এক সাহসী নারীর অদম্য লড়াই ও আমাদের লজ্জা!
- ০১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
একসময় আমাদের বলা হতো বীর বাঙালি। আজ এই বীর বাঙালি তকমা মুছে গিয়ে আমাদের ললাটে বসতে চলেছে ভীতু আর স্বার্থপরতার উপাধি। আমরা এখন শুধুই নিজের কথা ভাবতে ভালোবাসি। আমি তো ভালো আছি! কী দরকার অন্যের বিপদে এগিয়ে এসে ঝামেলায় জড়ানোর? কিন্তু এটা ভেবে দেখি না যে, এমন চলতে থাকলে হায়েনাদের দাপট বাড়তে বাড়তে একদিন সীমা ছাড়িয়ে যাবে। আর পরবর্তী শিকার হয়তো আমরা নিজেরাও হতে পারি!
বরগুনায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও দুর্বৃত্তের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না সদ্য বিবাহিত এক তরুণী। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে তার স্বামী রিফাত শরীফকে (২৫) গুরুতর জখম করে। এরপর বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পাশে থাকা অনেকে এ তাণ্ডব দেখলেও কেউ সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে বিকেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সাথে আয়শা আক্তার মিন্নি নামের ওই তরুণীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামে এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এর জের ধরে গতকাল বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দেশী অস্ত্রসহ সদলবলে ওঁৎপেতে থাকে নয়ন। রিফাত ও তার স্ত্রী মিন্নি সকালে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা রামদা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়। এ সময় মিন্নি তাদের বাধা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তার বাধা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা রিফাতের সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। পরে হাসপাতালে রিফাত মারা যায়।
ছিঃ! একি লজ্জা আমাদের? এই লজ্জা কী দিয়ে লুকাব আমরা? একজন নারী তার স্বামীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য লড়ে যাচ্ছে, আর আমরা অনেকেই পাশে তাকিয়ে তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখেছি! বিশ্বজিতের কথা মনে আছে? সে হত্যাকাণ্ডের আসামিদের যদি ফাঁসি হতো, আজ হয়তো এমন দৃশ্য আবার দেখতে হতো না!
কাজী সুলতানুল আরেফিন