২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নারী লেখকদের এগিয়ে যাওয়া

-

নব্বই দশকের মাঝামাঝি গল্প দিয়েই লেখালেখি শুরু। কয়েকটি দৈনিকে বেশ কয়েকটি গল্প প্রকাশিতও হয়েছে। সংসার জীবনে প্রবেশ করে লেখালেখি থেকে দূরে সরে যাই। তবে বই পড়া থেকে দূরে যাইনি। সময় পেলেই পড়তাম। দীর্ঘ বিরতির পর গত দেড় বছরে অনেক কবিতা লিখেছি। সরল ভাষাভঙ্গি ও বিষয়-বৈচিত্র্যই আমার কবিতাগুলো কবিতার পাঠক-মহলে সমাদৃত হয়েছে। উপমা চিত্রকল্প ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করেছি। কবিতা লিখতে মনোযোগী হয়েছি অনেকটা মান অভিমান থেকে। লেখালেখি কেউ শিখায় না, এটা ভেতর থেকেই আসে, আনন্দে হোক আর বেদনায়। লেখার মাঝে নিজের আনন্দ বেদনাকে তুলে ধরে নিজেকে হালকা করা যায়। নারীদের সব কাজেই প্রতিবন্ধকতা থাকে, সংসার সামলিয়ে লেখালেখি করা কষ্টকর। পাঠকদের উৎসাহে কবিতা এখন নেশা হয়ে গেছে। পড়তে বসলেই অন্য জগতে ডুুবে যাই। আমি মনে করি, লেখক হওয়া বা না হওয়া; কিন্তু পড়ার কোনো বিকল্প নেই। ‘বিশ্বস্ত ভোর’ আমার প্রথম বই, কবিতাগ্রন্থে ৮০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আহমেদ নিলয়। এটি প্রকাশ করেছে ছায়াবীথি প্রকাশনা সংস্থা।
মালেকা ফেরদৌস লেখক
গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখলেও কবিতা লিখতেই ভালোবাসি। বাবা ছিলেন সাংবাদিক, তাই ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার একটা পরিবেশ আমাদের। প্রথম লেখা প্রকাশ পায় চতুর্থ শ্রেণীতে থাকতে। আমার লেখালেখির প্রেরণায় বাবা ও স্বামী দু’জনকেই পেয়েছি। সমাজে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি, তোয়াক্কা করিনি। বাবা বলেছেন, ‘নিজেকে ঠিক রেখে লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।’ সমাজ নারীকে নারীই ভাবে মানুষ ভাবে না। লেখার জগতে আমাদের একটা অবস্থান হতে পারে, এটা প্রকাশকেরা মনেই করেন না। এমনকি বড় লেখকরাও। মানুষ হিসেবেই সমাজে দাঁড়াতে চাই আমরা। বই প্রকাশে স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছি।
জাহানারা বুলা লেখক
নারীদের সাহায্য করার প্রয়োজন নেই, শুধু বাদসাধাটুকু তুলে নিলেই নারী লেখকেরা অনেক দূর যেতে পারবেন বলে মনে করি। ঘরে সবরকম সহযোগিতার পাশাপাশি বন্ধনহীনতাও আছে। তবে, ভয় সামাজিক কাঠামোগত। মহিলারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ নন। এই নিরাপত্তাহীনতার জন্য তাদের বিচরণ ক্ষেত্রটি ছোট। বিভিন্ন সাহিত্য আলোচনা, সভা সমিতি ইত্যাদিতে যেতে ইতঃস্তত বোধ করি। কোনো চায়ের আড্ডা বা সাহিত্য আড্ডা ভাগ্যে জোটে না। কিন্তু সাহিত্যচর্চার জন্য আলোচনা, মতবিনিময়, সবার কাছ থেকে পড়ার জন্য বিভিন্ন সোর্স খুব জানা দরকার। কিন্তু জানার জন্য আমাদের দেশ, আমাদের শহর নারীদের অনুকূলে নেই। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্মের নারী লেখকদের জন্য একটা সামাজিক প্রেক্ষাপট খুব প্রয়োজন, যেখানে তারা কোনোভাবেই এবিউজড হবে না। এবার বইমেলায় অনেক সম্ভাবনা আমি ছড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এদের মধ্য থেকে চৌকস অনেক লেখক উঠে আসবে। এদের যদি লিঙ্গ বিভাজনের তালিকাভুক্ত না করে শুধু লেখক বলে পরিগণিত করা যায় আর প্রকাশকদের দায়িত্ববোধের আওতাধীন করা হয় তাহলে নারী লেখকদের নিয়েও আমাদের বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। এবারের বলাকা প্রকাশ থেকে আমার দুইটি গ্রন্থ এসেছে। ‘কবিতার মতো ঠোঁট ছুঁয়ে থাকো তো’ (কাব্যগ্রন্থ)। প্রচ্ছদ ওয়ালিউল ইসলাম। ‘ফিরে চলো নিরুপমা’ (উপন্যাস)। প্রচ্ছদ তওসিফ যুহায়ের।
আলেয়া বেগম আলো সম্পাদক, প্রকাশক
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কচিপাতা শিশুতোষ ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সালে পত্রিকাটির রেজিস্ট্রেশন পাই। নিয়মিত প্রতি মাসে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি পাতা প্রকাশনীর প্রকাশনার কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। দশ বছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি, থেমে যাইনি। লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করে গেছি। পারিবারিকভাবে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছি, এখনো পারি। তবে ঘর-সংসার সামলিয়ে সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজ করতে সমস্যা হয় অনেক। মেয়েদের পদে পদে বিপদ, নিজেকে সেভ করে বিপদকে টপকানো শিখেছি বলেই ভালো আছি। প্রকাশনা বা পত্রিকা বের করার জন্য অর্থের অনেক প্রয়োজন, অনেক সময় অর্থের টানাপড়েনে হিমশিম খেয়েছি। বিনা শর্তে বিনা জামানতে ঋণ পেলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আমি চাই নারীরা এই পেশায় আরো আসুক। তাহলে নারীদের জন্যই ভালো হবে। প্রতি বছর অমর একুশে বইমেলায় কচিপাতা ভাষা দিবস সংখ্যার পাশাপাশি বইমেলা বুলেটিন ও বের করে। এবার বইমেলায় সাতটি নতুন বই প্রকাশ করেছি। পাশাপাশি আগে প্রকাশ করা বইগুলোও আছে। কচিপাতা ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ করে নতুনদের লেখায় আগ্রহ করে তুলতে চেষ্টা করি।
নাসরিন সিমি কবি ও কথাসাহিত্যিক
স্কুলে পড়া অবস্থা থেকেই লিখছি গল্প, কবিতা উপন্যাস। সমাজের অনেকের ভাবনা নারীরা কবি মানেই এরা ঘরসংসার করে না। ছেলেরা, লেখালেখি করলে পায় অনুপ্রেরণা আর মেয়েদের দেখতে হয় নীতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। নারীদের মানসিক শক্তি বেশি বলেই ওরা চেষ্টা করে শত বাধা সরেও এগিয়ে যেতে। অমর একুশে বইমেলা ২০১৯-এ প্রতিভা প্রকাশ থেকে এসেছে আমার সপ্তম বই ‘মৃত নদীতে বিষণœ রাজহাঁস’। পাঠকের আগ্রহ ও ভালোবাসা আমার লেখক জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
সাহানা সিরাজী কবি, কথাসাহিত্যিক
নব্বই দশক থেকে লেখালেখি করছি, পরিবার থেকে বাধা পাইনি আবার সহযোগিতাও পাইনি। আমি স্বাধীন মানুষ, নিজের মতো করে সাহিত্যচর্চা করতে পারি। নারীদের পকেটে পয়সা থাকলে সমস্যা নেই। সাহিত্য জগতে নারীরাÑ এটা কেউ কেউ দেখতে পারে কেউ পারে না, আমি এসব কেয়ার করি না। পাঠকভক্তদের অনুপ্রেরণা আমায় উৎসাহ দেয় এগিয়ে যাওয়ার। পেশায় একজন শিক্ষকও আমি। আমি মনে করি, নারী লেখকদের সংখ্যা আরো বাড়তে হবে, নারীরা নিজেদের চোখে জগৎ দেখতে হবে। মেলায় রিদম প্রকাশনা থেকে এসেছে কবিতার বই ‘বাতাসের মুখে মুখে গোপন কথা’, গল্পের বই, ‘পীত বর্ণের মহুয়া’।
রহিমা আক্তার মৌ সাহিত্যিক, কলামিস্ট
নারীরা লেখালেখি করবে, পত্রিকার অফিস যাবে, সাহিত্য আড্ডায় যাবে এটা ঠিক নয়। ওরা ঘরে থাকবে, রান্না করবে, সংসার সামলাবে, সন্তান জন্ম দেবে, সন্তান মানুষ করবে এটাই ওদের ভাবনা। রাত ১০টায় পরিবারের প্রয়োজনে বাইরে যাবে, হাটবাজার করবে কিন্তু শাহবাগ, বাংলা একাডেমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নয়। এমন বাধা উপেক্ষা করে অনেক নারীকে সাহিত্যচর্চা করতে হয়। পারিবারিকভাবে সহযোগিতা তো পাইনি, প্রতিটি পদক্ষেপে পেয়েছি শত শত বাধা। জীবনের সব ঠিক থাকলেও কখনো এক পার্সেন্ট অনেক জায়গা দখল করে থাকে। তেমনি একজন মানুষের সাপোর্ট না পাওয়ার ফলে আমার সাহিত্যের আনন্দগুলো অন্যরা উপভোগ করতে পারে না, এমনকি নিজেও। চেয়েছি পরিবারকে সবার আগে প্রাধান্য দিয়ে সাহিত্যচর্চা করতে, তাই করে যাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement