২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রতিটি দিনই নারীর জন্য সংগ্রামের : হাজেরা পারভীন সোমা, স্বত্ব¡াধিকারী ও ট্রেইনার, ফিগারিনা সিøমিং সেন্টার

-

পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় নারী মানেই ‘ঘরের ভেতর থাকা।’ সেই নির্মম আরোপিত শর্ত যখন ভার বহন করতে কোনো নারী নারাজ, তখনই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন নামক কালো ছায়া। নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট থেকে উঠে দাঁড়ানো ও জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া নারীরা সবাই বীর যোদ্ধা। তেমনি এক বীর যোদ্ধার নাম হাজেরা পারভীন সোমা। স্বত্ব¡াধিকারী ও ট্রেইনার ‘ফিগারিনা সিøমিং সেন্টার।’ ২০১০ সাল থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। অদম্য সাহস, মনোবল ও একান্ত প্রচেষ্টা থাকলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, সোমা তার উজ্জ্বল উদাহরণ। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারীই খুলেছেন জিম বা ফিটনেস সেন্টার। অর্থাৎ সোমা এক দিকে উদ্যোক্তা, তেমনি আবার উদ্যোক্তা তৈরিতেও সমান অবদান রেখে আসছেন। বর্তমানে সোমার প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যাও অর্ধশতের বেশি।
তিনি ইয়োগাও কার্ডিও বিষয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন। ‘ফিগারিনা সিøমিং সেন্টার’ কক্সবাজারে অবস্থিত।
বয়স ১৫ পেরোতে না পেরোতে কিশোরী সোমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরের বছর সন্তানের জন্ম হয়। এসএসসির পর নতুন সংসার আর সন্তান পালনের জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর চার বছর পর আবার আরেক সন্তানের জন্ম হয়। এ সময় তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া সংসারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ, অশান্তি লেগেই থাকত। মনস্থির করলেন, এবার পড়াশোনাটা আবার শুরু করতে হবে। এরপর একরকম জোর করে কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসি ও পরে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। অতিরিক্ত ওজন ও মানসিক চাপের কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তারের পরামর্শে ওজন কমাতে পরিমিত আহার ও ব্যায়াম করা শুরু করেন। ছয় মাসের মধ্যেই তার ওজন স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এ সময় ইয়োগা ও কার্ডিও বিষয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিজ এলাকায় খুলেন একটি ফিটনেস টেনিং সেন্টার। উদ্দেশ্য ছিলÑ এতে মহিলাদেরও ভালো হবে, আবার আর্থিকভাবেও নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলা যাবে। অর্থ উপার্জনের কোনো উৎস না থাকায় মা ও ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা সাহায্য নিয়ে ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ফিগারিনা সিøমিং সেন্টার খোলেন নিজ বাড়িতেই। কক্সবাজারের মতো পরিবেশে এ ধরনের সেন্টার নতুন হওয়ার প্রতিবেশীরাও বিভিন্ন মন্তব্য ও বিরোধিতা করতে থাকে। নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকের দিনে সফল নারী উদ্যোক্তা হাজেরা পারভীন সোমা। নারী পরিচয়ই যার গর্ব। তার কাছে নারী-পুরুষ কোনো আলাদা সত্তা নয়, সবাই মানুষ। তার পরও একজন নারীর জীবনে প্রতিবন্ধকতার সীমা নেই। সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজের অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত। এ অবস্থা থেকে নারীকে নিজ চেষ্টায় সব বাধা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি দিনই নারীর জন্য সংগ্রামের। তার পরও নারী দিবসে সব নারীকেই এগিয়ে যাওয়ার নতুন শপথ নিতে হবে।

সাক্ষাৎকার : নীপা আহমেদ


আরো সংবাদ



premium cement