২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ভিন দেশ

এ পুরস্কার কৃষ্টি-সভ্যতা ও সংস্কৃতির মাইলফলক : জোখা আলহারথি

-


জোখা আলহারথি। ওমানের প্রথম নারী ঔপন্যাসিক তিনি। আরব বিশ্বের প্রথম লেখক হিসেবে তিনিই জিতে নিয়েছেন এ বছরের (২০১৯) ম্যানবুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। এ পুরস্কার পেয়েছেন দেশটির পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় আল আওরাফি গ্রামের একটি পরিবারের তিন বোনের জীবনের গল্প নিয়ে লেখা ‘সিলেসটিয়াল বডিস’ বইয়ের জন্য। তারা ওমানের ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা-পরবর্তী সময়কালে ক্রমপরিবর্তনশীল সংস্কৃতি ও সমাজের প্রত্যক্ষদর্শী। গল্পটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তখনকার সমাজের মধ্যবিত্তদের ম্যানেজ করা বা মানিয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টার বিষয়টি। আলহারথির লেখা অনুবাদ করা হয়েছে ইংরেজি, সার্বিয়ান, কোরিয়ান, ইতালিয়ান, জার্মান প্রভৃতি ভাষায়। তার কাজ বা লেখার মধ্যে অসাধারণ গুণাবলি রয়েছে বলেই মনে হয় এত বেশি ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে। তার কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে বানিপাল ম্যাগাজিনে। এটি একটি ইংরেজি সাহিত্য ম্যাগাজিন, যা ইউনাইটেড কিংডমের একটি প্রকাশনা পত্রিকা। লিবিয়া, আরব, আমেরিকা, ইরাক, ইয়েমেন প্রভৃতি দেশের সাহিত্যবিষয়ক লেখা ও সমসাময়িক বিষয় ছাপায় এটি; যা বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। পুরস্কার গ্রহণের পর (লন্ডনের রাউন্ডহাউজে) জোখা আলহারথি উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, খুবই সমৃদ্ধ আমাদের এই আরব সংস্কৃতি। এমন পুরস্কার পাওয়া মানে এসংক্রান্ত কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ দেবে। অনেকে বলেছেন, তার এই শিল্পকর্ম শুধু আরব বিশ্বে নয়, গোটা বিশ্বে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। তিনি আরো বলেন, আমি বইটি লিখেছি ওমানের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই। এই বইতে আছে স্বাধীনতা, ভালোবাসা প্রভৃতি মানবিক অনুভূতি বা গুণাবলির বিষয়ও। এটি পড়ে আন্তর্জাতিক পাঠকেরাও লাভবান হতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
বুকার জয় করা বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানুষের দাসত্বের বিষয়টিও। যদিও ওমানের দাসপ্রথা বিগত ১৯৭০ সালের দিকে প্রায় বন্ধ করা হয়েছে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অনেকে বলেছেন, যারা ওমানকে জানে না বা চিনে না, এ লেখা তাদের জন্য নয়। তিন বোনের একজন হচ্ছেন মায়া। নানা দুঃখ-কষ্টের জীবন তার। আরেক বোন আসমা, যার যৌতুকের বিরুদ্ধে লড়াই করার কঠিন অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্যজন হচ্ছেন খাওলা। তিনি একজনের জন্য অপেক্ষা করছেন, যিনি কানাডা প্রবাসী। অর্থাৎ তিনি নারীকেন্দ্রিক লেখা লিখতে বেশি পছন্দ করেন। তার উপন্যাসে শিশুদের কথাও রয়েছে। অর্থাৎ সবাইকে নিয়েই লেখেন তিনি। মনের সুস্থতা নিয়ে লেখেন। লেখেন আধুনিক বিশ্ব সম্বন্ধেও।
অনেকে বলেছেন, সাহিত্যসহ নানা বিষয়ে অগাধ (ওশেন-ডিপ) জ্ঞান রয়েছে বুকার ইন্টারন্যাশনাল জয়ী জোখা আলহারথির। বিশেষ করে মধ্যম শ্রেণীর মানুষদের জীবন নিয়ে লেখেন তিনি। কারণ, এমন শ্রেণীর মানুষের সংখ্যাই বেশি পৃথিবীতে। তিনি মনে করেন, এই শ্রেণীর মানুষের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হলে অন্যান্য শ্রেণীর ওপরও পড়বে এর ইতিবাচক প্রভাব। যেহেতু দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা আরবি। আর বেশির ভাগের ধর্ম ইসলাম। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তার লেখনী মানে ওমানের শুধু নয়, আরব বিশ্বেরও নয়, গোটা পৃথিবীর জন্যই একটি রোডম্যাপ। তার সিলেসটিয়াল বডিস-এর সিলেসটিয়াল শব্দের মানেই হচ্ছে স্বর্গীয়, অতি সুন্দর ইত্যাদি। অনেক পাঠক বলেছেন, উপন্যাসের এই নাম যথার্থই হয়েছে।
আলহারথি তিনটি গল্প লিখেছেন। একটি হচ্ছে মাকুয়াতি মিন সিরাত লুবনা আনা আল-রাহিল। ২০০১ সালে সারিকা অ্যাওয়ার্ডের দ্বিতীয় পুরস্কার এটি। সাবি আলা-আল-সাথ ২০০৭ সালের। এ গল্পের বাংলা হচ্ছে ছাদের ওপর একটি বালক। আর ২০০৮ সালে প্রকাশ পায় ফাই মাদিহ আল হাব নামক গল্প। এর অর্থ সুন্দর ভালোবাসা।
তার প্রকাশিত তিনটি নবেলের মধ্যে একটি হচ্ছে মানামাত। এর অর্থ স্বপ্ন। যা প্রকাশ পায় ২০০৪ সালে। ২০১০ সালে প্রকাশ পায় সায়্যিদাত আল-কুমার। এর অর্থ চাঁদের মানবী। এটা লিখে তিনি পেয়ে যান দ্য বেস্ট ওমানি নবেল পুরস্কার। ২০১৬ সালে তিনি পান সুলতান কাবুছ অ্যাওয়ার্ড। নবেল নিরানজাহ-এর সংস্কৃতি, কলা, সাহিত্য ইত্যাদি বিচারে আলহারথি এ পুরস্কার জিতে নেন।
২০১০ সালে তিনি শিশুদের মনের বিকাশে লেখেন উস লিইল আসাফির নামক গ্রন্থ। তা লিখে পান সম্মানজনক পুরস্কার বেস্ট ওমানি চিলড্রেন্স বুক অ্যাওয়ার্ড। আহমেদ বিন আবদুল্লাহ এবং যে দু’টি লেখা রচনা লেখেন, এর একটি ২০০৩ সালে স্টাডিজ ইন ওমান অ্যান্ড গালফ লিটারেচার। আরেকটি হলো ২০১০ সালে চেজিং দ্য সান লিটারেসি ম্যাথোডোলজি ইন দ্য বুক অব খারিদাত আল-কছর। এগুলো সম্পাদনা করেন জোখা আলহারথি। তা করে অনেক খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
স্কটল্যান্ডের এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাসিক্যাল অ্যারাবিক লিটারেচারের ওপর পিএইচডি অর্জন করেন ২০১০ সালে। আর মাসকাটের সুলতান কাবোস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস সোশ্যাল সায়েন্স কলেজের সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।
জোখা আলহারথির জন্ম ওমানে ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে। অর্থাৎ তিনি একজন সফল ওমানি নারী। লেখক এবং শিক্ষক বলেই মানুষ তাকে বেশি চেনে। এ পুরস্কার শুধু তার জন্যই বড় অর্জন নয়, এ অর্জন বইটির প্রকাশনা সংস্থা স্টান্ডস্টোন পাবলিশার্সেরও। এতে তাদের ব্যবসাও বেড়ে গেছে। উপন্যাসটির বিচারকদের জনৈক ইতিহাসবিদ বেটানি হিউজ মন্তব্য করেন, ইতিহাসের চিত্রিত বা শিল্পিত কোমল দিক যেমন এতে রয়েছে, তেমনি খুঁজে পাওয়া যায় বা তুলে ধরেছেন এ সংক্রান্ত নানা অসঙ্গতি বা ভারসাম্যহীনতা। সাহিত্য জগৎ ছাড়াও অন্যান্য স্থানে তার নাম জোখা আলহারথি, জোখা আল-হারথি এই দুইভাবেই লক্ষ করা যায়। জোখা আলহারথি বলেন, এ পুরস্কার কৃষ্টি-সভ্যতা ও সংস্কৃতির মাইলফলক এ জন্য যে, এতে অনেকের অবদানও রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল