১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সফলতার জন্য ধৈর্য ও বিশ্বাসের ভিত্তি সুদৃঢ় করা দরকার : ফাতেমা ইসলাম লিমু ‘ড্রিম স্টার’ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী

-

ফাতেমা ইসলাম লিমু মূলত একজন অনলাইন বিজনেস ওম্যান। মাত্র ১০ হাজার টাকার জুয়েলারি দিয়ে যার পথচলা। প্রথম দিনেই ফেসবুক লাইভে এসে এক ঘণ্টার মধ্যে সব অর্নামেন্ট বিক্রি, সাথে সাথেই বিকাশে ১০০% লাভসহ মূলধন উঠে এলো। লিমু নিজেও ভাবতে পারেননি এতটা সাড়া পাওয়া যাবে। প্রথম দিনের আনন্দের রেস ধরে তার এই জগতে যাত্রা শুরু। কিন্তু ব্যবসা বা কাজের শুরুটা তার আরো অনেক আগের থেকে। স্বামী নজরুল ইসলামের অঈঈঅ ইনস্টিটিউট, নাম ঞযব ঢ়ৎড়ভবংংরড়হধষ ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ ইধহমষধফবংয সংক্ষেপে চওই তে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে আজকের অবস্থানে আসার সুযোগ দিয়েছে।
অত্যন্ত মিশুক আর সহজ সরল টাইপের মেয়ে লিমু ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন স্বনির্ভর হওয়ার। লিমুর যেহেতু কোনো ভাই নেই সুতরাং বাবাও মেয়েদের নিয়ে তেমনি স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো মেয়ে মিরপুর মনিপুর আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার ঢাকা কলেজ অব মেডিক্যাল টেকনোলজি কলেজে প্যাথলজির ওপর তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি করে দেন, যাতে পাস করার পর পরই চাকরি বা নিজে কিছু করার যোগ্যতা অর্জিত হয়। কিন্তু এই কলেজে পড়ার সময়ই তার বিয়ে হয়ে যায়। তারপর ‘প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির’ মাইক্রো-বায়োলজিতে অনার্সে ভর্তি হন। এর মধ্যে স্বামী পিআইবিতে দায়িত্ব পান কিন্তু কনসিভ করার কারণে তা আর কন্টিনিউ করতে পারেন না। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হন পাশাপাশি বিডি স্টার নামে একটি ড্রেসের ব্যবসা শুরু করেন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিরাই ছিল তার আসল ক্লায়েন্ট। এ ছাড়াও অন্য পরিচিতদের পরিচিতরাও ড্রেস কিনতেন। পরপর দু’টি সন্তানের জন্মও বেড়ে ওঠাÑ এতে ব্যবসায় মনোযোগ দেয়া যাচ্ছিল না। অগত্যা সেটা ছেড়ে দিতে হলো। কিন্তু লিমু নিজের ও বাবার স্বপ্ন পূরণে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্বামী নজরুল ইসলামও খুবই সহানুভূতিশীল একজন মানুষ। তিনি সারা দিন অফিস নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে মহাব্যস্ত থাকেন। তাই স্ত্রীকে বাড়তি সময় দিয়ে সাহায্য করতে না পারলেও মানসিক সাপোর্ট তার ছিল শতভাগ। তাই স্বামীর পরামর্শে দৃঢ় মনোবল নিয়ে শুরু করলেন অনলাইন বিজিনেস 'উৎবধস ঝঃধৎ'-আর এই ড্রিম স্টারই হচ্ছে ফাতেমা ইসলাম লিমুর স্বপ্ন পূরণের চাবিকাঠি। লিমু রাত-দিন খেটেখুটে কাজ করছেন, এই ফেসবুক লাইভে যাচ্ছেন, প্রডাক্টগুলো প্যাকেট করে কুরিয়ারে পাঠাচ্ছেন। বিকাশে টাকা আসছে, তা ক্যাশ করছেন। প্রথম সব কিছু একরকম একাই সব করছিলেন। অতঃপর স্বামী নজরুল ইসলাম দেখলেন বাহ্ ঘরে বসে স্ত্রী লিমু তো খুব ভালোই করছেন, তাই তিনি নিজ অফিসের স্টাফদের উৎবধস ঝঃধৎ-এ কাজ করার নির্দেশ দিলেন। এতে লিমুর ব্যবসার উন্নতি হতে থাকল। গাণিতিক হারে নয়, জ্যামিতিক হারে। বর্তমানে তার কর্মী সংখ্যা বেশ অনেকজন। এতে বাড়তি লোকের কর্মসংস্থান হলো। অন্য দিকে ক্রেতারা দেশীয় কাপড়ের জামাকাপড় একদম মিনিমাম দামে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। লিমুর কথা, আমি যদি আমার কাজের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারি অর্থাৎ দেশের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে না পারি তাহলে কি আর আত্মতৃপ্তি আছে!
প্রথম দিনের ১০ হাজার টাকার মূলধনের লাভ থেকে দেশীয় ড্রেস কিনলেন। তা বিক্রি করে আরো বেশি লাভবান হলেনÑ এমনি করে বছর গড়িয়ে গেল। তাই স্থায়ী একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে বসুন্ধরা শপিংমলের ৩ নম্বর লেভেলের এ-ব্লকে ১৯ নম্বর ও ২২ নম্বর দু’টি শোরুমের উদ্বোধন করলেন গত ১ বৈশাক। আলহামদুলিল্লাহ, দোকান দু’টি নিয়ে যতটা ভয় ও দ্বিধা ছিল এই গেল ঈদে দ্বিগুণ-তিনগুণ সেল হয়ে তা পুষিয়ে গেছে। কারণ ক্রেতারা ফেসবুক লাইভ থেকে স্ক্রিনশর্ট নিয়ে সরাসরি তার দোকানে গিয়ে প্রডাক্ট মিলিয়ে কিনে নিয়ে যায়। এতে একটা জিনিস প্রমাণিত হচ্ছে উৎবধস ঝঃধৎ-এর কথায় ও কাজে ১০০% সততা রয়েছে। সুতরাং এর উন্নতি ভবিষ্যতে অবধারিত।
বর্তমানে তার এ অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, কর্মজীবনে নারীর ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে শুরুতেই পথটা অতটা সহায়ক না হলেও দিনে দিনে তা যেন সফলতার মুখ দেখে তার জন্য ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি সুদৃঢ় করা দরকার। আর ঘরের মানুষের সহযোগিতা নারীর পথচলাকে মসৃণ করে তুলে, যা আমার স্বামী নজরুল ইসলাম প্রতি মুহূর্ত করছেন। তিনি আরো বলেন, নারী উন্নয়নের জন্য শুধু নারীই কথা বলবে তা নয় বরং সামগ্রিক উন্নয়নই নারীর উন্নয়নকে এগিয়ে নেবে। তবে আমাদের দেশের নারীরা যেহেতু সামাজিক কারণে পিছিয়ে আছে, তাই নারীর জন্য বিশেষ এবং সমন্বিত সুযোগ দরকার।
জেন্ডার সহায়ক কাজের পরিবেশ তৈরির জন্য বাজেট হওয়া উচিত।
আমাদের সমাজের নারীরা যেহেতু পিছিয়ে সেহেতু নারী উন্নয়নে বিভিন্ন কৌশল ও ধ্যান ধারণার বাস্তবায়ন দরকার। পেশাগত জীবনে সফল হতে হলে বিশেষ একটা বিষয়ে মনোযোগ দেয়া এবং তাতে শ্রম, মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ করা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement