২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্মাননা পেলাম ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর হাত থেকে

-

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রোজ শুক্রবার দিনটি আমার জন্য অন্যরকম এক পাওয়ার দিন, সম্মানের দিন। বিকেল ৫টা বাজতে বাজতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় নয়াপল্টনে অবস্থিত পল্টন টাওয়ারের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তন। অনেক শিশু-কিশোর, অভিভাবক, লেখক পাঠকের এই মিলনমেলার উদ্বোধক ছিলেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। লেখক মো: সামছুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ দীদার বখ্ত। বিশেষ অতিথিরা যারা ছিলেন তেজগাঁও কলেজের উপাধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা, লেখক মহিউদ্দিন আকবর, গীতিকার এম আর মনজু, ড. মো: শাহজাহান, অভিনেতা এ বি এম সোহেল রশিদ, ইঞ্জিনিয়ার শাফকাৎ আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিশ্ব পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী। শিশু বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন সমৃদ্ধা শামস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলেয়া বেগম আলো, সম্পাদক ও প্রকাশক, কচিপাতা। সঞ্চালনায় ছিলেন এ বি এম সোহেল রশিদ, মানসুর মুজাম্মিল ও আসমা আক্তার মৌসুমী। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা শিশু-কিশোররা আসে তাদের অভিভাবকদের নিয়ে। আসেন ‘কচিপাতা’ ম্যাগাজিনের লেখক ও পাঠকরা। ঢাকা থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর পত্রিকা কচিপাতার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও শিশু-কিশোরদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
দৈনিক পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লিখছি। লিখছি শিশুদের নিয়েও সচেতনতাবিষয়ক লেখা। সেভাবে লিখছি কচিপাতা শিশুতোষ পত্রিকায়। কচিপাতা ম্যাগাজিন প্রথম প্রকাশ পায় ২০১০ সালে। রেজিস্টারভুক্ত হয় ২০১৭ সালে। রেজিস্টার হিসেবে দুই বছর হলেও পত্রিকার বয়স ৯ বছর। কচিপাতার সম্পাদক আলেয়া বেগম আলো আপু নিমন্ত্রণ করেন কয়েক দিন আগেই। সময়ের খুবই অভাব, কী করে যাবো। তাও আবার অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হবে। ঘর সংসার আমায় ছুটি দিতে চায় না, ভাবছি কী করে যাবো। কিন্তু যখন শুনলাম উদ্বোধক হলেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। তখন মনস্থির করি যে করেই হোক যাবো। অন্তত কাছ থেকে দেখতে পাবো একজন ভাষাসৈনিককে। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে, পড়তে আর ‘ভাষা আন্দোলনে নারীর অবদান’ লেখাটা লিখতেই ভাষাসৈনিকদের অনেক কথা জেনেছি। ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন জীবিত থাকতে বাংলা একাডেমিতে দেখা হয়েছে কথা হয়েছে। আর আজ যেতে পারলেই ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর সাথে দেখা হবে। সকাল থেকে অনেক অসুস্থ থাকার পর ও গিয়েছে একমাত্র ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু আপাকে দেখার জন্য। আমার কাছে উনি বাংলা বর্ণমালা, আমার ভাষা, আমার দেশ, আমার মাটি, আমার জন্মভূমি। আপার হাত থেকে সম্মাননা নেয়ার পর ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু আপাকে আমার সম্পাদিত ‘আকাশের ঠিকানায় চিঠি’ তিন কপি বই আপার হাতে তুলে দিই। চিঠির বই শুনে আপা খুব খুশি হন, বলেনÑ ‘বাহ! এই সময়ে চিঠির বই, বেশ লাগল।’ বিশ্ব পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী আপুকেও ‘আকাশের ঠিকানায় চিঠি’ তিন কপি বই হাতে তুলে দিই। বই হাতে এলিজা বলেন, ‘চিঠি তো হারিয়েই গেছে আমাদের সমাজ থেকে। আমিও চিঠি লিখি, লিখব আপনার পরের সংখ্যায়।’ জাতীয় সঙ্গীত দিয়েই শুরু হয় অনুষ্ঠান। কচিপাতার থিম সং গায় কচিপাতার শিশু-কিশোররা। ভ্রমণকন্যা এলিজা বিনতে এলাহী তার ৬৪ জেলা ভ্রমণ ও বিশ্বের নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং শিশুদের উদ্দেশ্যে গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন। প্যারেন্টিং নিয়ে কথা বলেন আকাশ আহমেদ। মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়ে কাজ করা ব্যাংকার শামীম আহমেদ মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়ে করা কাজপ্রজেক্টর এ প্রদর্শন করেন।
কচিপাতার উপদেষ্টাদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। কচিপাতায় নিয়মিত শিশুতোষ লেখা লেখার সম্মাননা প্রদান করা হয় আমাকে। আরো সম্মাননা দেয়া হয় অল অ্যাবাউট দ্যা চিলড্রেন, কাব্যখেয়াল, ঝরা ফুল ও আগামীর বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনকে। সঞ্চালক টিমুনী খানকে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে ২৯ বছর সঞ্চালনা করার জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। কচিপাতার বিভিন্ন সংখ্যায় প্রচ্ছদ শিশুশিল্পী হিসেবে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান হয়। সবশেষে আপ্যায়ন ও গ্রুপ ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।


আরো সংবাদ



premium cement