২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমরা চাই, এ সুন্দর পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটুক : আমাল ক্লুনি

ভিন দেশ
-


আমাল ক্লুনি। তার জন্ম লেবাননের রাজধানী বৈরুতে, ১৯৭৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। তিনি বেশি পরিচিত আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের একজন কর্মঠ লেবানিজ-ব্রিটিশ ব্যারিস্টার হিসেবে। নানা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কাজ করেও যথেষ্ট আনন্দ পান আমাল ক্লুনি। এসব কাজ করতে গিয়ে তার সাথে নোবেল বিজয়ী নাদিয়া মুরাদ, মিসরীয়-কানাডীয় সাংবাদিক মোহামেদ ফাহমিসহ আরো অনেক গুণী ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস কর্তৃক ২০১৯ সালে গণমাধ্যম স্বাধীনতার ওপর বিশেষ দূত নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ পান তার সন্তোষজনক কাজের জন্য।
অনেকে আমাল ক্লুনিকে আমাল আমালুদ্দিনও বলে থাকে। কারণ তার বাবার নামের শেষে ‘আমালুদ্দিন’ শব্দটি রয়েছে। তার নামের প্রথমাংশ নেয়া হয়েছে আরবি শব্দ ‘আমাল’ থেকে। আমাল অর্থ ‘আশা’। অনেকে বলেন, সমস্যাপীড়িতদের মুখে হাসি ফোটাবেন সেই চিন্তা থেকেই নামের প্রথমাংশ আমাল হয়েছে। লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় ক্লুনির বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। ওই সময় তার পরিবার লেবানন ছেড়ে চলে যান বাকিংহামশায়ারের ডেরোডস ক্রস নামক স্থানে। অবশ্য তার বাবা রামজি আমালউদ্দিন ১৯৯১ সালের দিকে লেবাননে ফিরে যান। তার মা বারিয়া মিনকাস উত্তর লেবাননের ত্রিপোলির মুসলিম সুন্নি নারী। যিনি ছিলেন প্যান-আরব পত্রিকা আল হায়াতের বিদেশি সম্পাদক। তিনি আরো ছিলেন পাবলিক রিলেশন কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন এক্সপার্টের প্রতিষ্ঠাতা। এমনকি একজন নামকরা রাজনৈতিক সাংবাদিকও ছিলেন তিনি। ক্লুনির মা বলেন, ক্লুনির জন্মের আগে মেয়ে সম্বন্ধে আমি যেমনটা আশা করেছিলাম সৃষ্টিকর্তা আমার মনের আশা পূরণ করেছেন। এজন্য আমি স্রষ্টার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। কারণ এমনিতেই ক্লুনি লেবাননের গৃহযুদ্ধের স্থবিরতার মধ্যে জন্ম নিয়েছিল। এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ধারণের সবকিছু ঠিকঠাক রাখা খুবই কষ্টের বলেই আমি মনে করি। ক্লুনি লেখাপড়া করেন বাকিংহামশায়ারের লিটেল চালফন্ট নামক স্থানের ড. চ্যালনারস হাইস্কুলে। তার পরের লেখাপড়ার স্থান হলো সেন্ট হুগস কলেজ, অক্সফোর্ডে। সেখান থেকে তিনি লাভ করেন এক্সিবিশন ও স্রিগলে পুরস্কার। হুগস কলেজ, অক্সফোর্ড থেকে আইন বিষয়ে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন ২০০০ সালে। ২০০১ সালে এলএলএম পড়ার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ল’তে। তিনি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন বিনোদন আইনেও। যার কারণে লাভ করেন জ্যাক জে কাউড স্মৃতি পুরস্কার। তিনি বিচারকের সাথেও দাফতরিক কাজ করেন সুনামের সাথে।
আমাল ক্লুনি আইন পেশায় বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন হন ইউনাইটেড স্টেটস ও ইউনাইটেড কিংডমে। তিনি নিউ ইয়র্কে বারে প্রবেশ করেন ২০০১ সালে। আর ২০১০ সালে বারে প্রবেশ করেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে। ওকালতি করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট ও ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসসহ হুগের আন্তর্জাতিক আদালতে। ২০১৪ সালে সেরা ব্রিটিশ স্টাইলিস্ট নির্বাচিত হন ব্রিটিশ ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ডে। বারবারা ওয়াল্টারের মোস্ট ফ্যাসিনেটিং পারসন নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে।
শ্রেণিকক্ষে, আদালত কক্ষে, সম্প্রদায়সহ সব জায়গায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জোর চেষ্টা চারান ক্লুনি। তিনি ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট। এ ফাউন্ডেশন তিনি তার স্বামী জর্জ ক্লুনির সাথে এক হয়ে গড়ে তোলেন ২০১৬ সালে। ক্লুনি মেধাবৃত্তি চালু করার জন্যও যথেষ্ট পরিশ্রম করেন। এ কর্মসূচিতে বিশেষ অগ্রাধিকার পায় লেবাননীয় মেয়েরা। তারা আন্তর্জাতিক ব্যাকালরেট কর্মসূচিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
‘আমাল ক্লুনি খুবই কার্যকরি এবং জ্যোতিময় অ্যাডভোকেট। জনগণ বা বিচারপ্রার্থীদের সাথে কাজ করেন বেশ ভালোভাবে। তিনি রীতিমতো মানবাধিকারে অভিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রেও মূল চালিকাশক্তি। সমালোচনাকারীদের মতে, ‘আমাল ক্লুনি যারপরনাই বুদ্ধিমতি, সত্যিই উজ্জ্বল এবং অন্যতম আইনজ্ঞ। অর্থাৎ পেশাগত কাজ বেশ ভালো বোঝেন।’ যুদ্ধ বা দ্বন্দ্বে মেয়েরা যাতে যৌনসন্ত্রাসের শিকার না হন, সেজন্যও কাজ করে থাকেন। যোগ্যতার গুণে তিনি ২০১৯ সালে ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে কাজ করেন। ইংরেজি, আরবিসহ আরো কিছু ভাষা তার ভালোই দখলে। সে কারণেই বিভিন্ন ভাষাভাষীর সাথে কাজ করতে তার কোনো সমস্যা হয় না। আমাল ক্লুনি স্কলারশিপের প্রথম দিকে অরোরা জিউমেনিটেরিয়ান ইনিশিয়েটিভের অংশীদারী করেন।
বিভিন্ন ভাষা জানার কারণে তাকে অনেক সময় নানা স্থানে বক্তৃতা করতে হয়েছে। বক্তৃতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভেনডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনেও। সেখানে তিনি বলেন, যাদের সমাজ বদলে দেয়ার মতো সুন্দর মানসিকতা আছে, অন্যদেরও সাহসী হতে অনুপ্রেরণা দেয় তারা। বলা যেতে পারে, এভাবে নিশ্চিত হয় পরবর্তী প্রজন্মের সাম্য ও অধিকার। সাহসী মানুষদের ধন্যবাদ দিতে গেলেও এখনো অনেক কিছু করার আছে। সাহসী মানুষেরা ভালো বা গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয় বলে আমরা দেখছি নানামুখী পরিবর্তন।
ক্লুনি বলেন, এখনো কিন্তু থেমে যায়নি নারীর শারীরিক হেনস্তা হওয়ার ন্যক্কারজনক ঘটনা। নারীর ওপর নানা বিধি-নিষেধ বা কড়াকড়ি আরোপ হচ্ছে ভ্রমণ, কর্মক্ষেত্র, সম্পত্তির মালিকানাপ্রাপ্তিসহ নানা ক্ষেত্রে। এসব সমস্যা দূরীকরণেও সাহস চাই। ধৈর্যও বেশ প্রয়োজন।
আরো বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকের তুলনায় সংবাদকর্মীরাও নানা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। হস্তক্ষেপ করা হয় সংবাদপত্রের স্বাধীনতায়ও। এসব ক্ষেত্রেও নানা বাধা প্রতিহত করতে আমাদের সাহসের বিকল্প নেই। নেতারা যখন ‘শরণার্থী’ আর ‘সন্ত্রাসী’ এ দুটো শব্দকে এক করে গুলিয়ে ফেলেন, তখনই এ সংক্রান্ত শঙ্কা আরো বেশি দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রেও সাহসী তরুণদের খুবই প্রয়োজন। আমরা চাই, আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটুক।

 


আরো সংবাদ



premium cement