অনন্য জীবন সাধক (এএসএম মোফাখখার) ইয়াদগারে বখতিয়ার, সহজ মিলাদ পাঠ, সুচরিতা (মহিলাদের ঘরোয়া মাসিক পত্রিকা) ও শাহেদ আলী স্মারকগ্রন্থ নামে ৫টি সম্পাদিত গ্রন্থ রয়েছে।
স্বীকৃতি ও সম্মাননা
অধ্যক্ষ চেমন আরা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান, শিক্ষকতা, সাহিত্য-সেবা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অবহেলিত নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে অবদানের জন্য যেসব সম্মাননা ও স্বীকৃতি লাভ করেনÑ
২০০৪ সালে মহিলা সাংবাদিক ফোরাম পুরস্কার।
২০০৪ সালে ফুলের মেলা জাতীয় শিশু সংগঠন পুরস্কার।
২০০৬ সালে কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার।
২০০৭ সালে চিল্ড্রেন অ্যান্ড উইমেন ভিশন ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক।
২০০৮ সালে নবীনকণ্ঠ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পুরস্কার।
২০০৮ সালে জালালাবাদ ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাসন রাজা সম্মাননা।
এই বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মহান মানুষটি এখন ছিয়াশি বছর বয়সে অবস্থান করছেন। তিনি গত একমাস অসুস্থ অবস্থায় গুলশানের ইউনাইটেড হসপিটালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এখন আগের তুলনায় একটু সুস্থ আছেন। আমি তার দীর্ঘ জীবন প্রত্যাশা করি। সেই সাথে সুস্থতা কামনা করি, সবার কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement