১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধর্ষণ আর কত

-

আমরা দর্শক তাই ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারি না। পারি না একটু শান্তিমতো ঘুমাতে। তাই আমাদের আতঙ্কের মধ্যেই দিনগুলো অতিবাহিত করতে হচ্ছে। যেকোনো কাজে বের হলেও আতঙ্কে থাকতে হয় আমার ছোট্ট মেয়েটা এখন কী করছে! ঠিক আছে তো! গোসলে ঢুকলে তখনো ভাবি আমার মেয়েটা না বলে ছাদে একাকী চলে গেল কি! ক্লান্তিতে বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিলে চোখ বন্ধ করার আগেই আতঙ্কিত হয়ে উঠে যেতে হয়, মেয়েটা কোথায় গেল!!! এটা কী ধরনের শাস্তি আমাদের ওপর! মেয়ে জন্ম দিয়ে আজ এ দেশের বাবা-মায়েরা কি অপরাধ করেছে, যে একটু শান্তিমতো ঘুমাতেও পারবে না? সারাক্ষণ এক অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত থাকতে হবে!
৫ জুলাই ১৯ শুক্রবার, সন্ধ্যার পর শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নবম তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে ৭ বছরের শিশু সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনের ছয় তলায় পরিবারের সাথে থাকত সায়মা। বাবা আবদুস সালাম ঢাকা নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে পড়ত সে।
আবদুস সালাম জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সায়মা তার মাকে বলে, আমি উপরে পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, একটু খেলাধুলা করতে (সে উপরের ফ্ল্যাটে প্রায়-ই মাসহ বা মা ছাড়াও নিয়মিত যেত খেলতে)। এরপর থেকে নিখোঁজ হয় সায়মা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে গলায় রশি দিয়ে বাঁধা ও মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পান।
এরপর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সায়মার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতনের সব প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পুলিশি তদন্তে ধর্ষক হিসেবে রঙমিস্ত্রি হারুনকে শনাক্ত করা হয়। গত ৭ জুলাই সায়মার বাবার দায়ের করা মামলায় তাকে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায়, প্রথম পাতায় বা কোনো না কোনো পাতায় ধর্ষণের ঘটনা নিত্যকার সাধারণ একটি সংবাদ শিরোনাম। এ বছরের প্রথম দিনই অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ২০১৯, সোমবার রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় চার সন্তানের জননী পারুলকে গণধর্ষণ ও তার স্বামী-সন্তানদের ব্যাপক মারধর করে নরপশু সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীনেতা ধর্ষক সোহেল ও বাকি ধর্ষকদের হয়ে যারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের আমরা কী বলতে পারি? মানবিকতা আজ লুণ্ঠিত, তাই আতঙ্কিত হয়ে দিনাতিপাত করাই আমাদের প্রাপ্য। আমরা কি পারি না ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাতে, যাতে ধর্ষক নামক পশুগুলোর মনে সে স্পৃহা কখনো জেগে না ওঠে।
পত্রিকা মারফত জানতে পারি, গত বছর ৩৫৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল আর ২২ জন শিশু মারা যায়। এ বছর সংখ্যাটি মধ্য জুনের ভেতরই তার অধিক হয়েছে। জানি না বছর শেষে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হবে কিনা!!! অর্থাৎ ৩৯৯ জন শিশু ২০১৯ এর জুন পর্যন্ত ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে এবং ১৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এক ছেলে শিশুও আছে। শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যার একই দিন টিভিতে নিউজ দেখি এক মাদরাসা হুজুরের ১২ শিশুকে বলাৎকার। আমাদের দেশের ছেলে শিশুগুলোও ধর্ষক নামক নরকীটগুলোর থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
এখন একটা জরিপের পরিসংখ্যান পাঠক সমীপে পেশ করতে চাচ্ছি। বছরের প্রথম সাড়ে চার মাসে (জানুয়ারি থেকে ১৪ মে) ৩৪৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ সময় এক হাজার ৪৯০ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭০ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সাড়ে ৪ মাসে ৩৪৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এর মধ্যে ৩৮ জন শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়। প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২টি এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। ১০ শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া ৩৮ শিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। এগুলো হলো জরিপ চালানোর পর প্রাপ্ত তথ্য। ভেতরে ভেতরে আরো কতশত শিশু এ নির্মমতার শিকার হয়েছে তা কেবল ওই শিশু ও তার পরিবারই জানে।
এখন প্রশ্ন হলো, এ বিকৃত নরপশুদের থামাবে কে?

 


আরো সংবাদ



premium cement