২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী

ভ্রমণ সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন

-

প্রফেসর চেমন আরার সুযোগ হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ানোর এবং এরই ফলে তিনি লিখেছেন নিটোল এক ভ্রমণকাহিনী। বইটির নাম ‘নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী’।
যে কিশোরী অবাক বিস্ময়ে অপলক তাকিয়ে থাকত দো-হাজারী লাইনে অবিরত ছুটে যাওয়া ট্রেনের দিকে, শ্যামল বন-বনানী ঘেরা গাঁ তার চোখের সামনে, মাথার ওপর স্বপ্নিল আকাশের চাঁদোয়া, কখনো বা রোদ-বৃষ্টির কান্না-হাসি, বেলা শেষে নির্জন পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে এলেবেলে ভাবনার মাঝে ডুবে থাকত সে। জোছনাস্নাত রাতে অদেখা রূপকথার রাজ্যে চলে যেতে যেতে বালিকার মৌন-চৈতন্য সচকিত হয়ে উঠত রেলের ধাতব আওয়াজ ও তার শৈল্পিক গতিময়তায়।
সেই ছোট বয়স থেকেই তিনি সুদূরের পিয়াসী, জীবনের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় পড়াশোনার পাঠ শেষ করে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন যথানিয়মে। পেশাগত জীবনে অধ্যাপনা করেন ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সরকারি বদরুন্নেছা কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ শেষে চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর একপর্যায়ে সুযোগ আসে দেশের সীমানার বাইরে পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়ানোর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি দেশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে তার। ছেলেমেয়েরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকার কারণে পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন। তাই তো তিনি নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী হতে পেরেছেন।
লেখিকা চেমন আরা যেমন বিদেশের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন তেমনি বাড়ির কাছে বান্দরবান, কক্সবাজার, রামু, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, সিলেট ঘুরে অপার্থিব ও সৌন্দর্য চোখভরে দেখেছেন।
ভ্রমণকাহিনী লেখার একটি টেকনিক আছে। সেই টেকনিকটি তিনি খুব ভালোভাবেই আয়ত্ত করেছেন। তাই লেখার আকর্ষণে পড়–য়া মাত্রই ভাববেন তারাও অচেনা পথযাত্রায় শরিক হয়েছেন।
তিনি নানান দেশ ঘুরে উপলব্ধি করেছেনÑ বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বিদেশে ভালো আছে।
বাংলাদেশী ছেলেদের সাথে যখন দেখা হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছে, ‘খালাম্মা দেশ ছেড়ে প্রবাসী হয়েছি তাই বলে দেশকে ভুলিনি।’ তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় একজন যুবক বলেছিলÑ শৈশবে স্বপ্নভূমির সেই যে আজিমপুর যেখানে আপনারা আমরা থাকতাম সে কথাও ভুলিনি। যত দূরেই মানুষ বসবাস করুক না কেন শিখরকে কি ভোলা যায়? নিজ সংস্কৃতির প্রতি হৃদয়ের টান তা পরবাসে গিয়ে আরো গাঢ় হয়েছে তাদের।
বহু বিচিত্র ঘটনার বর্ণিল অঙ্কনে সম্পূর্ণ ভ্রমণকাহিনীর বইটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মেয়ের বাড়ি সটিনাস থেকে নরওয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাথে যাচ্ছে মেয়ের বান্ধবী পিয়ার মা ও পিয়া। ওদের জড়তাবিহীন চলাফেরা এবং নিঃশঙ্ক পথচলায় যেমন অবাক হয়েছেন। তেমনি ৮ ঘণ্টার সুদীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে গিয়ে বিমুগ্ধ হয়েছেন উক-পাইন আর বিচ গাছের গহিন বন দেখে।
প্রায় ৬০টি ছবি সংযোজিত রয়েছে এ বইটিতে। রামুতে স্বামীর সাথে ছবি, রয়েছে নীলগিরির সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন লেখিকা তার এক ছাত্রের সাথে। কুমিল্লার ময়নামতিতে রয়েছেন সহকর্মীদের সাথে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আছেন স্বামী অধ্যাপক শাহেদ আলীর সাথে। সিডনি, ক্যানবেরা, তাসমানিয়া, নায়াগ্রা জলপ্রপাতসহ মনোমুগ্ধকর অনেক ছবিতে বইটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী পাঠকদের হৃদয় জয় করবে, এই শুভ কামনা।
বইয়ের নাম : নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী
লেখক : চেমন আরা
প্রকাশক : চমন প্রকাশন
মূল্য : ২৫০ টাকা


আরো সংবাদ



premium cement